পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিগত বুধবার কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেন অভিবাসী কর্মীদের প্রত্যেককে এককালীন ১০,০০০ টাকা সহায়তা দেওয়ার জন্য। একটি টুইট বার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘উদ্ভূত চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় অসংগঠিত খাতে নিযুক্ত অভিবাসী শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তাও দেওয়া উচিত’। লকডাউন হওয়ার ফলে শ্রমিক দিনমজুরদের কাজ বন্ধ। বাড়ি ফিরছে সকলেই, কিন্তু বিগত দুই মাস ধরে রোজগার বন্ধ, এমতাবস্থায় তাদের খাদ্যশস্য সরবরাহের দায়িত্ব সরকার নিয়েছে ঠিকই, মাসের রেশন ছাড়াও অতিরিক্ত রেশন বরাদ্দ করা হয়েছে সকলের জন্য, কিন্তু খাদ্য সংস্থান ছাড়াও প্রয়োজনীয় অন্যান্য খরচও সরকারের বহন করা উচিৎ।
কোভিড -১৯ মহামারীর কারণে, মার্চ মাসের শেষ থেকে ভারতে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এরপর পরিস্থিতির ভিত্তিতে পরিবর্তিত শিথিল নিয়ম সহ তা দফায় দফায় বর্ধিত হয়ে পঞ্চমবারের মতো বাড়ানো হয় এবং এটি জুন মাসের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত স্থায়ী করা হবে বলে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় দুই মাসব্যাপী এই লকডাউনে দেশের অর্থনীতি তীব্র অভিঘাতের মুখে। ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সকল ক্ষেত্র জুড়েই ক্রিয়াকলাপ রয়েছে বন্ধ। আনুমানিক ১০ কোটিরও বেশি লোক তাদের চাকরি হারিয়েছে, বেশিরভাগ অনানুষ্ঠানিক খাতে যেখানে অভিবাসী শ্রমিকরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলস্বরূপ অভিবাসীরা ভিন রাজ্য থেকে তাদের নিজস্ব শহরে ফিরে আসে।
এক সময় অভিবাসীদের রাজ্যে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এমন অভিযোগকে ভ্রান্ত ধারণা বলে ঘোষণা করে এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে ইতিমধ্যে ৫ লক্ষ শ্রমিক রাজ্যে ফিরে এসেছেন এবং আরও ৪ লাখ মানুষ ১০ ই জুনের মধ্যে অতিরিক্ত ৭৫ টি ট্রেনের মাধ্যমে ফিরে আসতে চলেছেন।
তবে মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, বেশী সংখ্যক শ্রমিক ট্রেন চালানোর জন্য। কারণ তাঁর মতে শ্রমিক ট্রেনের সংখ্যা অপর্যাপ্ত হওয়ায় এক–একটি ট্রেনে বেশী সংখ্যক মানুষ আসছেন। ফলে বাড়ছে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভবনা এবং উত্তরোত্তর বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।
তিনি দাবি করেছেন যে, সকল রাজ্যের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই স্বরাজ্যের অভিবাসীদের আনার জন্য রেলপথকে অর্থ প্রদান করে। তথ্য অনুসারে ইতিমধ্যেই অভিবাসীদের জন্য ট্রেনের ভাড়া হিসাবে ১২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “রাজ্য জুড়ে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার পরিচালনার জন্য সরকার প্রতিদিন তিন কোটি টাকা ব্যয় করছে। যে রাজ্যগুলিতে অভিবাসীরা আটকা পড়েছিল, সেখানে তাদের খাদ্য ও চিকিত্সা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে আমরা যারা অন্যান্য রাজ্য থেকে এখানে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে এসেছিলেন, তাদের জন্য কেবল খাদ্য এবং চিকিত্সা সুরক্ষাই নয়, বরং স্বদেশে ফেরার জন্য পরিবহণের ব্যবস্থাও করেছি”।
তিনি কেন্দ্র সরকারের কাছে এই মর্মে আবেদন জানান যে, জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল (PM-CARES) থেকে নাগরিক সহায়তা এবং ত্রাণ স্বরূপ অভিবাসী শ্রমিকদের জনপ্রতি ১০,০০০ টাকা দেওয়া হোক। বিশেষ সূত্র অনুযায়ী, তার এই আবেদন কেন্দ্র সরকার অনুমোদনের লক্ষ্যে রয়েছে। কেন্দ্র সরকার তার ২০ লক্ষ কোটির আর্থিক প্যাকেজে শ্রমিকদের ত্রাণ দেওয়ার বিষয়টি নজরে রেখেছিলেন। সুতরাং, তাদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্র সরকার চেষ্টা করে চলেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সুপার সাইক্লোন আমফানের ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্র ১,০০০ কোটি বাংলায় দিয়েছেন।
কিছুদিন আগেই মে মাসের ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড় আমফান রাজ্যটিকে বিধ্বস্ত করেছে এবং রাজ্যের দরিদ্র জেলাগুলিতে আরও বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। ঘূর্ণিঝড় আমফানের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানুষদের তাদের বাড়িঘর মেরামত করার জন্য প্রত্যেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০,০০০ টাকা দেওয়ার ঘোষণা করে রাজ্য সরকার এবং তার পরের দিনই ৫ লক্ষ মানুষের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তরিত করা হয় সরকারের তহবিল থেকে টাকা। ২ লাখ পান চাষীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ শুরু করেছে। এছাড়াও ২৩.৩ লক্ষ কৃষকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ আর্থিক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাজ্য সরকার বিগত মঙ্গলবার। সাইক্লোনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাকি মানুষদের এবং কৃষকদের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে সরকারী সূত্র অনুসারে জানা গেছে।
Related link -https://bengali.krishijagran.com/news/pm-matsya-sampad-yojona-to-double-the-income-of-farmers-in-the-fisheries-sector/