প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উত্তরাখন্ডে নমামী গঙ্গে মিশনের আওতায় ৬টি বৃহৎ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন।
শ্রী মোদী হরিদ্বারে গঙ্গা নদীর ওপর গঙ্গা অবলোকন সংগ্রহশালারও উদ্বোধন করেছেন। এ ধরণের সংগ্রহশালা দেশে এই প্রথম। তিনি ‘রোয়িং ডাউন দ্য গ্যাঞ্জেস’ বইটি প্রকাশ করেছেন এবং জল জীবন মিশনের নতুন লোগোও উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ‘জল জীবন মিশন’-এর আওতায় গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পানি সমিতি (জল কমিটি) গুলির জন্য নীতি-নির্দেশিকা সম্বলিত ‘মার্গদর্শিকা’ও প্রকাশ করেছেন।
এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে গ্রামাঞ্চলে প্রতিটি বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা জল জীবন মিশনের উদ্দেশ্য। তিনি বলেছেন, এই মিশনের নতুন লোগো প্রতি ফোঁটা জলের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাকে অনুপ্রাণিত করবে।
মার্গদর্শিকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গ্রামাঞ্চলে যেসব মানুষরা থাকেন তাদের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, একই ভাবে প্রশাসনিক ব্যবস্থার কাছেও এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
‘রোয়িং ডাউন দ্য গাঞ্জেস’ বইটির প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সংস্কৃতি, বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যের প্রতীক কেমনভাবে গঙ্গা নদী হয়ে উঠেছে, সে বিষয়ে এই বইয়ে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা আছে।
শ্রী মোদী গঙ্গা নদীকে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন, কারণ এই নদীর উৎস স্থল উত্তরাখন্ড থেকে সঙ্গম স্থল পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের জীবনে এই নদী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
নমামী গঙ্গে মিশনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এটি একটি বৃহত্তম সুসংহত নদী সংরক্ষণ প্রকল্প। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র গঙ্গা নদীর পরিচ্ছন্নতা বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়না, এই নদীর সর্বাঙ্গীন রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিও এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। এই নতুন ভাবনা এবং উদ্যোগের ফলে গঙ্গা নদী তার জীবন ফিরে পেয়েছে। পুরনো পদ্ধতি ব্যবহার করলে পরিস্থিতি আজও খারাপই থাকতো। পুরনো পদ্ধতিতে দূরদর্শীতা এবং সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ- দুটিই কম ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকার লক্ষ্য অর্জনের জন্য গৃহিত কৌশলকে ৪ টি ভাগে ভাগ করেছে।
১) বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রগুলিকে একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচির মাধ্যমে বাস্তবায়িত করা হয়েছে যাতে দূষিত জল গঙ্গায় না ফেলা হয়।
২) এই বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রগুলি আগামী ১০-১৫ বছরের চাহিদার কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে।
৩) গঙ্গা নদীর তীরবর্তী শত শত বড় শহর এবং ৫ হাজার গ্রামকে খোলা স্থানে শৌচকর্ম মুক্ত করা হয়েছে।
৪) গঙ্গার উপনদীগুলিকে দূষণমুক্ত করার সব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শ্রী মোদী, নমামী গঙ্গে প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্যের কথা তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেছেন। ৩০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ প্রায় শেষ হওয়ার দিকে এগিয়ে চলেছে। এই প্রসঙ্গে তিনি বিশেষ করে ঋষিকেশের মুনি কি রেতিতে চন্দ্রেশ্বর নগরের নর্দমার কথা উল্লেখ করেছেন। এই নর্দমা দর্শনার্থী এবং র্যাদফটরদের কাছে দৃষ্টিকটু ছিল। মুনি কি রেতিতে একটি ৪ তলা বর্জ্য নিষ্কাষণ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং নর্দমাটি বন্ধ করার উদ্যোগের তিনি প্রশংসা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রয়াগরাজ কুম্ভের তীর্থযাত্রীদের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে হরিদ্বার কুম্ভের দর্শনার্থীরা উত্তরাখন্ডে গঙ্গা নদীকে বিশুদ্ধ এবং পবিত্রভাবে পেয়েছেন। হরিদ্বারে গঙ্গার শত শত ঘাটগুলির সৌন্দর্যায়ন এবং নদী তীরের আধুনিক উন্নয়নের কথাও প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তীর্থযাত্রীদের জন্য গঙ্গা অবলোকন সংগ্রহশালাটি একটি বিশেষ আকর্ষণীয় কেন্দ্র হয়ে উঠবে। গঙ্গা নদীর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঐতিহ্য সম্পর্কে এখানে আরও ভালোভাবে জানা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গঙ্গা নদীকে পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি সমস্ত গাঙ্গেয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশ এবং পরিবেশের দিকটিও নমামী গঙ্গে প্রকল্পে গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি বলেছেন জৈব চাষ এবং আর্য়ুবেদিক উপাদানের চাষের বিষয়ে সরকার একটি সর্বাঙ্গীন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। শ্রী মোদী বলেছেন, এবছর ১৫ ই আগস্ট যে মিশন ডলফিন প্রকল্পের কথা ঘোষণা হয়েছে, নমামী গঙ্গে প্রকল্পের মাধ্যমেও তা শক্তিশালী হবে।