এই 20টি ব্যবস্থা পোল্ট্রি খামারকে বার্ড ফ্লু থেকে নিরাপদ রাখবে! ভার্মি কম্পোস্ট ইউনিটের জন্য ৫০% পর্যন্ত ভর্তুকি পাওয়া যাবে, শীঘ্রই আবেদন করুন এই হাইব্রিড জাতের টমেটো 900 কুইন্টাল প্রতি হেক্টর ফলন দেবে দুধের সঠিক সময় বেছে নিলে উৎপাদন বাড়বে, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
Updated on: 20 April, 2021 12:32 PM IST
Tea garden (Image Credit - Google)

সমগ্র উত্তরবঙ্গের প্রায় ২০ হাজার পরিবার ক্ষুদ্র চা চাষ আবাদের সঙ্গে যুক্ত। এই ক্ষুদ্র চা চাষীদের জমির পরিমান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১ একর এর নীচে এবং ২ একর এর মধ্যে। যার মধ্যে ৪০ শতাংশের মত পরিবার সংগঠিত হয়ে টি বোর্ডের সাহায্য নিয়ে নিজের চা নিজেরাই প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করতে সক্ষম।

Climate Change বা আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং চা চাষে এর প্রভাব নিয়ে প্রচুর আলোচনা রয়েছে। বিশ্ব জুড়ে আবহাওয়ার পরিবর্তনে উষ্ণতা বৃদ্ধি, ক্ষরার প্রকোপ, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, জলবদ্ধতা নতুন নতুন কীটের আগমন ক্রমশ চা চাষকে প্রভাবিত করেছে এবং ফলনে ব্যাপক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে উৎপাদন খরচা বৃদ্ধি করছে। Working Group এই ধারনা প্রকাশ করেছে যে, যে ভাবে আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে আসামের বহু জায়গাতেই চা চাষ অনুপযুক্ত (Vulnerable Region) এলাকা হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে । এই সংকটের হাত থেকে বাঁচবার জন্য ক্ষরা প্রতিরোধকারী চা গাছ লাগানো , রাসায়নিক ব্যবহার ক্রমান্বয়ে হ্রাস, জৈব কৃষির প্রচলন, গোবর বা তেল কেকের ব্যবহার, ছায়া গাছের ব্যবহার, চা বর্জ্যর ব্যবহার, সবুজ সার, কেঁচো সার, Integrated Pest Management, জলসেচ, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং ফসলের বৈচিত্রকরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও জৈব চা-এর সংশাপত্র (Certification) –র দ্বারা গুণগত মান এবং বিশুদ্ধতা উৎপাদনকারী এবং আমদানীকৃত দেশগুলোর মধ্যে আরও সমন্বয় সাধনের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জৈব চা উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে যুক্তভাবে গবেষণা, উন্নয়ন (Research and Development) এবং তথ্য আদান প্রদানের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।

যে সকল কৃষকরা চা চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাদের জন্য এই মরসুমে চা চাষে রোগ প্রতিকারের ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ।

চা আবাদে রোগ প্রতিরোধ -

কান্ডের রোগ :

(ক) ডাই ব্যাক (Die back)

রোগের কারণ ছত্রাক : নেকট্রিয়া প্রজাতি (Nectria sp)।

লক্ষণ : গাছের শাখাগুলো আগার দিক থেকে শুকিয়ে যায় (Die back)। দূর্বল ও অসুস্থ গাছে এই রোগের প্রকোপ বেশি হয়। এই ছত্রাক আক্রমণ করলে কান্ডের মধ্যে ফাটল বা গহ্বর তৈরী হয়।

বিস্তার : গাছে কোন ক্ষত সৃষ্টি হলে সেখান দিয়ে এই ছত্রাক প্রবেশ করে। বাতাস বাহিত স্পোর রোগের বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা নেয়।

প্রতিকার : যতটা ডাই ব্যক তার চেয়ে ১৫ ইঞ্চি বেশি কেটে ফেলা উচিত। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কাটতে হবে। গাছ কাটার পর ০.৫% কপার অক্সিক্লোরাইড ৪-৫ গ্রাম দিয়ে পেইন্ট করা উচিত। চা গাছ ছাঁটার আগে ছায়া গাছের নেট্রিয়া আক্রান্ত ডাল কেটে ফেলতে হবে।

(খ) শাখার ক্যাঙ্কার (Branch canker)

রোগের কারণ ছত্রাক : পোরিয়া হাইপোব্রুনিয়া (Poria hypobrunea)

লক্ষণ : এই ছত্রাক গাছের ক্ষতস্থান দিয়ে  উপরের দিকে আক্রমণ করে। পরে তলার দিকে নামতে থাকে। শিকড়েও আক্রমণ করে। আক্রান্ত শাখা গুলোকে ক্রমশ মেরে ফেলে। শিকড়ে আক্রমণ করলে পুরো গাছের মৃত্যু হয়। কান্ডের কাঠ হলুদ ও নরম হয়ে পচে যায় এবং কাঠের মধ্যে সরু সরু বদামী দাগ দেখা যায়। গাছের গোড়ার ছালের উপর শক্ত চটা তৈরী হয়।

বিস্তার : বাতাস বাহিত স্পোর ক্ষতস্থান দিয়ে  প্রবেশ করে গাছকে আক্রমণ করে। পরে এই সমস্ত গাছে উই পোকার আক্রমণ দেখা যায়।

প্রতিকার : আক্রান্ত কান্ডের মৃত কাঠ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নষ্ট করে ফেলতে হবে। চারা অবস্থায় যাতে গাছ রোদে না জ্বলে যায় তাই ছায়া গাছের সাহায্যে ছায়া দিতে হবে। গাছের কাটা ডাল বিটুমেন পেইন্ট করে দিতে হবে যাতে রোগ জীবানুর আক্রমণ কম হয়। উইপোকার জন্য ক্লোরোপাইরিফস ২ মিলি/ লি জলে ড্রেন্চিং করে দিন।

(গ) সুতো ধ্বসা রোগ (Thread blight)

রোগের কারণ ছত্রাক : পরজীবি এবং উপপরজীবী দু রকম ছত্রাকের দ্বারা এই রোগ হয়। পরজীবী ছত্রাককে এখনও জানা না গেলেও উপপরজীবী থাকে ম্যারাসমিয়াস পালচার (Marasmius pulcher)

লক্ষণ : কান্ডের উপর গোছা গোছা সাদা সুতোর মতো ছত্রাক সুতো দেখা যায়। এগুলো গাছের তলার দিক থেকে ক্রমশ গাছের উপরের দিকে এমনকি পাতার তলার পিঠেও ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে ঝুলতে থাকে।

বিস্তার : সাদা ছত্রাক সুতোর সাহায্যে রোগ ছড়ায়।

প্রতিকার : পরিচ্ছন্ন পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে। ছায়া গাছ বা চা গাছের ঘনত্ব বেড়ে গেলে গাছের ডাল কেটে বা গাছ কেটে হালকা করে দিতে হবে।

এপ্রিল-মে মাসে কপার ছত্রাক নাশক (০.৫%) ২ সপ্তাহের ব্যবধানে স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন - চাষের জমিতে পেঁয়াজ চাষের মৌপালনের মাধ্যমে কৃষক বন্ধুরা করুন দ্বিগুণ আয়

(ঘ) গোলাপী রোগ (Pink disease) - 

রোগের কারণ ছত্রাক : পেলিকুলারিয়া সালমোনিকোলার ( Pellicularia salmonicolor)

পশ্চিমবঙ্গে ও আসামে এই রোগ বিশেষ দেখা যায় না ।

লক্ষণ : চকচকে সাদা ছত্রাক সুতারস্তর কান্ডের গায়ে দেখা যায়। গাছের যে দিকে ছায়া পড়ে, সেইদিকে রোগের আক্রমন বেশী হয়।

প্রতিকার : আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কপার ছত্রাক নাশক (ব্লাইটক্স বা ফাইটোলান) স্প্রে করা এবং ছায়াগাছ গুলি আক্রান্ত হলে পুড়িয়ে ফেলা জরুরী। চা গাছ ছোট থাকতেই ছায়া গাছগুলিতে কপার ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।

আরও পড়ুন - জানুন তুঁতের বৈশিষ্ট্য ও তার চাষের পদ্ধতি

English Summary: Insect control methods in tea cultivation
Published on: 20 April 2021, 12:25 IST