কার্তিক দাস, পূর্ব বর্ধমান জেলার বাঘনাপাড়া গ্রামের একজন ক্ষুদ্র কৃষক তথা সমাজসেবী। স্ত্রী ও এক কন্যা নিয়ে কার্তিক বাবুর সংসার। পেশায় কৃষিজীবি হলেও এলাকার কৃষকদের উন্নতিসাধনের জন্য প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষকদের নিয়ে গঠন করেছেন "বাঘনাপাড়া অ্যাগ্রো ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানি লিমিটেড" (FPO)। কার্তিক বাবু এই FPO-র চেয়ারম্যান।
FPO-টি মূলতঃ কৃষকদের ট্রেনিং, কৃষি উপকরণ সরাবরাহ, মাটি পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তরের সাথে সমন্বয়সাধন-এর মাধ্যমে সদস্যদের কৃষি পরিষেবা দেওয়ার কাজে নিযুক্ত। কিন্তু এই এলাকার একটি বড় সমস্যা ছিল, ফসলের কম উৎপাদন এবং মাটি পরীক্ষার বিষয়টি। কৃষকদের কাছে মাটি পরীক্ষার সুযোগ ছিল খুবই সীমিত। কার্তিক বাবুর উদ্যোগে কিছু সংস্থার সাহায্যে মাটি পরীক্ষা হলেও তা ছিল যথেষ্ট ব্যয়বহুল ও ফলাফল আসতেও দীর্ঘদিন সময় লেগে যেত। এরই মধ্যে একদিন কার্তিক বাবুর সাথে পরিচয় হয় রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি বিজয় কুমার সাহার সাথে, আলোচনার সময় কার্তিক বাবু তাঁদের সমস্যার কথা জানান।
এরপর কয়েকদিনের মধ্যেই রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে IFFCO-র সহায়তায় এলাকায় মাটি পরীক্ষা করা হয়। প্রায় দুই শতাধিক নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং ৩০-টি নমুনার রিপোর্ট সাথে সাথেই কৃষকদের দিয়ে দেওয়া হয়। বাকি রিপোর্টগুলি এক মাসের মধ্যেই কৃষকদের হাতে দেওয়া হয়। রিপোর্ট থেকে এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের এক্সপার্ট -এর সাথে আলোচনা করে কৃষকরা জানতে পারেন অত্যাধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগের জন্য মাটির উর্বরতা শক্তি অনেকটা কমে গেছে।
এরপর বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুসারে কার্তিক বাবু জমিতে সার প্রয়োগের পরিমাণের পরিবর্তন ঘটান, আগে তাঁর ২-একর জমিতে তিনি সার প্রয়োগ করতেন ১০:২৬:২৬ হারে N:P:K ১ কুইন্টাল ও ইউরিয়া ৮০ কে.জি., যার বাজার মূল্য ছিল ২৮০০/- টাকা। কিন্তু মাটি পরীক্ষার পরে তাঁর সার প্রয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩০% কমে গেছে এবং খরচ হয়েছে ১৬২৪/- টাকা। ধানের ফলন আগে যেখানে হতো ২-একর জমিতে ৫-টন ৪-কুইন্টাল, বর্তমানে ফলন বেড়ে হয়েছে ২-একর জমিতে ৭-টন ২-কুইন্টাল। মাটি পরীক্ষার ফলে চাষের খরচ কমেছে ১১৭৬/- টাকা , অন্যদিকে উৎপাদন বাড়ার ফলে বাড়তি আয় হয়েছে প্রায় ৩১৫০০/- টাকা। পাশাপাশি পুনরুদ্ধার হয়েছে জমির স্বাস্থ্য। কার্তিকবাবুর পাশাপাশি আরো প্রায় ৩৫-জন কৃষক মাটি পরীক্ষার পর কৃষি পদ্ধতি পরিবর্তন করে গড়ে প্রায় ১৬০০০/- টাকা বাড়তি মুনাফা ঘরে তুলেছে। পাশাপাশি এই এলাকার কৃষকরা আজ রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের টোল ফ্রি নম্বরে (১৮০০ ৪১৯ ৮৮০০) ফোন করে তাঁদের যে কোনো কৃষির সমস্যা এক্সপার্ট-দের সাথে আলোচনা করে সমাধান করছেন। কার্তিক বাবুর কথায় "রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন আজ সত্যিই গ্রাম বাংলার হাজার হাজার কৃষক ভাইদের প্রয়োজনের বন্ধু"।
স্বপ্নম সেন
তথ্যসূত্র – প্রদীপ পাণ্ডা (কর্মকর্তা, রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন)
Related link - https://bengali.krishijagran.com/news/reliance-foundation-is-providing-advice-to-farmers-about-their-crops/
https://bengali.krishijagran.com/news/audio-conference-with-mango-farmers-in-malda-district-organized-by-reliance-foundation-and-ratua-agricultural-science-center/