বাড়ির ছাদে জাফরান চাষ করুন, পুরো প্রক্রিয়া এবং যত্নের টিপস জেনে নিন! কেন খিরি জাতের ভেড়া পশুপালকদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে? বৈশিষ্ট্য জানুন গ্রীষ্মে ট্র্যাক্টর ইঞ্জিনকে অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষা করার ৫ টি কার্যকর উপায়!
Updated on: 24 August, 2021 2:05 PM IST
Sesame farming (image credit- Google)

তিল খুবই জনপ্রিয় এক তৈলবীজ | খাবারের তেল হিসাবে সর্ষের তেলের থেকেও তিলের তেল কিন্তু বেশ স্বাস্থ্য উপকারী | পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্ত তৈল বীজের চাষ হয় তাদের মধ্যে সরিষা, তিল , বাদাম, সুর্যমূখী অন্যতম। এদের মধ্যে তিল সারা বছর সব ধরনের মাটিতে অতি সহজে চাষ করা যায়। তিল থেকে তৈরি নাড়ু, খাজা ও নানান মুখরোচক খাবারও যথেষ্ট জনপ্রিয়। পাশাপাশি প্রসাধনী শিল্পে তিল তেল ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিলের কদর বাড়ছে দিন দিন।

তাই তিল চাষে (Sesame farming) কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে সমানতালে । এতে একদিকে যেমন বাড়তি আয় হয় তেমনই ফসলের আচ্ছাদনে মাটির রস ও জৈব কার্বন সংরক্ষিত থাকায় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে।

জাত:

তিলের কিছু উন্নত বীজগুলির মধ্যে অন্যতম হলো তিলোত্তমা—৭০-৭৫ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪০%, কালচে বাদামি। রমা— ৮৫-৯০ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪৫%, বাদামি রঙের বীজ। কৃষ্ণা— ৭৫-৮৫ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪২%, কালচে বীজ |

মাটি(Soil):

সাধারণত, এ রাজ্যের প্রায় সব ধরণের মাটিতেই তিল চাষ করা যায় | তবে, ভারী মাটি বাদ দিলে, জল নিকাশের সুবিধাযুক্ত জমিতে তিল চাষ ভালো হয় | বেলে-দোঁয়াশ ও পলি-দোঁয়াশ মাটি তিল চাষের  জন্য উত্তম |

আরও পড়ুন - White Gourd Farming: জেনে নিন বাড়ির ছাদে চালকুমড়ার সহজ চাষ পদ্ধতি

জমি তৈরি :

সাধারণত পলি দোঁয়াশ বা বেলে মাটিতে সাদা তিল চাষ হয়। ৩-৪ বার চাষ দিয়ে মাটি আগাছা মুক্ত ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর সুসম সার ও রাসায়নিক সার দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। আলু চাষের পর তিল বুনলে কোন রাসায়নিক সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।

চাষের সময়:

বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো ফাল্গুন মাস | চৈত্রের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বোনা শেষ করলে ভাল হয়। কারণ দেরিতে বীজ বুনলে ফলন কমে যায়।

বীজের পরিমান(Seeds):

ছিটিয়ে বুনলে একর প্রতি ৩ কেজি আর লাইনে বুনলে ২.৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয় । বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম কারবেন্ডাজিম ৫০% বা ৩ গ্রাম ম্যানকোজেব ৭৫% বা ৩ গ্রাম থাইরাম ৭৫% জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে।

রোপণ পদ্ধতি(Planting method):

সারিতে বুনলে দুই সারির মধ্যে দূরত্ব থাকবে ১০-১২ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজ ৪ ইঞ্চি। ছিটিয়ে বুনলে মই দিয়ে বীজকে ভাল ভাবে মাটি চাপা দিতে হবে যাতে তিল বীজের অঙ্কুরোদগম ভাল হয়। দেখতে হবে, নিড়ান দেওয়ার পর প্রতি বর্গমিটারে গড়ে যেন ৪০-৪৫টি গাছ থাকে।

সার প্রয়োগ(Fertilizer):

মাটির উর্বরতা স্বাভাবিক থাকলে তিল চাষে এইভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে; মূল সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে  এন.পি.কে ১০:২৬:২৬ – ৪৬ কেজি বা (শেষ চাষের আগে) এস.এস.পি ৭৫ কেজি + এম.ও.পি ২০ কেজি + ইউরিয়া ২৬ কেজি একর প্রতি। চাপান সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে একর প্রতি ২৬ কেজি ইউরিয়া ফুলের কুঁড়ি আসার আগে (বোনার ২৮-৩০ দিনে)।

অসেচ সেবিত জমিতে ইউরিয়া চাপান না দিলেও চলে। একর প্রতি ২.৫ কেজি বোরন (১৪.৬%) অনুখাদ্য প্রয়োগে বাড়তি সুফল পাওয়া যায়। ৩০ দিনের মাথায় ১% হারে ১৮:১৮:১৮ স্প্রে করলে করলে ফলনের বৃদ্ধি ঘটে |

সেচ:

তিল সাধারণত কম জলে চাষের ফসল। একটি সেচের সংস্থান থাকলে ৩০ দিনের মাথায় এবং ২টি সেচের সুযোগ থাকলে দ্বিতীয়টি ৫০-৫৫ দিনের মাথায় দানা বাঁধার সময় দিতে হবে।

রোগ ও প্রতিকার(Disease Management system):

গোড়া পচা, ডাঁটা পচা ও সাদা গুঁড়ো রোগ আক্রান্ত ফসলে কারবেন্ডাজিম ৫০% ১ গ্রাম বা ম্যানকোজেব ৭৫% ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফাইলোডি আক্রান্ত গাছের উপরভাগ চ্যাপ্টা হয়ে যায়, ফুলগুলো পাতার মতো হয়। ফুল-ফল হয় না। এটা শ্যামা পোকা বাহিত মাইকোপ্লাজমা ঘটিত রোগ। এই রোগ ও পাতা মোড়া রোগ দমনে প্রথমে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে দিতে হবে। পরে জমিতে বাহক পোকা দমনের জন্য ডাইমিথোরেট ২ মিলি/লিটার জলে স্প্রে করতে হবে। বিছা পোকা, লেদা ও ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে ৩৩% গাছ আক্রান্ত হলে তবেই অ্যাসিফেট ৭৫% (০.৭৫ গ্রাম) বা প্রফেনোফস ৫০%(১.৫ মিলি) প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ফসল সংগ্রহ:

গাছের মাঝামাঝি অংশের শুঁটি ভেঙে দানা পুষ্ট হয়েছে দেখলে ফসল কেটে কয়েকদিন ঝাড়াই মাড়াই করে ও শুকিয়ে রাখতে হবে। ভাল পরিচর্যা করলে একর প্রতি ৪.৫–৫.৫ কুইন্টাল ফলন মিলতে পারে |

আরও পড়ুন - Breeding process of Koi Fish: জেনে নিন কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি

English Summary: Sesame Farming: How to cultivate sesame? Learn the complete method
Published on: 24 August 2021, 01:59 IST