কৃষিজাগরন ডেস্কঃ নবান্ন বাংলার এক ঐতিহ্যবাহী শস্য উৎসব। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন নবান্ন। নগরসভ্যতার পরিবর্তিত প্রভাবে অনেকটা বদলে গেলেও অঘ্রাণে নতুন ধানের আগমনে গ্রামীণ জীবনে এখনও প্রাণের জোয়ার বয়ে যায়। এদেশের কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। নবান্ন এক অসাম্প্রদায়িক উৎসব। এ উৎসব বাঙালি জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে। বাঙালির জনজীবনে অনাবিল আনন্দ, সুখ ও সমৃদ্ধির বার্তা নিয়ে আসে। বাঙালির ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। কৃষিনির্ভর এই সমাজে কৃষিজমির সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক সূত্রেই নবান্ন হয়ে উঠেছে বাংলার লোকায়ত উৎসব।
শুক্রবার পহেলা অগ্রহায়ণ। এদিন গ্রাম বাংলার লোকেদের প্রাণের উৎসব নবান্ন। নবান্ন মানেই নতুন অন্নের উৎসব। সুদূর অতীত থেকে আজও এই উৎসবের চল বর্তমান। নবান্নের সেই পুরোনো ঐতিহ্যকে আজও ধরে রেখেছে গ্রাম বাংলার মানুষ। তবে অতীতের নবান্ন উৎসবে জাঁকজমকতা বর্তমান প্রজন্মের কাছে কিছুটা হলেও ফিকে হয়েছে। অনুষ্ঠানকে সংক্ষিপ্ত করে ঠাকুরদার আমলের নবান্ন উৎসবের রীতি গ্রাম বাংলার অনেকেই ধরে রেখেছেন।
আরও পড়ুনঃ কৃষি যন্ত্র কেনার জন্য ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেবে রাজ্য সরকার
পহেলা অগ্রহায়ণ মূলত নবান্ন হলেও এ মাসে অন্য তিথিতেও অনেকে নবান্ন উৎসব করেন। এদিন সকালে নতুন ধুতি পরে মাঠে গিয়ে নতুন আমন ধান কেটে মাথায় করে সেই ধান বাড়িতে আনা হয়। ঢেঁকিতে সেই ধান কোটার পর চালের গুড়োতে হয় নবান্ন উৎসব। বর্তমানে ঢেঁকি প্রচলন নেই বললেই চলে। ঢেঁকির পরিবর্তে হামুল দিস্তায় পিষে চালের গুড়ো বেশিরভাগ বাড়িতেই করা হয়।
নবান্ন উৎসবের মতো গ্রামবাংলার অন্যান্য ঐতিহ্যও হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে এখন পারিবারিক বন্ধনটা আর আগের মতো নেই। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি আত্মিক টান কমে যাচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সংস্কৃতিতে। পিঠা-পুলি খাওয়ার ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। সংস্কৃতি পাল্টে যাওয়ার কারণে এখন আর নবান্ন উৎসব আগের মতো দেখা যায় না। নবান্নের উৎসব এখন মেকি আনুষ্ঠানিতকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
আরও পড়ুনঃ রমরমিয়ে চলছে সারের কালোবাজারি ,বিপাকে কৃষকরা
সময় পরিবর্তনের হাওয়ায় সংস্কৃতি পাল্টে যাচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন। এখন নাগরিক সংস্কৃতির আগ্রাসনে গ্রামীণ সংস্কৃতি যেন হারিয়ে যেতে বসেছে।তবে এই আধুনিকতার যুগে আজও নবান্ন উৎসবে গ্রামবাংলায় এক আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য সংস্কৃতির সঙ্গে আজও মিশে আছে নবান্ন উৎসব। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলায় ছোঁয়া লেগেছে শহরের কৃত্রিমতার। এই উৎসবের আমেজ ফিকে হলেও নবান্নের সেই চেনা ছবি আজও দেখা যায় এই গ্রাম বাংলায়। আগামী প্রজন্মেও যেন এর ঐতিহ্য বজায় থাকে পরম্পরায়।