২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির কাছে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন।ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বাঙালি কখনো ভুলবে না। বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহীদ মিনারে আজও শহীদ দিবস পালিত হয়।উর্দু নয় বাংলা ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে পূর্ববঙ্গের এই লড়াই আজও শিহরণ জাগায়।
২০১০ সালের ৫ অগাস্ট রাষ্ট্রসংঘ সিদ্ধান্ত নেয় যে একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হবে।আর এই বিশাল অর্জনের পিছনে ছিলো বহু বাঙালির প্রান বিসর্জন।মাতৃভাষার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় আবুল বরকত,আবদুল জব্বার, রফিক উদ্দীন আহমদ, আবদুস সালাম, শফিউর রহমান, আবদুল আউয়াল, মো. অহিউল্লাহ, প্রমুখ ঢাকার রাজপথে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
আরও পড়ুনঃসুরের আকাশে নক্ষত্র পতন,প্রয়াত প্রয়াত কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী বাপ্পি লাহিড়ি
১৯৪৭ সালে যখন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়েছিল তার আগেই আসলে শুরু হয়েছিল ভাষা নিয়ে বিতর্ক। ৭০ বছর আগের এই দিনে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার দাবিতে শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অকুতোভয় বীর সন্তানরা নেমে এসেছিলেন রাজপথে।বুকের তাজা রক্তে বসন্তের রাঙা ফুলের মতোই রাঙিয়ে দিয়েছিল রাজপথ।মাতৃভাষার দাবিতে আত্মদানের এক অভূতপূর্ব অধ্যায় সেদিন সংযোজিত হয়েছিল মানব ইতিহাসে।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট
ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর থেকে উর্দু-বাংলা বিতর্ক মাথাচাড়া দিতে থাকে। 'মিল্লাত' পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছিল, "মাতৃভাষার পরিবর্তে অন্য কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষারূপে বরণ করার চাইতে বড় দাসত্ব আর কিছু থাকিতে পারে না।"
ধীরে ধীরে অর্থনীতি ও রাজনীতিও বিতর্কের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ সালে দৈনিক আজাদি পত্রিকায় লেখক সাংবাদিক আবদুল হক লিখেছিলেন, "উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি উর্দু-শিক্ষিতই চাকুরীর যোগ্যতা লাভ করবেন, এবং প্রত্যেকটি বাংলা ভাষীই চাকুরীর অনুপযুক্ত হয়ে পড়বেন"।
আরও পড়ুনঃ জল বাঁচানোর লক্ষেই তৈরি হয়েছিল "জল ধরো-জল ভরো" প্রকল্প
পাকিস্তানী শাসকরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে রাজী হননি। বাংলার তরুন যুবক মায়ের ভাষাকে আগলে রাখতে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে দাবি তুলেছিলেন, এ মর্যাদা দিতেই হবে। সে দাবির পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা ঘটেছে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে। বাংলা প্রথমে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় আর এখন বাংলাদেশের একক ও একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।
আজ সারা দেশে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করা হবে। ভাষা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য হলো, ‘প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বহুভাষায় জ্ঞানার্জন : সংকট এবং সম্ভাবনা’।বাঙালির প্রাণের দিবস একুশে ফেব্রুয়ারির তাত্পর্য বহুমাত্রিক।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি’এই গান গেয়ে লাখ লাখ মানুষ শ্রদ্ধা জানায় বাংলা মায়ের সন্তানদের।সেখানে ফুল দিয়ে, শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ভাষাশহীদদের স্মরণ করা হয়।