ফণীমনসা এমন একটি গাছ যার কান্ড পাতার মত হয়, কিন্তু এই কান্ড অত্যন্ত রসালো হয়ে থাকে। একে মরুভূমির গাছও বলা হয়ে থাকে, কারণ এই গাছ সেই সমস্ত জায়গায় জন্মায় যেখানে জলের প্রচন্ড অভাব, তাই ফণীমনসাকে মরুপ্রায় অঞ্চলের উদ্ভিদও বলা হয়ে থাকে। এই গাছের পর্ণকান্ডে কাঁটা থাকে কারন এদের পাতাগুলিই কাঁটায় পরিণত হয়ে থাকে বাষ্পমোচন রোধের জন্য।
এই গাছের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এই গাছ খুব ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে এবং কোনোরকম ক্ষতি না করলে এটি বহু বছর ধরে জীবিত থাকে। যদি প্রজাতি হিসেবে ধরা হয় তো সারা বিশ্বে এই গাছের ২৫ রকমের প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। এই গাছ প্রধানতঃ মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকার শুকনো বানজার ভূমিতে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়।
ফণীমনসাতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি খনিজ মৌল থাকে। ফণীমনসাতে ক্যালোরি খুব কম থাকে, বেশীর ভাগ অংশতে থাকে জলীয় রস ও তরূক্ষীর, এতে ফ্যাট বা কোলেস্টেরল খুব কম পরিমাণে থাকে, তাই এই গাছে প্রচুর স্বাস্থ্যকর পদার্থ থাকে, এর ফল শুকনো করে হোক বা পিষে হোক গবাদিপশুদের খাওয়ানো যায়। তাহলে আসুন দেখে নি ফণীমনসা এর কী কী গুণাবলী বা লোকসান রয়েছে।
হাড়ের ক্ষেত্রে উপকারি
ফণীমনসা গাছ হাড়ের জন্য খুবই উপকারি। এতে ক্যালসিয়াম ছাড়াও আরও অনেক উপকারি পদার্থও থাকে। এই সমস্ত পদার্থ হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পুনরায় সারিয়ে তুলতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ত্বকের জন্য উপকারি
ফণীমনসার গাছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোকেমিকেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ থাকে। এই বিশেষ বিষয়গুলি বয়স্ক মানুষের কাছে খুব উপকারি, এটি বয়স্ক মানুষের কাছে রক্ষাকবচ। এছাড়া মানুষের ত্বকে সেলুলার এফেক্ট থেকে যায় যা কিনা আপনার ত্বককে খারাপ করে দেয়, ফণীমনসার রস সেই খারাপ ত্বকের সমস্যা মেটাতে সাহায্য করে।
ফোলাভাব কমায়
ফণীমনসা-এর পাতা থেকে নির্গত রস শরীরের ফোলাভাব কমানোর একটি বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে, আপনার গাঁটের ফোলা, জয়েন্ট পেইন, মাংসপেশী ফোলা কমিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে এই গাছের জুড়ি মেলা ভার। এই গাছের রস আপনার ফোলা জায়গায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ব্যথার উপশম হয়ে থাকে এবং ফোলাভাবও কমে যায়।
পরিপাকক্রিয়াতে সহায়ক
ফণীমনসায় প্রচুর পরিমাণে তন্তু থাকে যা কিনা মানুষের পরিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে। আমরা জানি যে আমাদের খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে তন্তু জাতীয় খাদ্য রাখা উচিত, আর যেহেতু ফণীমনসাতে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ তন্তু থাকে তাই এই উদ্ভিদ খাদ্যপরিপাকে খুব সহায়তা করে।
ওজন কমাতে সহায়তা করে
এই ফণীমনসাতে ক্ষুধা বাড়ানোর হর্মোন থাকে। যেহেতু ফণীমনসায় ফ্যাট ও কোলেস্টেরলের মাত্রা একেবারেই থাকে না এবং ভিতামিন বি-৬, থায়ামিন, রাইবোফ্লবিন-এর উপ্সথিতি খাদ্যপরিপাকের কাজে সাহায্য করে, অর্থাৎ ফণীমনসার, দেহের বিপাক ক্রিয়ার হার বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
মধুমেহ রোগের নিবারণ করে
ফণীমনসার পর্ণকান্ডের থেকে উৎপন্ন রস মানব শরীরে স্থিত গ্লুকোজ ভেঙ্গে ফেলার ক্ষমতা রাখে,তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা খুবই লাভদায়ক, এই রস গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধির হার অনেকটাই কমিয়ে দেয়, ফলে মধুমেহ রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অনিদ্রা রোগের উপশমে সাহায্য করে
ফণীমনসাতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দূর করতে সাহায্য করে এবং এই রোগগ্রস্ত মানুষের শরীরে সেরাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে মানুষের নিদ্রা বৃদ্ধি করে এবং মানুষ-কে চিন্তামুক্ত থাকতে সাহায্য করে।
প্রদীপ পাল(pradip@krishijagran.com)