আগত মরসুমে তিলের (Sesame Cultivation) চাষ চাষ করে কৃষক সহজেই উপার্জন করতে পারেন অতিরিক্ত অর্থ

পশ্চিমবঙ্গে যে সকল তৈল বীজের চাষ হয়, তার মধ্যে সরিষা, তিল, বাদাম, সুর্যমূখী অন্যতম। তিল ফসলের চাহিদা ক্রমবর্ধমান, স্বল্প ব্যয়ে এবং কম সময়ে এর চাষ কৃষককে প্রভূত লাভ দিতে সক্ষম। এছাড়া অন্যান্য তৈল বীজের মধ্যে একমাত্র তিল সারা বছর সব ধরণের মাটিতে অতি সহজে চাষ করা যায়।

KJ Staff
KJ Staff

আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় স্নেহজাতীয় খাদ্যের যোগান তৈল বীজ থেকে আসে। ভোজ্য তেলগুলির মধ্যে সরষের তেলের তুলনায় তিলের তেলে অসম্পৃক্ত অম্লের (unsaturated fatty acid) আধিক্য থাকায় এই তেল আমাদের পক্ষে উপকারী। পশ্চিমবঙ্গে যে সকল তৈল বীজের চাষ হয়, তার মধ্যে সরিষা, তিল, বাদাম, সুর্যমূখী অন্যতম। তিল ফসলের চাহিদা ক্রমবর্ধমান, স্বল্প ব্যয়ে এবং কম সময়ে এর চাষ কৃষককে প্রভূত লাভ দিতে সক্ষম। এছাড়া অন্যান্য তৈল বীজের মধ্যে একমাত্র তিল সারা বছর সব ধরণের মাটিতে অতি সহজে চাষ করা যায়। তিল তেলের ব্যবহার স্বাস্হ্য সম্মত ও নিরাপদ। আগত মরসুমে তিলের চাষ করে কৃষক সহজেই অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করতে পারেন। কীভাবে চাষ করতে পারবেন? রইল বিস্তারিত তথ্য -

তিল চাষ পদ্ধতি –

তিলের কিছু উন্নত জাত: TH 6, TS 5, GJT 5, TC 25, TKG 22, AKT 64 ।

জমি তৈরি : সাধারণত পলি দোঁয়াশ বা বেলে মাটিতে সাদা তিল চাষ হয়। ৩-৪ বার ভূমি কর্ষণ করে মাটি আগাছা মুক্ত ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর সুষম সার ও রাসায়নিক সার দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। আলু চাষের পর তিল বুনলে কোন রাসায়নিক সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।

বীজ শোধন - বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম ৫০% বা ৩ গ্রাম ম্যানকোজেব ৭৫% জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে।

বীজ বপন- উপযুক্ত সময় হল ফাল্গুন মাস। চৈত্রের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বোনা শেষ করলে ভাল হয়। কারণ দেরিতে বীজ বুনলে ফলন কমে যায়। শোধন করা ২ কেজি তিল বীজ প্রতি একরে বুনতে হবে। সারি দিয়ে বীজ বুনলে এক সারি থেকে অপর সারির দূরত্ব রাখতে হবে ১০-১২ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে অপর বীজের মধ্যে দূরত্ব রাখতে হবে ৪ ইঞ্চি।

সেচ কার্য – তিল ফসলে সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে ফুল আসার সময় অর্থাৎ বপনের ২৫-৩০ দিন পর জমির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। জমিতে রস না থাকলে সেচ দেয়া প্রয়োজন। ৫০-৬০ দিন পর শুঁটি ধরার সময় আরও একটি সেচ দিলে ফলন ভালো হয়।

সার: মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করা না থাকলে প্রতি একরে ৪৪ কেজি নিম কোটেড ইউরিয়া, ১০ কেজি ফসফেট, ৬৫ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট, ১০ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। তৈল বীজের ফলনে গন্ধক বা সালফারের ভূমিকা বেশি তাই মিশ্র সার প্রয়োগ করা ভালো কারণ মিশ্র সারে (সিঙ্গল সুপার ফসফেট) প্রতি ১০০ কেজিতে ১২ কেজি গন্ধক থাকে।

রোগ পোকা দমন (Disease & Pest management):

  • তিল গাছে পোকার আক্রমণ কম হলেও ল্যাদা ও বিছা পোকা পাতা খেয়ে ফলনের ক্ষতি করতে পারে। আক্রমণের প্রথম দিকে জৈব কীটনাশক যেমন বায়োনিম, নিমারিন ২ মিলি/লি. জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী, রাসায়নিক ওষুধ জলে গুলে সন্ধার সময় প্রতি একরে স্প্রে করতে হবে।
  • পাটের জমিতে তিল বুনলে গোড়া পচা রোগের সম্ভবনা থাকে তাই বীজ শোধন জরুরী।
  • পাতা কোকড়ানো রোগ (ভাইরাস ঘটিত) দেখা দিলে রোগাক্রান্ত গাছ তুলে ফেলে দিতে হবে এবং যে কোন একটি অন্তর্বাহী কীটনাশক স্প্রে করলে ভালো হয়।

আগাছা ব্যবস্থাপনা - অধিক ফলন পেতে হলে তিলের জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে। বপনের ৩ সপ্তাহ পর প্রথম ও ৬ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় নিড়ানি দিতে হবে। রোগাক্রান্ত বা অন্য কোন গাছ জমিতে থাকলে তা তুলে ফেলতে হবে।

ফসল সংগ্রহ -  উদ্ভিদের পাতা, কান্ড ও ফল হলুদাভ বর্ণ ধারণ করলে তিল ফসল জমি থেকে সংগ্রহ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে খুব বেশী পরিপক্ক হয়ে উদ্ভিদের ফল থেকে বীজ ঝরে না পড়ে যায়। ফসল কাটার পর রোদে ভালভাবে শুকিয়ে লাঠির সাহায্যে পিটিয়ে মাড়াই করতে হবে। তারপর বীজগুলি ভালভাবে পরিষ্কার করে ৪-৫ দিন রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, বীজের আর্দ্রতা যেন ৯-১০% থাকে।

বীজ সংরক্ষণ (Preserving Seed) – তিলের বীজ সংরক্ষণের জন্য কৃষক শুকনো পরিষ্কার বীজ ৭০০ গেজ পুরু ও শক্ত পলিথিন ব্যাগে ভরে মুখ বেঁধে অপেক্ষাকৃত শীতল ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করতে পারেন। ব্যাভিস্টিন (প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম হারে) দিয়ে শোধন করে সংরক্ষণ করলে বীজের মান ভাল থাকে এবং অংকুরোদগম ক্ষমতা সহজে নষ্ট হয় না।

Related link - https://bengali.krishijagran.com/horticulture/snake-gourd-farming-it-s-pest-management/

https://bengali.krishijagran.com/horticulture/how-to-be-benefited-by-cultivating-jute/

https://bengali.krishijagran.com/agripedia/how-farmer-can-preserving-his-own-vegetable-seeds/

Published On: 30 May 2020, 11:56 AM English Summary: In the coming season Farmers can easily earn extra money by cultivating Sesame

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters