একসময় ভারতের জঙ্গলেও দেখা মিলত চিতার। কিন্তু অবাধ শিকার ও ক্রমবর্ধমান মৃত্যুহারের কারণেই ভারত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায় চিতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনেই নামিবিয়া থেকে ভারতে আনা হয়েছে আটটি চিতা। ভারতে ফের একবার চিতার বংশবৃদ্ধি করাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। আগামী পাঁচ বছরে ধাপে ধাপে আরও ৫০টি চিতা আনা হবে ভারতে। শনিবারই নামিবিয়া থেকে আনা ওই আটটি চিতাকে মধ্য প্রদেশের কুনোর জঙ্গলে ছাড়া হয়েছে।
ভারতে ফের একবার চিতার আগমন নিয়ে সকলেই খুশি হলেও, একাধিক বিশেষজ্ঞরা চিতাগুলির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পশু সংরক্ষণবাদী বাল্মীক থাপার জানান, নামিবিয়া থেকে আনা এই চিতাগুলি কীভাবে কুনোর জঙ্গলে থাকবে, খাবে এবং পরবর্তী সময়ে তাদের সন্তানদের কীভাবে বড় করে তুলবে, তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে। কারণ কুনো জাতীয় উদ্যানে তাদের শিকারের অভাব দেখা দিতে পারে।
তিনি জানান, কুনো জাতীয় উদ্যানে প্রচুর হায়েনা ও চিতাবাঘ রয়েছে, যা শিকারের ক্ষেত্রে চিতার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী তথা শত্রুও বটে। আফ্রিকাতে হায়েনারা দলবদ্ধ হয়ে চিতার শিকারও করে। এখানেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া কুনোর জঙ্গলের আশেপাশে ১৫০টি গ্রাম রয়েছে। সেখানের কুকুররাও এই চিতাদের উপরে হামলা চালাতে পারে।
আরও পড়ুনঃ এবার রাজ্যেও লাম্পি ভাইরাসের হাতছানি, আক্রান্ত ২
একথা সকলেরই জানা যে, বিশ্বের দ্রুততম জীব চিতা। তবে শিকারিদের থেকে কেন বাঁচতে পারবে না সে? এই বিষয়ে বাল্মীক থাপার বলেন, “সেরেনগেটি (তানজানিয়ার জাতীয় উদ্যান)-র মতো জায়গায় চিতারা সহজেই পালিয়ে যেতে পারে তাদের শিকারিদের কাছ থেকে কারণ সেখানে বিশাল বড় খোলা ও সবুজ উদ্যান রয়েছে। কুনোয় বনভূমিকে তৃণভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। একাধিক জায়গায় পাথর থাকায় দ্রুতগতিতে ছোটা চিতাদের জন্য এটা বড় সমস্যা। এমনকী পাথরে ধাক্কা লেগে তাদের মৃত্যুও হতে পারে। এছাড়া অনেক সময় রণথম্বোর থেকে বাঘও এই জঙ্গলে চলে আসে। সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।”
নামিবিয়া থেকে আনা চিতাদের অন্যতম সমস্যা হয়ে উঠতে পারে শিকার খোঁজা। যেখানে তারা আগে থাকত, সেখানে প্রায় ৫ লক্ষেরও বেশি হরিণ ছিল। কুনোয় যদি ব্ল্যাকবাক বা চিঙ্কারা হরিণ না হয়, তবে চিতাদের স্পটেড ডিয়ার শিকার করেই পেট ভরাতে হবে। এই হরিণগুলি সহজেই ঘাসের মধ্যে লুকিয়ে পড়তে পারে, ফলে চিতার শিকার খুঁজতে সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি হরিণগুলির বড় বড় শৃঙ্গ থাকায়, চিতাদের আহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।