স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের (Student Credit Card) মাধ্যমে পড়ুয়াদের লোন দেওয়ার জটিলতা কার্যত কাটতে চলেছে। অন্তত রাজ্যের অর্থ দপ্তর ও উচ্চ শিক্ষা দফতর সূত্রে তেমনটাই খবর। মুখ্যসচিবের কড়া হুঁশিয়ারির পর বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলো অবশেষে চুক্তিবদ্ধ হল রাজ্যের সঙ্গে। দু সপ্তাহ আগেই একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক চুক্তিবদ্ধ হয় রাজ্যের সঙ্গে। গত সপ্তাহের শেষের দিকে আরও একটি বেসরকারি ব্যাংক স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লোন দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় রাজ্যের সঙ্গে।
মূলত পড়ুয়াদের আবেদন সব থেকে বেশি ওই দুটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই এসেছে বলে সূত্রের খবর। দুটি বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার পরপরই স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লোন দেওয়ার গতি অনেকটাই বেড়ে গেছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ১০০০ পড়ুয়াকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লোন দেওয়া হয়েছে। যার অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪০ কোটি টাকা।
উচ্চ শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, পুজোর আগে আরও দুটো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক চুক্তিবদ্ধ হতে চলেছে রাজ্যের সঙ্গে। সেক্ষেত্রে পুজোর আগেই আরও দু'হাজার পড়ুয়ার লোন মঞ্জুর হতে চলেছে। অর্থাৎ পুজোর আগেই মোট ৩০০০ পড়ুয়ার লোন মঞ্জুর হয়ে যাবে তেমনটাই আশা করছে উচ্চ শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা। উচ্চ শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর স্টুডেন্ট কার্ডের মাধ্যমে লোন পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই আবেদনের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লক্ষেরও বেশি।
৫০ শতাংশ আবেদনপত্রই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে লোন পাওয়ার জন্য আবেদন কারীরা আবেদন করেছেন। যদিও পুজোর পরে সেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়ে যাবে বলে আশা করছে রাজ্য অর্থ দফতরের আধিকারিকরা। অর্থ দফতর ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের আশা পুজোর পর এই গোটা প্রক্রিয়াটাই গতি পাবে। ইতিমধ্যেই কো-অপারেটিভ ব্যাংক গুলো একাধিক পড়ুয়ার আবেদন বাতিল করে দিয়েছে। সেক্ষেত্রেও যাতে বিবেচনা সঙ্গে সেইসব পড়ুয়ারা আবেদন দেখা হয় সেই বিষয়েও ব্যাঙ্কগুলির কাছে আবেদন করেছে রাজ্য বলেই সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত গত মাসের প্রথম দিকেই মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ব্যাঙ্কগুলোর উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। রাজ্য সরকারের প্রকল্প গুলি দিয়ে সহযোগিতা না করলে অ্যাকাউন্ট তুলে নেওয়ার বার্তাও জেলাগুলিকে দিয়েছিল নবান্ন। যে ব্যাঙ্কগুলি সরকারি প্রকল্পে সহযোগিতা করবে সেই ব্যাঙ্কগুলিতেই অ্যাকাউন্ট রাখার বার্তাও জেলাশাসকের পাঠানো হয়েছিল। সম্প্রতি ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন মুখ্য সচিব।
সব মিলিয়ে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পড়ুয়াদের লোন পাওয়ার জন্য কার্যত আশার আলো দেখছেন উচ্চশিক্ষা দপ্তর ও অর্থ দপ্তরের আধিকারিকরা। এই প্রকল্পের গোড়াতেই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক ও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এবার ক্রমপর্যায় বেসরকারি ব্যাংক ও অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কগুলির চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নিয়ে কার্যত যে জটিলতা কাটছে চলেছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
জেনে নিন আবেদনের শর্ত(Conditions of application):
১) ক্লাস টেন থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা নিতে পারবেন। ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন। তার জন্য কোনও গ্যারেন্টার লাগবে না। সরকার গ্যারেন্টার হবে।
২) দশম শ্রেণি থেকে থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত এবং স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডিপ্লোমা, ডাক্তারি, গবেষণা সবেতেই এই ঋণের জন্য আবেদন জানানো যেতে পারে।
৩) ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়সের উর্ধ্বসীমা ৪০ বছর।
৪) এই টাকায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর, পেশাভিত্তিক পাঠ্যক্রম, ডিপ্লোমা পাঠ্যক্রম, ডক্টরাল এবং পোস্ট ডক্টরাল স্তরে গবেষণার খরচ চালানো যাবে বলে জানিয়েছেন মমতা। দেশে তো বটেই বিদেশের প্রতিষ্ঠানেও এই ক্রেডিট কার্ডের সাহায্যে পড়াশোনা করা যাবে।
৫) রাজ্যের বাসিন্দা, বা ১০ বছর বাস করেছেন এমন পড়ুয়ারাই এই ঋণ পেতে পারেন।
৬) এই ঋণের মেয়াদ থাকবে ১৫ বছর। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে। ছাত্রছাত্রীর ঋণের ক্ষেত্রে কোনও গ্যারেন্টার লাগবে না। গ্যারান্টার হবে সরকারই |
৭) অনেকটা ব্যাঙ্ক ঋণের ধাঁচেই চাকরি পাওয়ার এক বছর পরে এই টাকা শোধ দেওয়া শুরু করতে পারবে ছাত্র-ছাত্রীরা। ঋণ নেওয়ার ১৫ বছর পর সফ্ট লোন হিসাবে ধার শোধ করতে হবে বলে জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।