মাছচাষিদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। হলদিয়া ব্লক মৎস্য দপ্তরের সহায়তায় সাফল্যের সাথে লুপ্ত প্রজাতির মাছের চাষ হচ্ছে, যেমন পাবদা মাছের বাণিজ্যিক চাষ সম্ভব হয়েছে। এছাড়া কৈ, মাগুর, শিঙি, টেংরা, চিতল, পাঙ্গাস মাছেরও চাষ হচ্ছে। মাছ চাষিদের (Fish Farmer) উৎসাহিত করতে কৈ মাছের দুটি প্রদর্শনী ক্ষেত্র স্থাপন করা হয়েছে হলদিয়া ব্লকে। তাছাড়া মনিপুরের রাজ্য মাছ “পেংবা” হারিয়ে যাওয়া মাছের সফল বাণিজ্যিক চাষ মাছ হয়েছে হলদিয়ায়। চাষিদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা শিবির করে এই সব মাছের পুনরুদ্ধারের বিষয়ে বলা হচ্ছে মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে।
মাগুর (Magur Fish), কৈ প্রভৃতি মাছের কৃত্রিম প্রজনন শিখছে মাছ চাষিরা। ফলে নিজেরাই এই সব মাছের বীজ তৈরি করে নিচ্ছে। এই সব মাছের রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন জলাভূমি সংরক্ষন। জলাভূমি সংরক্ষনে সার্বিক প্রচার করা হচ্ছে মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে। বিপন্ন প্রজাতির মাছ, কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্ষা করার জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সাফল্য লাভ করেছে। এ প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে গবেষকরা বেশ কয়েকটি বিপন্ন প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন। নতুন উৎপাদিত প্রযুক্তির মাধ্যমে বাটা, সরপুঁটি, শোল, মাগুর, পাবদা, কৈ, শিং প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষের কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি তেলাপিয়া ও সরপুঁটি মাছের উন্নত প্রজাতি উদ্ভাবনও করা হয়েছে। এলাকাভিত্তিক এই মাছগুলির উত্পাদন বাড়াতে রাজ্যের প্রতি জেলার খাল বিল ও চুনোপুঁটি মেলার আয়োজনের মাধ্যমে এইসব মাছের চারা জলাশয়গুলিতে ছাড়া হচ্ছে।
বিপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে পাবদা মাছ। ত্রিপুরার স্টেট ফিস হল পাবদা। সবার কাছেই পাবদা অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু মাছ। কাঁটা কম থাকায় ছোটদের কাছেও মাছটি প্রিয়। তবে হলদিয়া ব্লকের মাছচাষিরা পুকুরে পাবদা মাছের সফল চাষ করছেন। দেখা দিয়েছে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ। পাবদা মাছের চাহিদা স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের সর্বত্রই রয়েছে।
তবে মৎস্যভুক পাবদা মাছের বাচ্চা বাঁচানোর কৌশলই হল পাবদা চাষের অন্যতম প্রযুক্তি জ্ঞান। চাষি পর্যায়ে এর স্বার্থক রূপায়ন হয়েছে হলদিয়া ব্লকে। মাটির কলসি পুকুরের তলদেশে বসিয়ে রেখে বাঁচানো যায় পাবদা মাছের বাচ্চা। এর পর অন্যান্য মাছের মতোই সঠিক পরিচর্যা নিলেই পাবদা চাষের মাধ্যমে অধিক লাভের মুখ দেখবে মাছ চাষিরা।
পাবদা আসলে নদীর মাছ। কিন্তু বর্ষার সময় যে সমস্ত নদীর সঙ্গে বড় বড় জলাশয়ের যোগাযোগ রয়েছে সেখানে এসেও পাবদা মাছ ঠাঁই নেয়। আমাদের রাজ্যে কোনও কোনও বিলে ও বড় বড় জলাশয়ে এই মাছ পাওয়া যায়।
পাবদা মাছ হচ্ছে মত্স্যভুক মাছ। এরা খায় ছোট চিংড়ি, শামুক, বিভিন্ন জলজ পোকা।
প্রথমে অন্যান্য মাছের ডিম পোনা থেকে ধানি করার জন্য যে পদ্ধতিতে আঁতুড় পুকুর তৈরি করা হয়, এখানেও সেই পদ্ধতিতে করা হয়। দেখা গেছে ১৫ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে ডিম পোনা থেকে ধানিপোনায় রূপান্তরিত হয়। লালনের সময় পাবদার ধানি পোনা আঁতুড় পুকুরে উত্পাদিত জলজ প্রাণীকণা খেয়ে বড় হয়। ৩৫ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ধানি চারা পোনায় রূপান্তরিত হয়। এই সময়ই মজুত পুকুরে স্থানান্তরিত করা হয়।পাবদা চাষের জন্য প্রথমেই পোনা মাছ চাষের পদ্ধতি অনুযায়ী পুকুর তৈরি করতে হবে। প্রতি বিঘা পুকুরে ২২৫ থেকে ২৫০ কিলোগ্রাম গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। ৩ – ৪ দিনের মধ্যেই খাদ্যকণা উত্পন্ন হলে পাবদার চারাপোনা পুকুরে ছাড়তে হয়।
আরও পড়ুন - হাঁস-মুরগীর পরিবর্তে কোয়েল পালনে বাড়ছে কৃষকদের আগ্রহ
পাবদা মাছের চাষে একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল মাটির কলসির ব্যবহার। ডেসিম্যালে ৫-৬টি মাটির কলসি পুকুরে ফেলে রাখলে মৎস্যভুক পাবদার ছোট বাচ্চা বাঁচানো সম্ভব। এতে মাছের মৃত্যু হার অনেক কম হয়। এটি একটি বাস্তবিক প্রয়োগ পদ্ধতি যা অবলম্বন করে চাষিরা হাতে নাতে ফল পাচ্ছেন।
পাবদা মাছের মিশ্রচাষ অধিক লাভজনক। তবে খেয়াল রাখতে হবে সাইপ্রিনাস ও মৃগেল মাছ বাদ দিয়ে অন্য পোনা মাছের সঙ্গে পাবদা মাছ পুকুরে চাষ করা হয়। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিম্যালে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি সাইজের ৫০টি পাবদা , ১০০টি শিঙি এবং ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি সাইজের ৫টি কাতলা , ১০টি রুই , ২টি সিলবার কার্প ও ২টি গ্রাস কার্পের সুস্থ পোনা মজুদ করতে হবে।
এখানে একটি ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে যে , পাবদা মাছ পুকুরের তুলনামূলক ছোট মাছ খেয়ে ফেলবে তাই চাষের অন্যান্য মাছ যাতে পাবদার চাইতে বড় সাইজের হয় সে দিকে নজর রাখতে হবে এবং পুকুরের আমাছা খেয়ে পুকুর যেমন চাষযোগ্য রাখবে তেমনি পাবদার বৃদ্ধিও দ্রুত হবে। পুকুরের মাছ ৫-৬ মাসের মধ্যে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের হলে মাছ আহরণ করা যাবে। তবে ৬০-৭০ গ্রাম হলে দাম ভালো পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - কৃত্রিম উপায়ে কৈ মাছের রেনু উৎপাদনের কৌশল