বর্তমানে আমাদের রাজ্যে প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষাবাদ হয় এবং উৎপাদন হয় প্রায় ৮০ হাজার টন আমাদের দেশে চাষকৃত ফুলকপি অধিকাংশই সংকর জাতের এবং বিদেশ থেকে আমদানিকৃত। ঠাণ্ডা ও আর্দ্রতা জলবায়ুতে ফুলকপির ভাল ফলন পাওয়া যায়। সেচ ও জল নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন ধরনের সব মাটিতে ফুলকপির চাষ ভাল হয়।
এ দেশে এখন ফুলকপির পঞ্চাশটিরও বেশি জাত পাওয়া যাচ্ছে। শীতকালেই আগাম, মধ্যম ও নাবি মরসুমে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি আবাদ করা যায়।
আগাম চাষ করা যায় ফুলকপির এমন জাতগুলি হলো (Cauliflower variety) –
১) অগ্রহায়ণী,
২) আর্লি পাটনা,
৩) আর্লি স্নোবল,
৪) সুপার স্নোবল,
৫) ট্রপিক্যাল স্নো,
৬) সামার ডায়মন্ড এফ১,
৭) ম্যাজিক স্নো ৫০ দিন এফ১,
৮) হোয়াইট বিউটি,
৯) কেএস ৬০,
১০) আর্লি বোনাস,
১১) হিট মাস্টার,
১২) ক্যামেলিয়া,
১৩) আর্লি মার্কেট এফ১,
১৪) স্পেশাল ৪৫ এফ১,
১৫) স্নো কুইন এফ১ ইত্যাদি।
এসব জাতের বীজ শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে বপন করা যায়।
কপি জাতীয় সবজি জৈব পদ্ধতিতে (Organic Cultivation) চাষ করতে হলে প্রথমে বীজশোধন করে নিয়ে তারপর প্লাগ ট্রে বা পোর ট্রেতে বীজ তলা করে চারা করে নিতে হবে।
পরবর্তী চিকিৎসা (Treatment) -
-
চারার ১০-১২ দিন ও ২২-২২ দিনে নিমতেল স্প্রের আগে ট্রাইকোডার্মা, ২০ গ্রাম + সিউডোমোনাস ৫ গ্রাম / লি জলে গুলে স্প্রে।
-
চারা রোয়ার একদিন আগে বিটি ১ গ্রাম / মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে।
-
চারা রোয়ার আগে শিকড়ের মাটি পরিষ্কার জলে ধুয়ে ট্রাইকোডার্মা ২০ গ্রাম + সিউডোমোনাস ৫ গ্রাম / লিটার জলের দ্রবনে ১০ মিনিট চুবিয়ে রোয়া করতে হবে।
পরবর্তী পরিচর্যা (Crop care) –
মূলজমিতে গভীর চাষ দিয়ে বিঘা প্রতি ২০ – ২৫ কুইন্টাল শুকনো গোবর সার / ১০-১৫ কুইন্টাল কেঁচোসার ট্রাইকোডার্মা + সিউডোমোনাস প্রয়োগ করতে হবে।
-
জমিতে এর পরবর্তীতে বিঘায় ১ কেজি অ্যাজোটোব্যকটর + ২ কেজি হিউমিক অ্যাসিড + ২ কেজি নিম দানা + ১ – ১.৫ কেজি জৈব উৎসেচক ও ফসফরাস সল্যুবলাইজিং ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ।
-
প্রতি ২৫ সারি কপির পর এক সারি সরষে বোনা ও বাঁধাকপির ক্ষেত্রে ৬০ x ৫০ সেমি ও ফুলকপির ক্ষেত্রে ৬০ x ৬০ সেমি কিছুটা ছেড়ে রোয়া।
-
চারা বড় হবার সঙ্গেই জৈব N-P-K সুপারিশ মাত্রায় স্প্রে ২/৩ বার।
মূলজমি ও পরবর্তী প্যাকেজ -
-
গভীর চাষ দিয়ে বিঘা প্রতি ২০ – ২৫ কুইন্টাল শুকনো গোবর সার / ১০-১৫ কুইন্টাল কেঁচোসার ট্রাইকোডার্মা + সিউডোমোনাস দিয়ে ব্যবহার।
-
জমিতে এর পরবর্তীতে বিঘায় ১ কেজি অ্যাজোটোব্যকটর + ২ কেজি হিউমিক অ্যাসিড + ২ কেজি নিম দানা + ১ – ১.৫ কেজি জৈব উৎসেচক ও ফসফরাস সল্যুবলাইজিং ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ।
-
প্রতি ২৫ সারি কপির পর এক সারি সরষে বোনা ও বাঁধাকপির ক্ষেত্রে ৬০ x ৫০ সেমি ও ফুলকপির ক্ষেত্রে ৬০ x ৬০ সেমি কিছুটা ছেড়ে রোয়া।
-
চারা বড় হবার সঙ্গেই জৈব N-P-K সুপারিশ মাত্রায় স্প্রে ২/৩ বার।
-
২৫ দিন পর ভর্মিকম্পোস্টের সঙ্গে সযষে বা বাদাম খোল সামান্য ট্রাইকোডার্মা দিয়ে জৈব উৎসেচক মিশিয়ে ১০ দিনের ব্যবধানু ৪/৫ বার সারির মাঝে প্রয়োগ। হিউমিক অ্যসিড ২ বার ২৫ দিনে স্প্রে।
-
DBM এর জন্য ফেরোমোন ফাঁদ লাগানো ও নিমবীজ নির্যাস বা নিমতেল ০/১৫ দিনের ব্যবধানে স্প্রে।
-
জমিতে পাখি বসার জায়গা করে দেওয়ার সঙ্গে নিয়মিত পর্যায়ে নিচের পাতা তোলা আর ল্যাদা পোকার সঙ্গে ডিম সমেত পাতা তুলে বিনষ্ট করা।
-
১০ ও ২৫ দিনে ট্রাইকোডার্মা + সিউডোমোনাস কপি ও মাটি ভিজিয়ে স্প্রে।
কীট আক্রমণ (Pest management) –
ফুলকপির সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হলো মাথাখেকো লেদা পোকা। নাবি করে লাগালে সরুই পোকা বা ডায়মন্ড ব্যাক মথ বেশি ক্ষতি করে। বীজ উৎপাদনের জন্য চাষ করলে পুষ্পমঞ্জরীকে জাব পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যান্য পোকার মধ্যে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, কালো ও হলুদ বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি মাঝে মাঝে তি করে থাকে। ফুলকপির পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এ ছাড়া চারা ধসা বা ড্যাম্পিং অফ, কাব রুট বা গদাই মূল, মোজেইক, পাতার আগা পোড়া ইত্যাদি রোগও হয়ে থাকে। বোরন সারের অভাবে ফুলে বাদামি দাগ পড়ে ও কা ফাঁপা হয়ে যায়।
আরও পড়ুন - Bitter gourd cultivation - সহজ পদ্ধতিতে করলা চাষ করে আয় করুন অতিরিক্ত অর্থ
নাবি করে ফুলকপি চাষ করতে চাইলে মাঘী বেনারসি, ইউনিক স্নোবল, হোয়াইট মাউন্টেন, এরফার্ট ইত্যাদি জাত লাগানো যেতে পারে। এই জাতের বীজ কৃষক আশ্বিন-কার্তিক মাসে বপন করে আবাদ করতে পারেন।
আরও পড়ুন - আসন্ন মরসুমে পেয়ারা চাষ করে কৃষকবন্ধুরা করতে পারেন দ্বিগুণ অর্থোপার্জন