১১ জন ‘স্বাধীন’ ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ মহুয়া

বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র...

Saikat Majumder
Saikat Majumder
ছবিঃ freepik

কৃষি জাগরণ ডেস্কঃ বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মঙ্গলবার সকালে দেশের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনার কাছে এই মামলাটি উত্থাপন করেছেন আইনজীবী অপর্ণা ভট্ট। গুজরাট সরকারের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ।

বিলকিস বানোর গণধর্ষণ মামলায় ১১ জন দোষীকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে গুজরাট সরকার।অভিযুক্ত ১১ জন ১৫ বছরের বেশি সময় জেলে ছিল। এর মধ্যে এক অভিযুক্ত জামিনের আবেদন করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে। তারা সাজা মুকুবের জন্য গুজরাট সরকারকে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

২০০২ সালের মার্চ মাসে দাহোদ জেলায় লিমখেড়া তালুকায় রাধিকাপুর গ্রামে একদল দুষ্কৃতী বিলকিস বানোর পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছিল। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় থাকা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। তাঁর পরিবারের ৮ জন সদস্যকে খুন করা হয়৷ তাঁর ৩ বছরের ছোট্ট মেয়েকে আছড়ে মেরেছিল মায়ের চোখের সামনে। পরিবারের অন্য ৬ জন সদস্য পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন৷ পরে ২০০৪ সালে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত সেই ১১ জন ‘স্বাধীন’ হয়েছে গত ১৫ অগস্ট।

আরও পড়ুনঃ অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি, কাঠগড়ায় বিধায়ক পরেশ পাল

ধর্ষক রাধেশ্যাম শাহ সহ মুক্তি পেয়েছে যশওয়ান্তভাই নাই, গোবিন্দভাই নাই, শৈলেশ ভাট, বিপিন চন্দ্র যোশী, কেশরভাই ভোহানিয়া, প্রদীপ মোরধিয়া, বাকাভাই ভোহানিয়া, রাজুভাই সোনি, মিতেশ ভাট এবং রমেশ চন্দনা ৷ জেল থেকে মুক্তি পেতেই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফ থেকে ধর্ষকদের গলায় পরানো হয়েছে ফুলের মালা, মুখে তুলে দেওয়া হয়েছে মিষ্টি। গুজরাতের গোধরার বিজেপি বিধায়ক সিকে রাউজি বলেছেন, এই ধর্ষকদের ‘স্বভাব-চরিত্র ভালো’। এ সব যতই দেখছেন আর শুনছেন, ততই বিস্মিত হচ্ছেন বিলকিসের স্বামী।

এবার গুজরাট সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা হল সুপ্রিম কোর্টে। মঙ্গলবার ওই আবেদনটি করেন আইনজীবী অপর্ণা ভাট্ট। আগামিকাল ওই মামলাটি পর্যালোচনা করবেন প্রধান বিচারপতি এন ভি রামান্না। গুজরাট সরকারের এই নির্দেশে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে গোটা দেশে। কেন এই নৃশংস ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তদের মুক্তি দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

ফিরে দেখা বিলকিস বানোর লড়াই

২০০২ সালে গুজরাটে যখন দাঙ্গা শুরু হয়েছিল, তখন সেখানে বসবাসকারী সমস্ত মুসলমান দাঙ্গা এড়াতে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে শুরু করে। এদের মধ্যে বিলকিস বানো ও তার পরিবারও ছিল। বিলকিস বানো গুজরাটের দাহোদ জেলার রন্ধিকপুর নামের একটি গ্রামের বাসিন্দা। তার পরিবারে ১৫ জন সদস্য ছিল, এই মধ্যে তার একটি তিন বছর বয়সী মেয়েও ছিল।  

সেই মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল , ৩ মার্চ বিলকিস বানো তার পরিবার নিয়ে নিরাপদ একটি গ্রামে পৌঁছলে সেখানে ২০-৩০ জন দুষ্কৃতি তার ওপর হামলা চালায়। তারা লাঠি ও শিকল দিয়ে মারধর শুরু করে। হামলায় বিলকিসের পরিবারের ৮ সদস্য নিহত হন। শুধু তাই নয়, বিলকিস বানোসহ চার মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের মাকেও ধর্ষণ করা হয়। নিহতদের মধ্যে বিলকিসের তিন বছরের মেয়েও রয়েছে। এই জঘন্য অপরাধের জন্য সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পড়ুনঃ কৃষকদের বিক্ষোভ সমাবেশ নিয়ে উত্তাল রাজধানি,গ্রেফতার টিকায়েত

এই ঘটনার পর থেকে  বিলকিস বানো ক্রমাগত হুমকি পেতে থাকেন ।বেশ কয়েকবার বাড়ি বদল করতে হয়েছে তাকে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাল্টেছে। কিন্তু বিলকিস ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যান। মামলাটি সিবিআইয়ের হাতে এলে ফের শুরু হয় মামলার তদন্ত। ২১ জানুয়ারী ২০০৮ সালে , বিশেষ আদালত বিলকিসের পরিবারের সাত সদস্যকে গণধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ১১ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। বম্বে হাইকোর্টও বিশেষ সিবিআই আদালতের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। বিলকিস বানো কে ধর্ষন ও তার পরিবারকে হত্যার দায়ে আসামিরা প্রায় ১৫ বছর জেল খাটেন।

আইন অনুসারে, যদি একজন দোষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তবে তাকে ন্যূনতম ১৪ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়।  তারপরে দোষী ক্ষমা চাইতে পারেন। দোষী ব্যক্তির আচরণ এবং অপরাধের প্রকৃতি পর্যালোচনার উপর ভিত্তি করে, সরকার দোষীদের মুক্তি দেবে বা সাজা অব্যাহত রাখবে কিনা তা সিদ্ধান্ত নেয়।

Published On: 23 August 2022, 05:11 PM English Summary: Challenging the decision to release 11 'independent' rapists, Mahua approached the Supreme Court

Like this article?

Hey! I am Saikat Majumder. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters