চিচিঙ্গা এক অন্যতম জনপ্রিয় সবজি | এটি মূলত গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও, এর দেখা বর্ষাকালেও মেলে | এর অনেক ঔষধী গুণ আছে। চিচিঙ্গার ১০০ ভাগ ভক্ষণযোগ্য অংশে ৯৫ ভাগ জল, ৩.২-৩.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৪-০.৭ গ্রাম আমিষ, ৩৫-৪০ মিঃগ্রাঃ ক্যালসিয়াম, ০.৫-০.৭ মিঃগ্রাঃ লৌহ এবং ৫-৮ মিঃগ্রাঃ ভিটামিন সি আছে। এর চাষ যেমন বাণিজ্যিকভাবে হয় তেমনি বাড়ির ছাদেও অনেকে চাষ করে থাকেন | যেভাবেই এর চাষ করা হয় না কেন, এই চাষে কৃষকবন্ধুদের আর্থিক উন্নতি হয়ে থাকে |
জলবায়ু ও মাটি(Climate and soil):
উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় চিচিঙ্গা ভাল জন্মায়। সব রকম মাটিতে চিচিঙ্গার চাষ করা যায় তবে জৈব সার সমৃদ্ধ দো-আশঁ ও বেলে দো-আশঁ মাটিতে ভালো জন্মায় |
চারা তৈরী:
পলিব্যাগে অর্ধেক গোবর ও অর্ধেক মাটি মিশিয়ে ভরে প্রতিটি পলিব্যাগে ১ টি করে চিচিঙ্গার বীজ পুঁতে চারা তৈরি করে নেওয়া যায়। বীজের খোসা শক্ত হলে বীজ বোনার আগে ২৪ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে নিলে বীজ তাড়াতাড়ি গজায়। চারা ১৫ থেকে ২০ দিন বয়সের হলে তা জমিতে লাগানোর উপযুক্ত হয়।
জমি তৈরি ও চারা রোপন(Plantation):
যেসব জমি উঁচু ও বৃষ্টির জল দাঁড়ায় না এমন জমি প্রথমে আগাছা মুক্ত করতে হবে। এরপর ভালভাবে ৪ বার অথবা ৫ বার মই দিয়ে নিতে হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই মাসের মধ্যে যে কোন সময় চিচিঙ্গার বীজ বোনা যেতে পারে। জমিতে চিচিঙ্গা রোপনের আগে বেড তৈরি করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন -Lavender Cultivation: জেনে নিন সহজ উপায়ে ল্যাভেন্ডার চাষ পদ্ধতি
২ বেডের মাঝখানে ৩০ সেন্টিমিটার চওড়া ও ১৫ সেন্টিমিটার গভীর নালা থাকতে হবে। বসতবাড়িতে লাগানোর জন্য বেড তৈরি করার দরকার নেই। মাদা তৈরি করে সেখানে সরাসরি বীজ বুনে দেওয়া যায়। মাদায় সরাসরি বীজ বুনে ও পলিব্যাগে বীজ বুনে চারা তৈরি করে এসব চারা লাগিয়ে চিচিঙ্গা চাষ করা যায়। প্রতি মাদায় ২ টি করে বীজ মাটির অনাধিক ২ সেন্টিমিটার গভীরে পুঁতে দিতে হবে। তবে খেয়াল রাখবেন বীজ বোনার আগে অবশ্যই বীজ শোধন করে নিতে হবে। এতে গজানো চারার রোগবালাই ও মৃত্যুর হার অনেকাংশে কম হয় |
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
১ শতক জমিতে শেষ চাষের সময় ৮০ কেজি গোবর, ৭০০ গ্রাম টিএসপি, ৬০০ গ্রাম এমওপি, ৪০০ গ্রাম জিপসাম, ৫০ গ্রাম দস্তাসার, ৪০ গ্রাম বোরাক্স এবং ৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। জমি তৈরির সময় চিচিঙ্গার জমিতে অর্ধেক গোবর সার পুরো জমিতে ছিটিয়ে মিশিয়ে চাষ দিতে হবে। বাকি অর্ধেক সার বীজ বোনা বা চারা লাগানোর ১০ দিন আগে মাদার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
সেচ:
প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিতে হবে। মাটি শুকিয়ে গেলে ফুল ঝরে যায় ফল বড় হয় না। তাই মাটি শুকানোর আগেই সেচ দিতে হবে। প্রত্যেকবার সার প্রয়োগের পর জমিতে জল সেচ দিতে হবে। এরপর মাটিতে জো এলে চটা ভেঙে দিতে হবে। আবার বৃষ্টির পর গাছের গোড়ায় যাতে জল জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কারণ চিচিঙ্গা জলাবদ্ধতা একেবারেই সহ্য করতে পারে না।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ(Weed management):
শস্যের আগাছা নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগাছা সময়মতো পরিষ্কার না করা হলে তা ফলনে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আগাছানাশক প্রয়োগের পরিবর্তে মাসে ২ বার হস্তচালিত যন্ত্রের মাধ্যমে নিড়ালে তা ভালো হয়।
ফসল সংগ্রহ:
চিচিঙ্গা সম্পূর্ণভাবে বেড়ে উঠতে সময় লাগে ১৩০-১৫০ দিন। উন্নত বীজ এবং সারের উপর নির্ভর করে এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১৫-১৮ টন। বাজার দর অনুযায়ী কৃষক তা বাজরে বিক্রি করলে ভালো লাভ পাবেন |
আরও পড়ুন -Cowpea Farming: বর্ষায় ছাদে বরবটি চাষে করুন অধিক উপার্জন