শাপলা ফুল বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় ফুল | তবে, বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গেও এই ফুলের আধিক্য দেখা যায় | কিন্তু, আপনি অনায়াসে এই ফুল আপনার বাড়ির ছাদে চাষ করতে পারেন | তার সাথে মিশ্র পদ্ধতিতে (Mixed Farming) মাছ চাষ করে কৃষকরা ভালো লাভবান হতে পারেন | এই নিবন্ধে বিস্তারিত পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো;
শাপলা চাষে মাটি তৈরি (Soil preparation):
বাড়িতে শাপলা চাষ (Sapla Cultivation)করার জন্য টবের জন্য উপযুক্ত কাদা মাটি দিতে হবে। মাটিতে গোবর, খোল এবং আরও অন্যান্য জৈব সার দিয়ে দিতে হবে। এরপর পাত্রটি পরিপূর্ণ জল দিয়ে ভরে রাখতে হবে। উল্লেখ্য যে, টবে ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবর সার দিতে হবে। কোন প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যাবে না তাতে গাছ মারা যেতে পারে।
শাপলা চাষে টব/পাত্রের আকৃতি বাছাই:
শাপলা চাষ করার জন্য একটু গভীর দেখে চৌবাচ্চা ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও ইচ্ছা করলে হাফ ড্রাম ব্যবহার করা যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে পাত্রটি যেন মোটামুটি গভীর হয়। অথবা বড় সাইজের গামলা বা সিমেন্টের পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।
শাপলার জাত:
বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৮০ ধরণের শাপলা আছে এবং এর বিভিন্ন ধরণের নামও রয়েছে। যেমন শালুক, শাপলা, শুঁধি ইত্যাদি। বাড়ির ছাদে নীল শাপলা, বেগুনী শাপলা, লাল শাপলা ইত্যাদি চাষ করা যায়।
চাষের সময়:
শাপলা মূলত জলজ উদ্ভিদ। এদেরকে বছরের যেকোন সময়ে লাগানো যায়। এদেরকে গ্রীষ্মের শুরুতে লাগাতে পারলে মধ্য বর্ষায় ফুল ফুটবে।
আরও পড়ুন -Teasel Gourd Farming: কাঁকরোলের আধুনিক চাষ পদ্ধতি জানতে নিবন্ধটি পড়ুন
বীজ বপন(Seed):
শাপলা দুইভাবে লাগানো যেতে পারে। প্রথমত, শাপলার কন্দ দ্বারা। কন্দ দ্বারা লাগালে দ্রুত ফুল আসবে। দ্বিতীয়ত, শাপলার বীজ দ্বারা। শাপলার বীজ লাগানোর ক্ষেত্রে শাপলার গোড়ার দিকের শালূক সংগ্রহ করতে হবে। এরপর উক্ত শালূক উপযুক্ত টবের মাটিতে পুতে দিতে হবে এবং জলের পরিমাণ সঠিক মাপে দিতে হবে। এক্ষেত্রে ফুল আসতে কন্দের চেয়ে বেশি সময় লাগে অর্থাৎ ১ বছর পর ফুল আসে।
পুকুর তৈরী:
মাটির বড় আকারের ১ টি টব নিতে হবে। (প্রায় ৬ লিটার জল ধরে এমন), তাতে বেলে দোআঁশ মাটি এবং ২ কেজি শুকনো গোবর সার মিশিয়ে মাটির টবটি ভর্তি করতে হবে। এর পর পাত্রটি জল মিশিয়ে কাদা করে নিতে হবে। ১ হাতের ৫ আঙ্গুল এক জায়গায় জড়ো করে কাদার মধ্যে ডুবিয়ে নিতে হবে। আঙ্গুলগুলো ধীরে ধীরে চারদিকে প্রসারিত করতে হবে। একটা সুন্দর গর্ত হয়ে যাবে। গর্তের মধ্যে শাপলার চারাটিকে সাবধানে বসিয়ে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে,কোন ভাবে যেন শাপলার শেকড়ে চাপ কিংবা আঘাত না লাগে। শাপলা চাষ করার জন্য খেয়াল রাখতে হবে,পাত্রটি যেন মোটামুটি গভীর হয়।
শাপলা চাষ করার জন্য ইচ্ছা করলে হাফ ড্রাম, বড় মাটির চারি বা সবচেয়ে বড় গামলা বা সবচেয়ে বড় বালতি (৩৫ লিটার সাইজের) নিয়ে এর মধ্যে আস্তে আস্তে জল ঢেলে উপরের দিকে ১ ইঞ্চি খালি রেখে ভর্তি করে ফেলতে হবে। এবার মাটির টবটি আস্তে করে শাপলার চাড়ি বা গামলা বা বালতিতে ডুবিয়ে দিতে হবে। এভাবেই হয়ে যাবে শাপলা লাগানো। এরপর শাপলার চাড়ি বা গামলা বা বালতি বা কংক্রিট এর তৈরি ছোট পুকুরে একুরিয়ামে চাষকৃত বিভিন্ন মাছ যেমন- গোল্ডফিশ,কই ফিশ, ক্যাট ফিশ, বিভিন্ন জাতের পুঁটি ইত্যাদি ছেড়ে দিতে হবে।
পরিচর্যা:
১) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদ পায় এমন জায়গায় গামলাটি রেখে দিতে হবে। মনে রাখবেন দুপুর ২টার পরে যেন শাপলায় কোন অবস্থায়ই রোদ না পায়। কড়া রোদে জল গরম হয়ে গেলে শাপলার পাতা হলুদ হতে থাকে।
২) নিয়মিত মনে করে মাছের খাবার দিতে হবে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার দেওয়া যাবে না, তাতে জল দুর্গন্ধ হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
৩) শাপলা চারা লাগানোর ১মাস পর জল বদল করা ভালো। জল বদলানোর সময় পাত্রের গায়ে জন্মানো পিচ্ছিল শেওলা পরিষ্কার করে দিন ভালো করে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Balsam Flower Farming: জুলাই মাসেই চারা লাগান, জেনে নিন দোপাটির চাষ পদ্ধতি