আগত খারিফ মরসুম, এই সময় প্রাক বর্ষাকালীন লাভজনক সবজি হিসেবে ভেন্ডি/ঢ্যাঁড়স চাষ করা যায়। বর্তমানে টাটকা সবজি রপ্তানির ৩০ ভাগ এই সবজি থেকে আসে। মূলত কচি অবস্থায় রান্নার জন্য এটি একটি অন্যতম সবজি। এটি প্রাক বর্ষাকালীন সবজি হিসেবেও চাষ করা যায়। জুন মাসটি ভেন্ডি/ঢ্যাঁড়স বপনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। আমাদের দেশে এর চাষ মূলত পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও উড়িষ্যা রাজ্যে হয়। একদিকে এর ফলগুলি খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়, অন্যদিকে কাগজের শিল্পে এর শাঁসের চাহিদা বেশি। জেনে নিন, কোন পদ্ধতিতে এই উদ্ভিদ চাষ করলে কৃষক বেশী লাভবান হবেন।
প্রাক বর্ষাকালীন সবজি ভেন্ডি/ঢ্যাঁড়স -
ভেন্ডির সাহেব রোগ সহনশীল উন্নত জাতগুলি – আর্কা অনামিকা, আর্কা অভয়, কাশি বিভূতি, কাশি মোহিনী, পুসা এ-৪।
হাইব্রিড জাতগুলি – সম্রাট, রোহিনি ১০০১, তানিয়া, জীবন, গুঞ্জন ইত্যাদি।
বীজের হার – ১.৫ কেজি প্রতি বিঘা।
উপযুক্ত জলবায়ু –
গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া এর চাষের জন্য উপযুক্ত। এই উদ্ভিদের ফসলগুলি ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করতে পারে, এর থেকে উচ্চতর তাপমাত্রা ফসলের জন্য ক্ষতিকারক।
প্রয়োজনীয় মৃত্তিকা -
যে কোনও ধরণের মাটিতে ভেন্ডি চাষ করা যায় তবে, হালকা দোআঁশ মাটি এর জন্য উপযুক্ত। এর চাষের জন্য জমিতে জৈব উপাদান থাকা উপকারী। জমির পিএইচ যদি ৬ থেকে ৬.৮ এর কাছাকাছি হয় তবে সেই ক্ষেত ভেন্ডির প্রভূত ফলন দিতে সক্ষম।
জমি প্রস্তুতি -
এটি চাষের আগে জমিতে ৩ থেকে ৪ বার লাঙ্গল দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিন। জমিতে পাটা রোপণ করা যায়, যাতে আর্দ্রতা বজায় থাকে।
বপন -
সারি দিয়ে এর বপন বেশি ফলন দেয়। এক সারি থেকে অপর সারির পারস্পরিক দূরত্ব ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত এবং একটি উদ্ভিদ থেকে অপর উদ্ভিদের পারস্পরিক দূরত্ব প্রায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার হওয়া উচিত।
সেচ -
গ্রীষ্মে, সপ্তাহে একবার সেচ দিতে হবে। আর্দ্রতা না থাকলে ফসলের বপনের আগেই সেচ দেওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখবেন যেন জমিতে জলাবদ্ধতা না হয়। বর্ষাকালে প্রয়োজন অনুযায়ী জলসেচ দিতে হবে। গাছে ফুল ও ফল এলে জলসেচের বিশেষ প্রয়োজন, অন্যথায় ফলন হ্রাস পাবে।
চাষ পদ্ধতি –
বিঘা প্রতি ২৫-৩০ কুইন্টাল কম্পোস্ট সার দিয়ে ৩-৪ বার চাষ দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। এর পর শেষ চাষে ২৫ কেজি ইউরিয়া, ৭৫ কেজি সি. সু ফসফেট ও ১০ কেজি মিউরেট অফ পটাশ দিতে হবে। বীজ বোনার আগের রাত্রে বীজকে ০.২ % কার্বেন্ডাজিম দিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখলে ঢলে পড়া রোগ থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়। বীজ বোনার আগে জমিতে হালকা সেচ দেওয়া ভালো। ২ ফুট / ১.৫ ফুট ব্যবধানে বীজ লাগানো উচিত।
আগাছা ও ফলন -
বীজ বোনার ৩ সপ্তাহের মধ্যে আগাছা তুলে প্রয়োজনে গাছ পাতলা করে দিয়ে চাপান সার দিতে হবে। সাধারণত বীজ তোলার ৪৫-৬০ দিন পর ফসল তোলার উপযুক্ত হয়। এটি উন্নত এবং হাইব্রিড জাতে চাষ করলে, গড় ফলন প্রায় ৭০ থেকে ১০০ হেক্টর প্রতি আশা করা যায়। বাজারদর দেখে বিক্রি করলে চাষীর যথেষ্ট লাভ হয়।
Related link - আগত মরসুমে তিলের (Sesame Cultivation) চাষ চাষ করে কৃষক সহজেই উপার্জন করতে পারেন অতিরিক্ত অর্থ