আমাদের দেশ কৃষি নির্ভর । দেশের অনেক মানুষই কৃষিকাজের (Agriculture) সঙ্গে যুক্ত । দেশের বার্ষিক আয়ের একটা বড় ভাগই আসে কৃষিকাজ থেকে । তবু আজ পর্যন্ত দেশের কৃষি ব্যবস্থা পুরনো পন্থার উপরেই নির্ভরশীল । কৃষিকাজকে উন্নত করার বা আধুনিক উপায় কাজে লাগানোর তেমন কোনও চেষ্টা আজও এ দেশে দেখতে পাওয়া যায় না । স্মার্ট ফার্মিং নয়, বরং চাষাবাদের চিরাচরিত রীতি মেনে চলতেই অধিক আগ্রহ এ দেশের চাষী থেকে সরকার, সকলেই । তবে সত্যিই যদি পশ্চিমের উন্নত দেশগুলির মতো অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ায় চাষ করা হত, তা হলে হয়তো এ দেশে চাষীভাইদের আজও এত দুর্দশায়, দারিদ্র্যে দিন কাটাতে হত না ।
তবে আজকাল ধীরে ধীরে সময় বদলাচ্ছে । মানুষের মানসিকতা বদলাচ্ছে । বিজ্ঞানের উজ্জ্বল উপস্থিতিতে চিন্তাধারার বদলও ঘটছে । তার প্রভাব পড়ছে কৃষিকাজেও । আমাদের দেশে চাষের অন্যতম মূল সমস্যা হল সেচ কাজ । দেশের অনেক রাজ্যেই জলের অপ্রতুলতার কারণে উন্নতমানের সেচের প্রয়োজন হয়, নতুবা বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করতে হয় । ফলে ফলন অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে । কিন্তু যদি এমন হতো, যে চাষের জন্য প্রায় ৯৫ শতাংশ কম জলের প্রয়োজন হত । মাটি প্রায় লাগত না বললেই চলে । তা হলে কিন্তু অনেক অনিশ্চয়তার সমাধান হয়ে যেত সহজেই । চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জুড়ে রয়েছে গবাদি পশুরা । কৃষিকাজে তাদের অবদান অনস্বীকার্য ।
আরও পড়ুন -Student Credit Card – কীভাবে আবেদন করবেন স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড স্কিমে, সরাসরি আবেদনের লিঙ্ক
তাদের সঠিক দেখভাল করা, তাদের খাদ্যের জোগান দেওয়াও কিন্তু কৃষকভাইদের অন্যতম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে । তাই গবাদি পশুর খাদ্য (Cattle food) উৎপাদনে সাড়া ফেলে দেওয়া এক পদ্ধত আবিষ্কার করে তাক লাগালেন দুই পড়ুয়া ।
হাইড্রোফোনিক ফুডার ইউনিট(Hydroponic fooder unit):
ম্প্রতি দুই পড়ুয়া গবেষক বানিয়ে ফেলেছেন মাটি হীন, জল হীন চাষের পদ্ধতি । নয়াদিল্লির TERI School of Advanced Studies-এর এই দুই পড়ুয়ার নাম সৌরদীপ বসাক এবং লভকেশ বালচন্দানী । সম্প্রতি তাঁদের এই আবিষ্কারের জন্য Grand Final of the Efficiency for Access Design Challenge-এ ব্রোঞ্জ পদকও জিতেছেন তারা। তাঁদের আবিষ্কার সৌরশক্তি চালিত হাইড্রোফোনিক ফুডার ইউনিট । যার মাধ্যমে মাটি ছাড়াই সবুজ, সতেজ, পুষ্টিসমৃদ্ধ ঘাস তৈরি হতে পারে ।
পিডব্লউসি-তে কাজ করতে সৌরদীপ । সেই কাজ ছেড়ে দেন তিনি । অন্যদিকে, লভকেশ আগে পড়াশোনা করতেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে । স্ট্রিম পরিবর্তন করে তিনি রি-নিউএবল এনার্জি নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করেন । তাঁর পছন্দের বিষয় ছিল ক্লাইমেট চেঞ্জ ও এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস । এ ভাবেই তাঁরা হাইড্রোফোনিক ফুডার ইউনিট বানিয়ে ফেলেন ।
যন্ত্রের সুবিধা(Benefits):
সাধারণ চাষের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম জল লাগে । মাটির প্রয়োজন হয় না । বীজ থেকে পরিপূর্ণ হতে সময় লাগে মাত্র ৮ দিন । ০.৫ ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে মাসে ।
সৌরদীপ ও লভকেশ বলছেন, শুধু ২০১৯ সালেই আমাদের দেশে ১০ হাজারের বেশি চাষী মারা গিয়েছেন । ফলন না হওয়া, নষ্ট হওয়া, বাজারে বিপুল দেনা, এ গুলিই তার পিছনের কারণ । দেশের নিরিখে দেখতে গেলে ৩২ শতাংশ গবাদি পশুর খাদ্য ভারতে এখনও চাহিদার তুলনায় জোগান কম রয়েছে । ফলে কম খরচে যে কেউ এই পদ্ধতি চাষ করতে পারেন । গবেষকদ্বয় জানাচ্ছেন, তাঁদের তৈরি এই ইউনিট বসাতে খরচ বেশ কম । ৫০ কেজি ফসল উৎপাদন করতে পারে এমন ইউনিট বসাতে খরচ হবে সাড়ে ৭ হাজার ।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Covid case increased: ফের দেশে দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধি, ১ দিনে মৃত্যু ৮১৭ জনের