বিজ্ঞান মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট আবিষ্কার, আর সেই বিজ্ঞানের হাত ধরেই এসেছে রাসায়নিকের ব্যবহার। ক্রমে ক্রমে বাড়তে লাগলো এই রাসায়নিকের ব্যবহার, কতকটা অপরিমিত ভাবে। যে মানুষ বিজ্ঞানের আবিষ্কর্তা, সেই নিজের অজান্তে শুরু করেছে প্রাকৃতিক বিনষ্টিকরণ। প্রকৃতি তার ভারসাম্যতা হারিয়েছে মানুষের এই যথেচ্ছাচারে। আজ থেকে বিশ বছর আগেও গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে ছিলো প্রাণের ছোঁয়া। সকালে স্নিদ্ধ, মৃদুমন্দ বাতাস বইতো, সেই বাতাসে বয়ে আসতো সদ্য পরিপক্ক সোনালী ধানের সুবাস, পায়ের তলায় থাকতো শিশির ভেজা ঘাস, ফুলে ফুলে খেলে বেড়াতো প্রজাপতি-মৌমাছিরা একটু পরাগ সংগ্রহের আশায়। ধানের জমিতে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি কেঁচো জমির মাটিকে উথাল-পাথাল করে দিতো, জলাভূমিতে জন্মাত কলমি, শুশনি, কুলেখাড়ার গাছ। কাঁকড়ারা নরম মাটিতে তাদের ধারালো দাঁরা বের করে রাখতো শিকারের আশায়। আলের ধারে গর্তে শামুক মুখ লুকিয়ে রাখতো, আরও কত কী দেখা যেত। এই টুকরো টুকরো ঘটনাগুলিই ছিলো গ্রাম্যপ্রকৃতির চেনা ছবি, কিন্তু আজ সবই ইতিহাস। মানুষের চক্রান্তে প্রকৃতি আজ সত্যিই দিশেহারা। প্রতিনিয়ত আকাশে, বাতাসে, মাটিতে, জলে মিশছে রাসায়নিক বিষ, তাই আজ আর উড়তে দেখা যায় না প্রজাপতি ও মৌমাছিদের। আলের ধারে কোনো শামুক আজ মুখ লুকিয়ে থাকে না, দেখা নেই নরম মাটির সেই কাঁকড়াদের, আজ আর মাথা তুলে দাঁড়ায় না কলমি, শুশনি, কুলেখারা-রা। আসে না সদ্যজাত পাকা ধানের গা ছুয়ে আসা সুবাসিত বাতাস। প্রকৃতি আজ নিঃস্ব, রিক্ত, তাঁর সৃজন ক্ষমতা হারিয়ে গেছে মানুষের অনাচারে। যা গেছে তা যাক, নতুন করে আর হারাতে চাই না, তাই ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে একটি সুস্থ পরিবেশ উপহার দিতে হলে মানুষকে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।
- প্রদীপ পাল