রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের (Students Credit Card) মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ পাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই যার পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে। ঋণ নিয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি পড়ুয়া। বিশেষ করে সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষার জন্য ঋণ নিতে পারছেন। ফলে অর্থের অভাবে কারও পড়াশোনা আটকাচ্ছে না। নবান্ন সূত্রে খবর, চলতি মাসের এক তারিখ পর্যন্ত ব্যাংক মোট ১ হাজার ৬৪৬ জন পড়ুয়াকে ঋণ দিয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকগুলি ঋণ দিয়েছে ৫৪ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা |
ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের ঘোষণা করেন তিনি। এই প্রকল্পে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি পরিশোধের সময় পাবেন পড়ুয়ারা। রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের অর্থের অভাবে যাতে পড়াশোনা থামিয়ে দিতে না হয়, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্প চালু করেন। যার সুবিধা বাস্তবিকই পৌঁছে গিয়েছে সমাজের নিম্নবিত্ত পড়ুয়াদের কাছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের আলমপুরের অভীক দে’র বাবা বেসরকারি চাকুরে। মেধা থাকলেও বিটেক করার পথে বাধা হয়ে উঠেছিল পরিবারের সামান্য আয়। এমন সময়ই সে জানতে পারে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অভীক জানিয়েছে, “মুখ্যমন্ত্রী যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা আমার মতো অন্যান্য পড়ুয়াকে নির্ভাবনায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে।” মিজানুর রহমান মল্লিকের বাবা পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া-২ ব্লকের গ্রামের এক প্রান্তিক চাষি। মাসে উপার্জন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। মিজানুর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিই পাস করে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বাধা সেই অর্থ। তাঁর স্বপ্ন সফল করছে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড।
আরও পড়ুন -Student credit card 2021: সুখবর! পুজোর আগেই হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীর অ্যাকাউন্টে ঢুকবে টাকা
প্রীতম রায়ের এমবিবিএস পড়ার খরচও জোগাচ্ছে এই প্রকল্পই। খণ্ডঘোষ ব্লকের প্রান্তিক চাষির ছেলে প্রীতমের মাসিক আয় আট হাজার টাকা। তাঁর পড়ার ব্যয়ভার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। প্রীতম জানিয়েছে, “আমার স্বপ্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে আমার এলাকার মানুষদের সাহায্য করব। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের ঋণই আমার মতো প্রান্তিক চাষি পরিবারের সন্তানের এমবিবিএস পাশ করে ডাক্তার হওয়াকে সম্ভব করতে পারে।”
ছোট দোকান চালান আলিপুরদুয়ারের বীরপাড়া চা বাগানের সারগাপল্লির মৃণাল প্রধানের বাবা। তাঁর প্রযুক্তি শিক্ষার স্বপ্ন সফল হচ্ছে এই ঋণের মাধ্যমেই। নার্সিং ইনস্টিটিউটের ছাত্রী ফালাকাটার মৌসুমি চক্রবর্তী ঋণ নিয়েই পড়াশোনা চালাচ্ছেন। বাঁকুড়ার শুভাশিস সরকার ঋণ নিয়ে ভরতি হয়েছেন বি টেকে। এমন উদাহরণ রাজ্যের সর্বত্র। সব জেলাতেই। অর্থের অভাবে পড়াশেনা বন্ধ হচ্ছে না স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের দৌলতে।
কিভাবে অনলাইনে আবেদন করবেন?
১) রাজ্য সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://wbscc.wb.gov.in/ তে যান।
২) ‘Student Registration’-এ ক্লিক করুন।
৩) একটি নয়া পেজ খুলে যাবে। সেখানে বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে।
৪) সেখানে নিজের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেল আইডি-সহ বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে। আধার কার্ড থাকা বা না থাকার ভিত্তিতে সেই রেজিস্ট্রেশন ফর্ম ভিন্ন হবে। পাসওয়ার্ডও দিতে হবে। তারপর ‘Register’-এ ক্লিক করতে হবে।
৫) যে ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে, তাতে ওটিপি যাবে। সেই ওটিপি লিখে 'Verify' করতে হবে।
৬) রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে স্ক্রিনে একটি 'Registration ID' আসবে। ফোনেও লগইন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাঠানো হবে।
৭) wbscc.wb.gov.in/ -তে গিয়ে Student Login-তে ক্লিক করুন। নয়া একটি পেজ খুলে যাবে।
৮) সেই রেজিস্ট্রেশন আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে।
৯) 'Dashboard' খুলে যাবে। সেখানে 'Apply Now'-তে ক্লিক করুন।
১০) একটি নয়া পেজ খুলে যাবে। সেখানে বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে। আধার কার্ড থাকা বা না থাকার ভিত্তিতে সেই রেজিস্ট্রেশন ফর্ম ভিন্ন হবে। পাশাপাশি ‘Download Undertaking Documents’ থাকবে। পড়ুয়াদের প্যান কার্ড না থাকলে ‘Download Undertaking Documents’ ডাউনলোড করতে হবে। ঠিকানা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ যাবতীয় তথ্য দেওয়ার পর ‘Save & Continue’ করুন।
১১) তারপর একটি নয়া পেজ খুলে যাবে। আধার কার্ড থাকা বা না থাকার ভিত্তিতে সেই ফর্ম ভিন্ন হবে। আধার কার্ড থাকলে সেখানে আবেদনকারীর ছবি, সহ-আবেদনকারীর ছবি, আবেদনকারীর স্বাক্ষর, সহ-আবেদনকারী বা অভিভাবকের স্বাক্ষর, আধার কার্ড, সহ-আবেদনকারীর ঠিকানার প্রমাণপত্র (ভোটার আইডি), আবেদনকারীর ভরতির রসিদের ছবি, প্যান কার্ড, সহ-আবেদনকারীর প্যান কার্ড, আবেদনকারীর কোর্স ফি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করতে হবে।
১২) যাবতীয় নথি আপলোডের পর ‘Save & Continue’ করুন।
১৩) একটি নয়া পেজ খুলে যাবে। সেখানে যাবতীয় নথি এবং তথ্য মিলিয়ে দেখে নিন। তারপর 'Submit Application' ক্লিক করুন। কোনও তথ্য বা নথি পরিবর্তন করতে হলে 'Edit Loan application'-এ ক্লিক করতে হবে। একবার সাবমিট হয়ে গেলে তথ্য পালটানো যাবে না।
১৪) তারপর 'Dashboard'-এ দেখাবে 'Application Submitted to HOI'। তার অর্থ হল যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছেই আবেদনপত্র চলে গিয়েছে।
১৫) স্কুলের তরফে আবেদনপত্র পাঠানো হবে উচ্চ শিক্ষা দফতরকে। তখন 'Dashboard'-এ দেখাবে 'Application forwarded by to HOI to HED'।
আরও পড়ুন -Sahitya akademi recruitment: সাহিত্য একাডেমী দপ্তরে ক্লার্ক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত