উচ্ছে বা করলা (Bitter Gourd) এক ধরণের লতানো উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশে। এটি পরে চীনে ১৪০০ শতাব্দীতে নিয়ে আসা হয়।ভারতের সকল এলাকায় এই সবজি চাষ করা হয়ে থাকে।তেতো স্বাদযুক্ত করলার সবজি হিসাবে জনপ্রিয়তা খুবই।
কারণ করলা স্বাদে তেতো হলেও করলার অনেক ঔষধি গুণ আছে। নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাস করলে নানান রকমের রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। করলা খাওয়ার ফলে রক্তের সমস্যা, খাবারের অরুচি, চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রন করে। এছাড়া করলা বিভিন্ন ধরণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
করলার স্বাস্থ্যগুণ (Health Benefits) -
করলার মধ্যে অনেক ধরণের খাদ্যগুন বিদ্যমান। এতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান আছে যা শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় আছে জলীয় অংশ ৯২.২ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, শর্করা ৪.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৪৫০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি ১- ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২- ০.০২ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম ও খাদ্যশক্তি ২৮ ক্যালরি।
করলার জাত -
প্রথমত, উচ্ছে ও করলা আলাদা ২টি জাতি। উচ্ছে দেখতে বেশ ছোট সাইজের এবং অসম্ভব তেতো আর করলা বড় সাইজের এবং অপেক্ষাকৃত কম তেতো হয়। উচ্ছে ২ ধরণের। একটি গোলাকার; আরেকটি দীর্ঘ ও ডিম্বাকৃতি। করলাও ২ ধরণের। একটি সাধারণ করলা(দৈর্ঘ্যে ৪/৫ ইঞ্চি); অপরটি গজ করলা(দৈর্ঘ্যে ৬/৭ ইঞ্চি)।
আসুন জেনে নেই করলা চাষের জন্য কি কি করণীয়-
উপযুক্ত সময় -
জানুয়ারী থেকে মার্চ এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর।
করলার চাষ পদ্ধতি -
করলার জন্য যদিও বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ বিশেষ উপযোগী। এছাড়াও এঁটেল দোআঁশ মাটিতেও ভালো জন্মে। করলার জন্য প্রথমে মাটির সাথে গোবর সার, খৈল, সুপার ফসফেট ও ছাই মিশাতে হয়।পরে পানি দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৭-১০ দিন পরে উঁচু জায়গায় ৩-৪ টি বীজ বপন করতে হয়।করলার বীজের বীজত্বক পুরু হওয়ার কারণে বীজ ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে বপণ করতে হয়। একদিন পর পানি সেচন করলে ছয় সাত দিনে বীজ জার্মিনেট হয়। চারা গজানোর মাস খানেক পরে ইউরিয়া ও পটাস সার মিশাতে হবে। চারা বড় হওয়া শুরু করলে খুঁটি বা বাউনি দেয়া প্রয়োজন যাতে ভালোভাবে অঙ্গজ বৃদ্ধি হয়। করলা লতানো উদ্ভিদ তাই মাচা তৈরী করে দিতে হবে।
যত্ন -
ক) গ্রীষ্মপ্রধান ও আর্দ্র ভাবাপন্ন জলবায়ু করলার জন্য উপযোগী।
খ) গাছ একটু বড় হলে মাচা করে দিতে হবে।
গ) গাছে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
ঘ) সঠিক পরিমানে সার দিতে হবে।
ঙ) করলার বীজ থেকে চারা বেরনোর পর উক্ত চারায় মাঝে মধ্যে পানি দিতে হবে।
চ) করলা ধরা শুরু করলে সরিষার খৈল পচা পানি পাতলা করে গাছে ১৫-২০ দিন অন্তর অন্তর নিয়মিত দিতে হবে।
ছ) কিছুদিন পর পর নিড়ানি দিয়ে খুড়িয়ে দিতে হবে যাতে মাটি ঝুরঝুরে হয়।
প্রয়োজনীয় সার -
বেলে দো-আঁশ মাটিতে করলা ভাল হয়। করলা চাষ করার জন্য প্রথমে ২ ভাগ দোআঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ২০-৩০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ২০-৩০ গ্রাম পটাশ সার, একত্রে মিশিয়ে ড্রাম ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন। অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে।
কীটনাশক -
করলার সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ফল ছিদ্রকারী পোকা। এই পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে মাঝে মাঝে করলা গাছে ভাল কীটনাশক স্প্রে করতে হবে । এছাড়াও ছাদ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে । তাহলে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
এছাড়াও পোকার মধ্যে কয়েক প্রকারের কাঁটালে পোকা, ফলের মাছি,লাল কুমড়া পোকা প্রধান। পোকা দমনের জন্য সেভিন কিংবা নেক্সিয়ন এবং ডায়াজিনন এর স্প্রে করা হয়।
করলা সংগ্রহ -
মার্চ থেকে মে অথবা জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায়ই করলা সংগ্রহ করা হয়। একটি গাছ থেকে বেশ কয়েকটা সবজি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - সয়া পনির থেকে উপার্জন করুন লক্ষ লক্ষ টাকা, কীভাবে জানুন বিস্তারিত (Tofu Business)