বকম বকম পায়রা। শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া পায়রা অথবা কবুতর গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। মানুষ শখ করেই এই সৌন্দর্য্যের প্রতীক পোষে, নিজের সৌখিনতা বজায় রাখার জন্য। পায়রা ইতিহাসে বার্তাবাহক হিসাবেও পরিচিত। রাজা রাজড়ারা একসময় এই পাখি পুষতেন, দূর-দূরান্তে বার্তা পাঠানোর জন্য, অথবা বার্তা পাওয়ার জন্য। বাংলার জমিদারাও একসময় পায়রা পোষায় আসক্ত ছিলেন। সেই সময় পায়রা ওড়ানোর প্রতিযোগিতায় চলতো পাল্লা দিয়ে। যেই পায়রার মালিক জিততেন, তিনি সম্মানিত হতেন অথবা তাঁর পায়রা পুরস্কৃত হতো।
যুগের পর যুগ ধরে পায়রা পোষা নিয়ে ধনী ব্যক্তিদের রয়েছে সৌখিনতা। বর্তমানে বাণিজ্যিক ভাবে পায়রা পালন করা হচ্ছে। কারণ উন্নত জাতের পায়রা দেশে ও বিদেশে বহু দামে বিক্রি করা সম্ভব। দামি জাতের পায়রার দাম বাজারে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্তও পৌঁছাতে পারে।
জীবনকাল ও বংশবৃদ্ধি (Breeding):
প্রতি জোড়া পায়রা অনুযায়ী একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী কবুতর থাকে। এরা ২০-৩০ বছর পর্যন্তও জীবিত থাকে। স্ত্রী পায়রা ডিম পাড়ে এবং পুরুষ ও স্ত্রী উভয় পায়রাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চার জন্ম দেয়। প্রায় ১৮ দিন ডিমে তা দেওয়ার পর ডিম থেকে বাচ্চা জন্মায়। বছরে এক জোড়া পায়রা থেকে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায়।
অতি সহজেই পোষ মানানো যায় বলে এবং রোগ-ব্যাধি অনেকাংশে কম হওয়ায় পায়রা পালন খুব কম বিনিয়োগেই সম্ভব। পায়রার বৃদ্ধিও খুব দ্রুত ঘটে। জন্মানোর মাত্র তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে পায়রা বাজারে বিক্রি করার উপযোগী হয়ে ওঠে। পায়রা খুব কম পরিসরের মধ্যেই পালন করা যায়, এবং এই খাঁচা বানানোতেও তেমন কোনও খরচ নেই।
পায়রা মুক্ত ভাবে এবং খাঁচায় দুই ভাবেই পালন করা যায়। বাঁশ, কাঠ অথবা টিন দিয়েও পায়রার খাঁচা তৈরী করা যায়। পায়রার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৫-১৮ দিন সময় লাগে। পায়রার ওজন হয় মোটামুটি ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের মধ্যে। পায়রার দেহের তাপমাত্রা একটু বেশিই হয়। ৩৮.৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পায়রার দেহের তাপমাত্রা হতে পারে।
পায়রা বিভিন্ন জাতের হয়। গোলা, ময়ূরপঙ্খী, সিরাজী, গ্রীবাজ, চন্দন পরবর্তী দেশীয় জাতের পায়রার চাহিদা বাজারে ভালোই। তবে বর্তমানে বেশ কিছু বিদেশী জাতের পায়রারও আমদানি ঘটেছে আমাদের দেশে।
পায়রার উপযুক্ত খাদ্য (Proper Food):
একটি পায়রা প্রত্যহ ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম খাবার খেতে পারে। তবে নজর রাখতে হবে, পায়রার খাদ্য যেন সুষম হয়, অর্থাৎ সেই খাদ্যে যেন পরিমাণ মতো আমিষ, চর্বি, শর্করা, ভিটামিন এবং তার সাথে খনিজের উপাদান থাকে।
প্রধানত শস্যদানা খেয়ে পায়রা বেঁচে থাকে। পায়রার খাওয়া শস্যদানার মধ্যে পড়ে, গম, যব, মটর, খেসারি, চাল প্রভৃতি।
আরও পড়ুন: Pomegranate Farming procedure in Terrace: ছাদে বেদানা চাষের সহজতম পদ্ধতি
পায়রার রোগ-বালাই (Disease management):
পায়রার রোগ ব্যাধি সাধারণত খুবই কম। তবে রানীক্ষেত ও পক্সের মতন অসুখ পায়রার কখনো কখনো দেখা যেতে পারে। পরজীবী আক্রমণেও পায়রা অনেকসময় আক্রান্ত হয়। তাই পায়রাকে বাঁচানোর জন্য সময়মতো টিকাদান করা উচিত। নিয়মিত সুষম খাদ্য খেলে পায়রা ভালো থাকবে। পায়রার বাসায় যেন পর্যাপ্ত পরিমানে আলো বাতাস খেলা কোনো তাতে নজর রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য এবং পরিষ্কার বাসা পেলে পায়রার বেড়ে ওঠায় কোনও বাধা থাকে না।
উন্নত জাতের পায়রা পালন করে বহু মানুষ বর্তমানে ভাগ্য ফেরাচ্ছেন। পায়রা বিক্রির বাজার দিনকে দিন বাড়তে থাকায়, পায়রার ব্যবসায়িক মূল্যও বর্তমানে প্রচুর। শান্তির দূত পালন করে মানুষের সম্পদশালী হয়ে ওঠা আজ কোনও বিষয়ই নয়।
আরও পড়ুন: Poultry Farming Process: মুরগি পালন করে হয়ে উঠুন লাভবান