আমলকি (Indian Gooseberry) –এর গাছ পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম-গঞ্জের প্রায় সব এলাকাতেই দেখা যায়। আমলকি ভেষজ গুণে অনন্য একটি ফল। এর ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে দারুণ সাহায্য করে। নানা গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধেও বিভিন্ন ভাবে আমলকি ব্যবহার করা হয়।
কৃষকের বাগানে বা জমিতে অন্তত একটি আমলকি গাছ থাকলেও অন্যান্য গাছের রোগ-পোকা কম হয়।
আমলকি ভেষজ গুণ (Medicinal Properties) –
ভিটামিন সি-তে ভরপুর আমলকিতে আছে অসংখ্য উপকারিতা।
চলুন জেনে নিই এর গুনাগুণ সম্পর্কে -
১) প্রতিদিন আমলকির রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয় এবং দাঁত শক্ত থাকে। আমলকির টক ভাব তেতো মুখে রুচি ও স্বাদ বাড়ায়।
২) শরীরের ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৩) আমলকির রস দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছড়াও চোখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চোখের প্রদাহ। চোখ চুলকানি বা জল পড়ার সমস্যা থেকে রেহাই দেয়। আমলকি চোখ ভাল রাখার জন্য উপকারী। এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িত ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৪) কোলেস্টেরল লেভেলেও কম রাখাতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
৫) পিত্ত সংক্রান্ত যেকোনো রোগে সামান্য মধু মিশিয়ে আমলকি খেলে উপকার হয়।
৬) আমলকীর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ। গবেষণা অনুযায়ী, আমলকি ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়।
বীজ সংগ্রহ ও চারা উত্তোলন -
রাজ্যের প্রায় সব নার্সারীতেই আমলকীর চারা পাওয়া যায়। এই ফলের বীজ বাজার থেকে কিনেও চাষ করতে পারেন আবার কিনতে না চাইলে ফলের মাংসল অংশ অপসারণ করে শক্ত আবরণসহ বীজ রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর তা ফেটে বীজ বের হয়ে এলে তা সংরক্ষণ করা যায়। আমলকির বীজ নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী মাসে সংগ্রহ করতে হবে। প্রতি কেজি আমলকীতে ৪০০০-৪৫০০০ টি পাওয়া যাবে।
চারা উত্তোলন -
বীজ এবং কলম দুই পদ্ধতিতে এ গাছের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। বীজ সংগ্রহের সাথে সাথে বীজ মাটিতে বা সীড বেডে বপন করতে হয়। বপনের পর অঙ্কুরোদগম হার মাত্র ৪০ ভাগ। এক্ষেত্রে বীজ ৮০ ডিগ্রী সে. তাপে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে বপন করলে অঙ্কুরোদগমের হার হয় শতকরা ৮০ ভাগ পর্যন্ত।
আরও পড়ুন - Saffron Farming: জেনে নিন "লাল সোনা বা জাফরান" চাষের দুর্দান্ত পদ্ধতি
এ গাছ কেটে ফেললে আবার কাটা স্থান থেকে কুশি জন্মায় এবং ক্রমে তা পূর্ণাঙ্গ গাছে পরিণত হয়। আমলকী গাছ লাগানোর ৪/৫বছরের মধ্যে তা ফলবান হয়। তবে পরিপূর্ণভাবে ফলবান হতে ৭/৮ বছর লাগে। সময়সাপেক্ষ হলেও মোটামুটি ৭ বছর পর গাছের ফল বিক্রি করে বছরে দেড় থেকে দু লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।