এই নতুন বছরে আপনি এবার ভাবতে শুরু করুন কিভাবে সারা বছর আপনি আপন ছন্দে কাটাবেন, কী করে বজায় রাখবেন নিজের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা। আমি এই বিষয়ে আপনাদেরকে কিছু অভ্যাসের কথা ব্যক্ত করতে চাই, যা আপনাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যরক্ষায় সাহায্য করবে।
জীবনকে নতুন বছরে সুস্থ ভাবে কাটানোর জন্য রইলো ১০ টি টিপস
১) পর্যাপ্ত ঘুম - মনে রাখতে হবে আমাদের সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম, কারণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে আমাদের বিশেষ কিছু শারীরিক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়-যেমন দুর্বল অনাক্রম্যতা, ওজন বৃদ্ধি, এবং কখনো কখনো তা আমাদের মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে প্রাত্যহিকভাবে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা একটি পরিপূর্ণ ঘুমের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, এবং নিজের ঘুমের সাথে কখনোই আপস করা উচিত নয়।
২) নিয়মিত শরীর চর্চা - আমরা সকলেই জানি, নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতখানি উপকারী, কিন্তু জানা সত্বেও আমাদের মধ্যে খুব অনিয়মিত জীবনযাপনের একটি ঝোঁক রয়েছে। তাই সুস্থ থাকতে হলে আমাদের প্রত্যহিকভাবে নিজের জীবনের সাথে দিনের শুরুতে কিছু না কিছু শরীরচর্চার বিষয়কে যুক্ত রাখতে হবে যেমন- যোগা, হাঁটা, জগিং, সাঁতার, বা ওজন নিয়ে ব্যায়াম। নিয়মিত শারীরিক কসরত আপনাকে দিনে দিনে অনেক বেশি ফিট ও ভালো করে তুলবে।আপনার স্বাস্থ্যকে যেকোনো রকমের কাজের জন্য উপযোগী করে তুলতে সাহায্য করবে।
৩) ধ্যান করুন - ধ্যান আমাদের সুস্থ একটি অভ্যাসের মধ্যে পড়ে, এবং আমাদের সকলেরই কমবেশি ধ্যান করা উচিত শরীর অ মঙকে একাগ্র রাখার জন্য। ধ্যান এমন একটি উন্নত মানের যোগা যা আমাদের শরীর, মন অ আত্মাকে এক সূত্রে গ্রথিত করে থাকে। প্রাত্যহিক টানাপড়েনের জীবনে সাময়িক ধ্যান কিন্তু আপনার শরীরকে অনেক বেশি আরাম প্রদান করতে সক্ষম। এতে আপনার মধ্যে উম্মুক্তভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়ে থাকে।
৪) প্রতিদিন সকালে জল পান করুন - প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস করে জল খেলে তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী হতে পারে। জল হজমশক্তি বাড়ায়। এই সকালে নিয়মিত জলপানের অভ্যাস থাকলে তা আপনার ওজন বৃদ্ধির ব্যাপারে বাধার সৃষ্টি করবে এবং সারাটাদিন আপনাকে খুব কর্মসক্ষম ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করবে, তাই নিয়ম করে সকালে চা কিংবা কফি পানের আগে একগ্লাস জল পান করতে যেন ভুল করবেন না।
আরও পড়ুন পেয়ারা ও পেয়ারা পাতার উপকারীতা
৫) প্রাতরাশ নিতে ভুলবেন না - প্রাতরাশ হলো দিনের সবথেকে গুরুত্বপুর্ণ খাবার যা খেতে একেবারেই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। একটি সঠিক অ উপাদেয় মাত্রার প্রাতরাশ আপনাকে তরতাজা, সক্ষম ও আপনার খিদেকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।কিন্তু তা বলে যা তা খেলে হবে না, আপনাকে ওটস মিল, ডালিয়া, ডিম, স্যান্ডউইচ, অথবা প্রোটিন ড্রিঙ্ক গ্রহণ করতে হবে প্রতিদিন সকালে।
৬) প্যাকেট জাত খাদ্যের গ্রহণ বর্জন করুন - আপনাদের প্যাকেটজাত খাবার বছরের প্রথম থেকেই হয় কমিয়ে দেওয়া উচিত আর নয়তো সম্পূর্ণ বর্জন করা উচিৎ, কারণ এই সব খাবারের মধ্যে প্রিসারভেটিভ এর কুপ্রভাব থাকে এবং এই সব খাদ্যের কোনোরকম পূষ্টিমূল্য নেই। তাছাড়া প্যাকেটজাত খাবারে প্রচুর ওজন বৃদ্ধি পায় এবং এগুলি সমগ্রটাই আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করে থাকে।
৭) খাদ্যতালিকায় তন্তুসমৃদ্ধ খাদ্য রাখা উচিত - আমাদের জীবনে তন্তুজাত খাদ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্যতন্তু আমাদের হজমে সহায়তা করে, যা আমাদের ওজন হ্রাস ও ক্ষুদ্রান্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে এবং অবশ্যই মধুমেহ রোগ নিয়ন্ত্রণ করে। যাই হোক আপনাদের খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ফল ও সবুজ সবজি অবশ্যই রাখা উচিত।
৮) চিনির ব্যবহার কম করুন - আমাদের খাদ্যতালিকায় প্রসেসড সুগার কম করা উচিত, কারণ এই চিনি আমাদের স্বাস্থ্যর পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক, কারণ এই রিফাইন্ড সুগার বা চিনি আমাদের শারীরিক ওজন বৃদ্ধি করে এবং ব্লাড সুগার লেভেল অনেক বৃদ্ধি করে। এর পরিবর্তে আপনারা অনেক স্বাস্থ্যকর পরিবর্ত খাদ্য যেমন মধু, গুড়, ম্যাপল সিরাপ অথবা নারকেলের চিনি ব্যবহার করতে পারেন।
৯) একটু স্ট্রেচিং করার চেষ্টা করুণ - রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে, আপনাদের প্রত্যেকেরই একটু স্ট্রেচিং এর অভ্যাস থাকা ভালো কারণ এই স্ত্রেচিং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নেবে। স্ট্রেচিং এর অভ্যাস আপনার পেশীকে শক্তপোক্ত রাখতে সাহায্য করবে। এছাড়া স্ট্রেচিং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে এবং কলার ভাঙ্গন রোধ করে।
১০) একটি স্বাস্থ্যকর ও সঠিক দৈহিক ওজন রাখার চেষ্টা করুন - আপনি যদি আপনার দৈহিক ওজন ঠিকঠাক রাখেন তাহলে এটি আপনাকে অনেক সুবিধা দেবে। সঠিক দৈহিক ওজন আপনাকে উচ্চ রক্তচাপ, মধুমেহ, হৃদ রোগের হাত থেকে রক্ষা করবে। এই ওজন সঠিক রাখার জন্য আপনাকে পরিমিত খাদ্যতালিকা ও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং সাথে রাখতে হবে কিছু প্রাত্যহিক শরীর চর্চা।
- প্রদীপ পাল (pradip@krishijagran.com)