বিগত এক সপ্তাহে ভারতের কয়েকটি পাইকারি বাজারে শাকসবজি এবং ফলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদিত পণ্যের এই কম দাম কিছু সময়ের জন্য অব্যাহত থাকবে বলে এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই উদ্যানজাত পণ্যের দাম পুনরায় বৃদ্ধির কোন আশাও নেই। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে প্রতি কেজি টমেটো ১০ টাকায় এবং পিঁয়াজ প্রতি কেজি ১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বিগত বছরের স্বাভাবিক বর্ষা ও শীতে ভাল বৃষ্টিপাতের কারণে এই মরসুমে রেকর্ড পরিমাণ ৩১৩.৫ মিলিয়ন টন শাকসবজি উৎপাদন হয়েছে, যা বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় সর্বোচ্চ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লকডাউনের কারণে শাকসবজির চাহিদা হ্রাস পেয়েছে, এমনকি সংক্রমণের আশঙ্কায় পরিবারগুলিও পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি ক্রয় করছেন না। এছাড়া পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এটি কৃষকদের তাদের পণ্য বাজারে নিয়ে যাওয়ার সমস্যা তৈরি করেছিল। এশিয়ার বৃহত্তম ফল ও সবজির বাজার সহ কয়েকটি বড় সবজির পাইকারি বাজারও বন্ধ ছিল। যে শাকসবজি এই মরসুমে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রির কথা, তা এখন পাইকারি বাজারে কেজিতে প্রায় ১৫ টাকায় নেমে এসেছে।
বিহার, ওড়িশা এবং উত্তর প্রদেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে কৃষকরা তাদের পণ্য নিজেরাই নষ্ট করে দিয়েছেন, অনেকে আবার তা গবাদি পশুদের খাইয়ে দিয়েছেন। ওই এলাকার স্থানীয় কৃষকদের বক্তব্য অনুযায়ী, বাজারে কেজি প্রতি দুই টাকায় ভেন্ডি বিক্রি করার কোনও অর্থ নেই, তাই এই বছর জমির ফসল নিজেরাই তারা নষ্ট করে দিয়েছে।
ওড়িশার বেশ কয়েকটি জেলায়, চাহিদা কম থাকায়, ফসল সংগ্রহের জন্য শ্রমিক না মেলায় এবং সর্বোপরি পরিবহনের জন্য ট্রাক বা ভ্যান না পাওয়ায় খামারে ফসল পচছে। স্থানীয় এক কৃষকের বক্তব্য অনুযায়ী, তার পাঁচ একর জমিতে ৩ টন কুমড়ো ফসল বিক্রির জন্য প্রস্তুত ছিল। তিনি সেই ফসল সংগ্রহের পরও কোন গ্রহণকারীকে না পাওয়ায় প্রভূত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। প্রথমে তিনি ফসলের দাম পান নি, কুমড়ো কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে দশ টাকায় বিক্রি হয়েছে আর অবশিষ্ট যে ফসল জমিতে ছিল, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে তা সমস্তই নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কৃষক লোণ নিয়েও চাষ করে থাকেন। এখন তাদের অনেকেরই ফসল জলের তলায়, তারা ফসলের সঠিক মূল্যও পান নি, লোণের টাকা পরিশোধ তো দুরের কথা, কীভাবে তারা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবেন তা ভেবেই দুশ্চিন্তার স্পষ্ট ছাপ তাদের মুখে।
ইতিমধ্যে লকডাউনের কারণে শিলিগুড়িতে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির মুখে আনারস চাষীরা। তাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪২ কোটি টাকা। সুপার সাইক্লোন আমফানের প্রভাবে ৮০ শতাংশ সবজি ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় আড়াই লক্ষ আম চাষী। রাজ্য সরকারের কৃষকদের জন্য একটি ফসল বীমা রয়েছে। যে সকল কৃষকদের ফসল বীমা রয়েছে, তাদের ফসল নষ্ট হয়ে গেলে সরকার কর্তৃক টাকা তারা পাবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় এই যে, রাজ্যে বেশীরভাগ কৃষকই এখনও পর্যন্ত এই বীমার আওতায় আসেননি, তাদের পরিণাম সত্যই ভয়ঙ্কর।
স্বপ্নম সেন
Related link - https://bengali.krishijagran.com/news/in-west-bengal-pineapple-farmers-are-in-huge-loss/