কালমেঘ, এটি একটি একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Andrographis paniculate. দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এর উপস্থিতি চোখে পড়ে৷ বীরুৎ-জাতীয় এই গাছের গড় উচ্চতা প্রায় ১ মিটার হয়ে থাকে৷ এই গাছের ভেষজ গুন প্রচুর, তাই এর চাহিদাও অনেক৷ দক্ষিণ এশিয়া ব্যাপকভাবে এর চাষ হয়ে থাকে৷
আমাদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে কালমেঘের (Benefits of Green Chiretta) অবদান অনস্বীকার্য৷ এর পাতা যেমন দেহের ক্ষত পরিষ্কারে সাহায্য করে, তেমনই এর রস রক্ত-আমাশয় নিরাময়ে, কৃমি দূর করতে খুবই কার্যকরী বলে মনে করা হয়৷ এর চাহিদার কারণেই এই গাছ চাষ করতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন৷ বীজ থেকে চারার মাধ্যমে এর চাষ হয়৷
মে-জুন মাসে মূলত নার্সারি প্রস্তুত করা হয়৷ বছরের শেষের দিকে এতে ফুল আসার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ এই গাছের ফুলগুলি গোলাপি রঙের ছোট আকৃতির হয়৷ মার্চ-ফেব্রুয়ারিতে বীজ সংগ্রহ করা হয়৷ এই গাছ কেটে শুকিয়ে নিয়েও বিক্রি করা হয়৷ গুনে সমৃদ্ধ এই গাছ জুন-জুলাই মাসে চাষ করা হয়৷
দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, অসম, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশে এই কালমেঘের উপস্থিতি বেশি চোখে পড়ে৷ জন্ডিস, কৃমি, ম্যালেরিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, যকৃতের সমস্যা এমনই বিবিধ রোগের সঙ্গে লড়তে কালমেঘ বা চিরতা ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ৷ সর্দি-কাশিতে যেমন এর ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল তেমনই চর্মরোগেও (Skin Disease) এই গাছ ব্যবহার করা হয়৷
যে কোনও ধরণের জলবায়ুতেই এই গাছের চাষ সম্ভব যেমন, তেমনই বিভিন্ন মাটিতেও এটি বেড়ে উঠতে পারে৷ তবে ভালো বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা আবহাওয়া এবং বেলে-দোআঁশ মাটিতে এর চাষ ভালো হয়৷ আবার ছায়াযুক্ত স্থানে, জঙ্গলেও এটি নিজের মতো বিস্তৃতি লাভ করতে সক্ষম৷ ভালো ফসলের জন্য এই কালমেঘ চাষের (Green Chiretta Cultivation) আগে মাটি ভালো করে কর্ষণ করে নিতে হবে৷ মনে রাখতে হবে দুটি গাছের মধ্যে পার্থক্য রাখতে হবে, অর্থাৎ প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে বীজ বপন করতে হবে৷
মাটি, বালি, জৈব সার মিশিয়ে বীজের জন্য মাটি প্রস্তুত করে নিতে হয় প্রথমে৷ পলিথিনের মধ্যে এই প্রাথমিক কাজটি করে নেন অনেকে৷ বীজ থেকে চারা বেরোলে তা চাষের জমিতে রোপন করা হয়৷ কালমেঘের ভালো ফসলের জন্য জমিতে গোবর সার ব্যবহার করেন অনেকে৷ মূলত বর্ষাকালে এটি চাষ করা হয় তাই সেচ কার্যের তেমন প্রয়োজনীয়তা পড়ে না৷ তবে প্রথম প্রথম তিন-চার দিন পর পর প্রয়োজনাসুরে জল দিতে হয়৷ এরপর আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী সপ্তাহে সপ্তাহে জলসেচ করা যেতে পারে৷
অন্যান্য সবজি চাষের মতোই এই কালমেঘের পরিচর্যা নেওয়া উচিত৷ আশেপাশের আগাছা সরিয়ে দিতে হবে৷ যেন জল না জমে যায় জমিতে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে৷ এর চারা রোপনের প্রায় ৯০-১০০ দিন পর ফসল সংগ্রহের সময় হয়ে যায়৷ এর ঔষধি গুন প্রচুর পরিমাণে থাকায় বাজারে এর যথেষ্ট চাহিদাও রয়েছে৷ তবে সঠিক উপায়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিয়ে করতে পারলে এর চাষ থেকে লাভ হতে পারে৷
আরও পড়ুন- খারিফ মরসুমে কচু চাষে (Taro Farming) হতে পারে প্রচুর লাভ
সয়বিনের (Profitable cultivation of soybean) লাভজনক চাষ
বাড়িতে টবেই চাষ করে ফেলুন ঔষধি গুনে সমৃদ্ধ (Medicinal Plants) এই গাছগুলি