পশ্চিমবঙ্গেও এবার ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের থাবায় মৃত্যু হলো একজনের | মৃতা খাস কলকাতার (1st Black Fungus death in Kolkata) বাসিন্দা | এই মৃত্যুতে শহর তথা রাজ্যবাসী বেশ চিন্তিত | মৃতের নাম শম্পা রায়চৌধুরী এবং তার বয়স ৩২। শুক্রবার শম্মুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তার । তার ডেথ সার্টিফিকেটে জ্বলজ্বল করছে দু’টি কারণ। করোনা (Corona virus) আর ব্ল্যাক ফাঙ্গাস |
করোনা আক্রান্ত শম্পা রায়চৌধুরী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিছুদিন আগেই। তিনি ডায়েবিটিকও ছিলেন, সেই কারণেই দ্রুত হানা দেয় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, চিকিৎসা পরিভাষা অনুযায়ী যাকে বলে মিউকরমাইকোসিস। চিকিৎসকদের মতে, করোনা ও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস একে অন্যের সহোদর | তাই করোনা সেরে গেলেও, করোনা পরবর্তী এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা |
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে মোট পাঁচজন এখনও পর্যন্ত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত। এদের মধ্যে একজন কলকাতার সাদার্ন এভিনিউ-র বাসিন্দা। বাকিরা দিশা আই হসপিটালে চিকিৎসাধীন, তারা সকলেই ভিন রাজ্যের বাসিন্দা।
তবে এর মধ্যেও, আশার খবর শোনাচ্ছে চিকিৎসামহল | সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ১,৩২,১৮১ জন হলেও সর্বমোট সুস্থ হওয়া ব্যক্তির সংখ্যাও বেশ ঊর্ধ্বে (১০,৮৩,৫৭০ জন)| লকডাউন করে রাজ্যে কোভিড সংক্রমণ কমাতে সফল হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, বলে দাবি একাংশের।
চিকিৎসামহলের তথ্য (Doctors Information) -
চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী, শরীর দুর্বল থাকলে এই ছত্রাক শরীরে বাসা বাঁধে | করোনা রোগীরা বেশিদিন আইসিইউ-তে থাকলে, কিংবা তাঁদের উপরে স্টেরয়েডের ব্যবহার বেশি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এই অবস্থায় শরীরে দানা বাঁধে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস । যেমনটা হয়েছিল শম্পা দেবীরও। এতদিন রাজস্থান, মুম্বাই, তেলেঙ্গানা থেকেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের মৃত্যুর খবর শোনা গেছিলো। এই ছত্রাকের দ্বারা সবথেকে বেশি সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসছে মহারাষ্ট্রে। ইতিমধ্যেই সেখানে আক্রান্ত প্রায় ১৫০০ মানুষ। করোনার মতোই এই রোগের জন্য তৈরি করা হয়েছে আলাদা ওয়ার্ড। রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে রাজস্থানেও।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মতামত:
ইতিমধ্যেই, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয় রাজ্য়ের তরফে। সেখানে থেকেই স্থির হয়, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গকে যেন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিচার করা হয়। প্রতিটি জেলায় সিএমও-তে জানানো হয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের খবর পেলেই জানাতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যের হাতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরোমাইকোসিসের ওষুধ অ্যাম্ফোটেরাইসিন বি যথেষ্ট পরিমাণে মজুত আছে। তাই এই রোগের চিকিৎসায় অসুবিধা হবে না |
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ (Symptoms of Black Fungus):
সম্প্রতি, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস চেনার কিছু গাইডলাইন জারি করেছে এইমস (AIIMS) -
অনেক সময়, নাক থেকে রক্তের জমাট অংশ বের হতে দেখা যায়।নাক বন্ধ থাকা, চোখে যন্ত্রণা ও মাথার যন্ত্রণা দেখা যায়। চোখের চারপাশে ফোলাভাব থাকে। দুটি করে ভিশন আসে চোখে। চোখ লাল হয়, চোখ বন্ধ করতে সমস্যা হয়। এমন অবস্থায় মুখ অসাড় হতে শুরু করে। কোনও কিছু চিবোতে বা মুখ খুলতে সমস্যা হবে। মুখের ভিতর ফুলে ওঠে, দাঁত পরে যায় |
আরও পড়ুন - International Tea Day _ আন্তর্জাতিক চা দিবস কেন পালন করা হয় জানেন কি?
উপরের উল্লিখিত সংক্রমণের মধ্যে একটিও দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত | চিকিৎসকরা আরও বলছেন, এখনও আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। এই রোগ আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। মিউকোরমাইকোসিস হতে পারে বহুদিন আইসিইউ-তে থাকলে। করোনা রোগীদের অনেকেই বহুদিন হাসপাতালে থাকায় ছত্রাক সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। তবে, সঠিক সময়ে ওষুধ প্রয়োগ করলে রোগমুক্তি হতে পারে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - White Fungus: Black ফাঙ্গাসের থেকেও নাকি মারাত্মক ক্ষতিকর White ফাঙ্গাস