ফুলের উপত্যকা ক্ষীরাই। যেদিকে চোখ যাবে সেদিকে শুধুই ফুলের বাহার। গাঁদা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, অষ্টার, গোলাপ, মরোগঝুঁটি, রজনীগন্ধা সহ আরও কত রঙ বেরঙের নাম না জানা ফুলের সমারোহে সেজে ওঠে এই ফুলের সাম্রাজ্য। শীতকালেই একমাত্র দেখা যায় ক্ষীরাই এর এই অপরূপ রূপ। তবে এই স্থান কোনও পাহাড়ি উপত্যকায় নয়। এটি রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। বাংলার বুকেই রয়েছে প্রকৃতির এই চোখ ধাঁধানো সাম্রাজ্য। ক্ষীরাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাশকুড়ার কাছের একটি গ্রাম। একটি সাধারন গ্রামের মধ্যেই যে এত সুন্দর অসাধারন প্রাকৃতিক দৃশ্য লুকিয়ে আছে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।
আরও পড়ুনঃ বঙ্গে শুরু শীতের ব্যাটিং! ঠাণ্ডায় কাবু গোটা বাংলা, আজ মরশুমের শীতলতম দিন
মুলত দুর্গা পুজোর পর থেকেই এই স্থানে দেখা যায় ফুলের সমাহার। ওই সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী ফেব্রুয়ারি মার্চ মাস পর্যন্ত দেখা যায় এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আমরা মুলত সিনেমার পর্দায় দেখি নায়ক নায়িকারা ফুলের বড় বাগানের মধ্যে দাঁড়িয়ে গান করছেন। কিন্তু এই ক্ষীরাইয়ে গেলে এই দৃশ্য চোখের সামনে দেখার সুযোগ মিলবে। কলকাতার খুব কাছেই এই ‘Valley of Flowers’। কাঁসাই ও ক্ষীরাই নদী কিছুটা দূর পর্যন্ত একই সঙ্গে বয়ে চলেছে। আর এই দুই নদীর মধ্যবর্তী উপত্যকায় গড়ে উঠেছে ফুলের সাম্রাজ্য। মাইলের পর মাইল খেতে এই ফুলচাষ করেন চাষিরা। দেখে মনে হবে ফুলের চাদরে মোড়া রয়েছে এই জায়গা। বিভিন্ন রঙিন ফুল, মিষ্টি গন্ধ, মিঠে রোদ সব মিলিয়ে শীতের সকাল জমজমাট। আর এই ফুলগুলির সুগন্ধে ছুটে আসে প্রজাপতি, মৌমাছিসহ বিভিন্ন পোকা মাকড়ের দল। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকা নির্বাহের এটিই অন্যতম প্রধান উপায়। এখান থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ফুলের সরবরাহ করা হয়।
আরও পড়ুনঃ কৃষকদের ফুল চাষ এড়িয়ে চলা উচিৎ,জেনে নিন কেন
তবে এই জায়গায় যাওয়ার জন্য আপনাকে বেশি হ্যাপা করতে হবে না। কলকাতা থেকে ১০০ কিমির মধ্যেই রয়েছে এই স্থান। হাওড়া স্টেশন থেকে খড়গপুর ও মেদিনীপুর লোকাল ধরে যেতে হবে ক্ষীরাই স্টেশন। এই স্টেশনে নেমে পাশকুড়া গ্রামের দিকে হেঁটে আড়াই কিমি মত হাঁটলেই দেখতে পাবেন এই ফুলের সাম্রাজ্য। তাছাড়াও রয়েছে টোটোর সুবিধা। পাশাপাশি গাড়িতে করেও পৌঁছে যেতে পারেন এই সাম্রাজ্যে।
তবে বর্তমানে এই রঙিন সাম্রাজ্যে বর্তমানে নেমে এসেছে অন্ধকার। পাঁশকুড়া দু’নম্বর ওয়ার্ডের কনকপুর-সহ বেশকিছু এলাকা এবং কাঁসাই নদীর তীরবর্তী এলাকায় নেমে এসেছে মাদক কারবারের কালো ছায়া। রমরমিয়ে চলছে মাদক ব্যবসা। ভাঙছে ঘর, বাড়ছে অশান্তি। ফুলের শহরের বাসিন্দারা হয়ে উঠছে অতিষ্ঠ। আসলে বেশকিছুদিন ধরে এই স্থানে চলছে ব্রাউন সুগারের কারবার। ফলে তার প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর। অধিকাংশ আসক্ত হচ্ছেন এই মাদকদ্রব্যের প্রতি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওড়িশা-সহ বেশ কিছু এলাকা থেকে আগে ট্রেনে করেই এই মাদকদ্রব্য পৌঁছাত এলাকায়। তবে সম্প্রতি জাতীয়সড়ক তৈরি হওয়ায় ওই পথেই মাদকদ্রব্য ঢুকছে শহরে। কিছু মানুষ নেশায় এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছেন যে তাঁরা চুরি করছেন। এমনকি ঘরের থালা বাসন ইত্যাদি বিক্রি করে নেশার সামগ্রি কিনছেন। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেও আসছে হুমকি। ফলে জনজীবন হচ্ছে অতিষ্ঠ। ইতিমধ্যেই পুলিশ প্রশাসন কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা চেষ্টা করছেন এই মাদক দ্রব্য কিভাবে ঢুকছে এবং তা কিভাবে বন্ধ করবেন। কড়া তদন্ত চলছে এই মাদক দ্রব্যের ব্যবসা বন্ধ করার জন্য।