লেটুসের বৈজ্ঞানিক নাম Lactuca sativa। লেটুস ও অন্যান্য শাকসবজি চাষের জন্য জমি বা বাগান ছাড়াও উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। শাকসবজি উৎপাদনের জন্য যদি জমি না থাকে তাহলে বাসা-বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বড় বড় টবে, মাটির চাঁড়িতে, ড্রামে কিংবা একমুখ খোলা কাঠের বাক্সে সার ও মাটি ভরে খুব সহজেই শাকসবজি চাষ করা যায়। আসুন জেনে নেই চাষের পদ্ধতি।
লেটুসের জাত (Variety) -
লেটুসের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এসবের মধ্যে বিগ বোস্টন, হোয়াইট বোস্টন, প্যারিস হোয়াইট, গ্র্যান্ড ব্যাপিড, নিউইয়র্ক-৫১৫, ইম্পিরিয়াল-৫৪, সিম্পসন, কিং ক্রাউন, কুইন ক্রাউন, ডার্ক, গ্রিন, গ্রেটলেক উল্লেখযোগ্য।
টবের মাটি (Soil) -
গাছের বৃদ্ধি এবং সবজি জাতীয় ফলনের জন্য মাটি অবশ্যই উর্বর, হালকা এবং ঝুরঝুরে হতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে টবের মাটিতে যেন ফেটে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টবের মাটি ঝুরঝুরা রাখতে হলে সমপরিমাণে দো-আঁশ মাটি ও জৈব সার একসাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এঁটেল মাটিতে জৈব সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণভাবে প্রতি টবের মাটিতে চা চামচের চার চামচ টিএসপি সার ও ৫/৬ দিন আগে ভেজানো ১১৬ গ্রাম পরিমাণ সরিষার খৈল মেশানো যেতে পারে।
সময়:
ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বীজ থেকে চারা তৈরি করে টবে লাগাতে হবে।
বীজ বা চারা:
গামলা টবে বীজ বুনলে ৩-৪ দিনে চারা গজায়। চারার ৪/৫টি পাতা গজালে টবে লাগাতে হয়। লেটুসের জন্য খুব বড় টবের প্রয়োজন হয় না।
চারা রোপণ:
পড়ন্ত বিকেলে চারা লাগাতে হয়। চারা রোপণের সময় চারার গোড়ার মাটি খুবই হালকাভাবে চেপে দিতে হয় যাতে চারার নরম শিকড় চাপে ছিঁড়ে না যায়। চারা লাগানোর পর ৩-৪ দিন ঢাকনি দিয়ে চারাকে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে হবে এবং সকাল-বিকাল চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে চারার গোড়ার মাটি হালকাভাবে আলগা করে দিতে হবে। বিভিন্ন নার্সারি থেকে ১০ টাকার পলিব্যাগে একটি চারা অথবা ৩০০ টাকায় এক হাজার বীজ কিনতে পারবেন।
রোগবালাই:
গোড়া পচা, আগা পোড়া অর্থাৎ পাতার অগ্রভাগ পুড়ে যাওয়া দেখা দিলে গাছ তুলে ফেলতে হবে। জাব পোকা লেটুসের খুব ক্ষতি করে। অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। কীটনাশক ছিঁটানোর ৭ দিনের মধ্যে লেটুস খাওয়া যাবে না। লেটুসের পাতায় কখনো কখনো ‘ছাতা’ রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগ দেখা দিলে গাছের পাতা নুইয়ে পড়ে এবং পাতার অগ্রভাগ পুড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত গাছ অবশ্যই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তবে বীজ ও মাটি শোধন করে এ রোগ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
পরিচর্যা:
টবে চারা লাগানোর পরপরই অনেক সময় দেখা যায় চড়াই শালিক, বাবুই ইত্যাদি ছোট ছোট পাখি চারার কচি পাতা এবং ডগা খেয়ে ফেলে, অনেক ক্ষেত্রে চারা উপড়ে ফেলে। সেক্ষেত্রে দু’চারটা ছিদ্রবিশিষ্ট পাতলা পলিথিন কাগজ বা লোহার নেট দিয়ে আলতোভাবে টবেটি ঢেকে রাখতে হবে। তাছাড়া শুকনো পাতা বা রোগাক্রান্ত অংশ ছেঁটে ফেলতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
চারা লাগনোর এক মাসের মধ্যেই লেটুস পাতা খাওয়ার উপযোগী হয়।
আরও পড়ুন - সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে কাঁকরোল চাষের পদ্ধতি (Spiny Gourd Cultivation)