মৌমাছি শুধু নিজের প্রয়োজন মেটাতে নেকটার সংগ্রহ করে না, চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত সংগ্রহ করে, মধু রূপে মৌচাকে জমা করে অসময়ের জন্য বা সন্তান সন্ততির জন্য। ফলে অন্যান্য কীটপতঙ্গের তুলনায় মৌমাছি ফুলে ফুলে ওড়াউড়ি বেশী করে। ফলে পরাগ মিলনে ও সাহা্য্য বেশী হয়।
মৌমাছির বৈচিত্র: পৃথিবীতে এখনও পর্য্যন্ত ২০,০০০ মত প্রজাতির মৌমাছি চিহ্নিত করা গেছে। তার মধ্যে ৭৮৫ টি শস্য ক্ষেত্রে পাওয়া যায়।
মৌমাছির খাদ্য হিসেবে নেকটারের কথা তো উল্লেখ করেছি। এই নেকটার অপেক্ষাকৃত তরল মিষ্টি রস। এই রসকে মধুতে রূপান্তরিত করে মৌমাছি – যা অপেক্ষাকৃত ভাবে অনেক ঘন। মধুতে জলীয় অংশ থাকে ২০% এর মধ্যে। মৌপ্রকোষ্ঠে জমা করার সময়, মৌমাছি যদি বোঝে, মধুতে জলের অংশ বেশী আছে, তবে ডানা ঝাপটে ঝপটে তারা জলীয় অংশ কমায় ও মৌপ্রকোষ্ঠটিতে capping বা ঢাকনা দিয়ে দেয়। এই হচ্ছে পরিপক্ক মধু বা matured honey – যা সহজে নষ্ট হয় না।
আর কি উৎপন্ন করে মৌমাছি?
১. মোম চাক বাঁধার জন্য মৌমাছি নির্দিষ্ট গ্রন্থী থেকে মোম বা wax উৎপন্ন করে। চাক ভাঙ্গার পর সেই মোম ও নিষ্কাশন করে বাজারে বিক্রী করা যায়। মৌপালকেরা এই ভাবে উৎপাদিত মোম সব সময় বাজারে বিক্রী না করে নতুন মৌমাছির ফ্রেম তীরী করার জন্য ব্যবহার করে। ফলে, নতুন কলোনী বা কেস স্থাপন করার সময়, মৌমাছিকে মোম উৎপাদনের জন্য বাড়তি সময় ও শক্তি ব্যবহার করতে হয় না। মধু উৎপাদনেও এর ফলে সহজ হয়।
২. মৌ-বিষ: মৌমাছি সন্ত্রস্ত বোধ করলে শত্রুকে আক্রমণের জন্য হুল ব্যবহার করে। এই হুল ফুটিয়ে শত্রুর শরীরে বিষথলি থেকে তারা বিষ ফেলে দেয়। অবশ্য ফোটানোর পর এই হুল তারা বের করতে পারে না, হুল ওপর থাকা এক ধরণের কন্টক সজ্জার জন্য। শরীরের একটা অংশ ছিঁড়ে তাকে মুক্ত হতে হয় এবং সে মারা যায়।
এই মৌ বিষ খুব সহজেই আমরা নিষ্কাশন করে বাজারজাত করতে পারি। ওষধিশিল্পে এর চাহিদা প্রচুর। মৌ বিষের অ্যান্টি কোয়াগুলেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকায় তা মানুষের চিকিৎসাতে ও ব্যবহার করা হয়।
. প্রোপালিন: গাছের বিভিন্ন অংশ থেকে নিঃসৃত আঠা মৌমাছি সংগ্রহ করে লালা ও মোমের সাথে মেশায়। এই মিশ্রণ তারা মৌমাছির বাক্সের ফাটল, ফাঁক ফোকরে সংগ্রহ করে ফাটল বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করে।
সারা পৃথিবীতেই পরাগ মিলনকারী পোকা ও বিশেষ করে মৌমাছির সংখ্যা কমছে। এটা শুধু মধু উৎপাদন নয়, শস্য উৎপাদনেরও ভয়ঙ্কর ক্ষতি করছে। বলা যায় এভাবে চললে স্বপুষ্পক উদ্ভিদের অস্তিত্বই বিপদাপন্ন হবে। মূলতঃ কৃষিতে রাসায়নিকের ব্যবহার, কীটনাশক বিশেষতঃ নিওনি কটিনয়েডসের ব্যবহার, কৃষিজমিতে বিপুল পরিমানে আগাছানাশকের ব্যবহার , জঙ্গল কমে আসা ও নগরায়নের ব্যাপ্তী পৃথিবী ব্যাপী এক জাতীয় পতঙ্গের সংখ্যা হ্রাসের কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।
তথ্য - সংগ্রিহীত
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)