খাদ্য, প্রধানত আমরা যা প্রতিদিন সকালে, দুপুরে, ও রাতে গ্রহণ করে থাকি, তা নির্ভর করে কোন অঞ্চলে সেই ফসল, শাক সবজি ও ফল উৎপাদিত হচ্ছে তার উপর। ক্ষেতে যে জলসেচ করা হয় তা অত্যন্ত দূষিত, যে জলে ভারী ধাতুর উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়, এই ধাতব জল মাটির মধ্যে উপস্থিত বিবিধ রাসায়নিক পদার্থের সাথে দ্রুত বিক্রিয়া করে ক্ষতিকারক ধাতব লবনে পরিণত হয় যা গাছ সহজেই জলে সাহায্যে শোষণ করতে পারে। এটি খুবই ভয়ঙ্কর একটি বিষয়। আমেরিকার Food and Drug Administration থেকে বিষয়টিকে নিয়ে উচ্চমাত্রায় গবেষণায় এই ধারণা মিলছে।
শিল্পকারখানার থেকে প্রচুর পরিমাণে ধাতব পদার্থ ও উপজাত বর্জ্য ক্রমাগত মাটির সাথে মিশছে ফলে মাটির সাথে সাথে ফসলেও সেই কঠিন ধাতব বর্জ্য সঞ্চিত হয়ে চলেছে। যে মাংস আমরা প্রতিদিন খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছি তার মধ্যেও সরাসরি সঞ্চিত হয় ধাতব লবন। এই সব ভারী বর্জ্য পদার্থগুলি হল আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, সীসা, ও পারদ।
মানব শরীরে যদি মাত্রাতিরিক্ত ক্যাডমিয়াম সঞ্চিত হয় তাহলে কিডনির রোগ, অস্টিওপোরেসিস্, ও কার্ডিও ভাস্কুলার রোগ হতে পারে। এই ধাতুটি এতটাই দীর্ঘস্থায়ী যে মানব দেহে তা ৩০ বৎসর অবধি নষ্ট না হয়ে সঞ্চিত হতে পারে, সঞ্চিত ক্যাডমিয়াম ধীরে ধীরে মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যাবলী বিশেষ করে বৃক্ক ও যকৃতকে বিনষ্ট করে দেয়, বিশেষ করে বৃক্কে যদি কোনোকারণে একবার ক্যাডমিয়াম প্রবেশ করে সেই সময় থেকেই কিডনির কার্যাবলী বিনষ্ট হতে শুরু করবে, এটি মোটেই আমাদের জন্য ভালো ব্যাপার নয়! ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে তো মাছের মধ্যে নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় অনেক বেশি মাত্রায় ক্যাডমিয়াম ও সীসা থাকে, যা পরবর্তীকালে আমাদের দৈহিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
রিপোর্টে বলা হচ্ছে, যে সব খাদ্য বর্তমানে সরবরাহ করা হচ্ছে, সেই সব খাদ্যে আর্সেনিক, সীসা, ক্যাডমিয়াম, পারদ, ও আরও অপ্রয়োজনীয় ধাতু থাকে। এই সব মৌল স্বাভাবিক ভাবেই পরিবেশ দূষক হিসেবে পরিগণিত হয়, যেগুলি ক্রমাগত জল, বায়ু, ও মৃত্তিকাকে দূষিত করে চলেছে। স্বভাবতই সেই সব দূষিত ধাতব লবন উদ্ভিদের মাধ্যমে খাদ্যতন্ত্রে প্রবেশ করছে।
The Food and Drug Administration অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে খাদ্যে এই সব ধাতুর সঞ্চয়ের মাত্রাকে পর্যবেক্ষণ করছে, কারণ এই সব দূষিত ধাতু যদি খাদ্যের মধ্যে মাত্রাতিরিক্তভাবে সঞ্চিত হয় তাহলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকারক অবস্থার সৃষ্টি করবে বিশেষ করে ছোটদের ক্ষেত্রে তো অত্যন্ত খারাপ হবে।
এই সংস্থাটি গতবৎসর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকি কমানোর জন্য খাদ্যসুরক্ষা বিষয়ে একটি কর্মগোষ্ঠী স্থাপন করেছে, সেখানে খাদ্যসুরক্ষা বিশেষজ্ঞকে নিযুক্ত করেছেন যারা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন কীভাবে তারা খাদ্যের মধ্যস্থিত ক্ষতিকারক ধাতব দূষণ থেকে রক্ষা পাবে।
সংস্থার পরিচালক Conrad Choiniere, বলেছেন যে তাদের সংস্থা মানুষকে খাদ্যে বিষকে চিনতে ও তার থেকে বাঁচতে সাহায্য করছে, তাই তাদের কাজ যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং।
খাদ্য ও প্রসাধনী শিল্পে যে সমস্ত ক্ষতিকারক মৌল যেমন সীসা, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ও পারদের উপর সবথেকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। Conrad Choiniere আরও বলেছেন এই সব কঠিন পদার্থ আমাদের প্রাত্যহিক ব্যবহৃত খাদ্য সামগ্রীর গুণমানতাকে নষ্ট করেছে, যার ফলে আমরা তো বটেই আমাদের শিশুদের আরও ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে কারণ এই সব বিষয় গুলি তাদের স্নায়ুতন্ত্রের সুগঠন হতে দিচ্ছে না। আমরা সবথেকে বেশি নজর দিচ্ছি শিশুরা যে খাদ্য গুলি বেশি খাচ্ছে তার উপর, কারণ শিশুরাই আমাদের কাছে বেশি স্পর্শকাতর ও বেশি অনুভূতিশীল একটি বিষয়।
এই সমস্ত কঠিন বর্জ্যপদার্থ সমূহ প্রকৃতিতেও পাওয়া যায় অথবা বিবিধ দূষণের কারণে জল, বায়ু ও মাটির দ্বারা পরিশোধিত হয়ে সঞ্চিত হতে পারে । এই সব পদার্থ প্রথমত সহজে মুক্ত হয় না অথবা ক্ষয়ীভূতও হয় না, এবং যখন এরা জল ও বাতাসের সাথে মিশে থাকে তখন তা উদ্ভিদ দ্বারা শোষিত হয়, এবং তারপর তা প্রানীর খাদ্য-শৃংখলে প্রবেশ করে। সংস্থার একটি দল ছ’মাস যাবত গবেষণা করছে যে জলে মিথাইলমার্কারি নামক একটি ক্ষতিকর দূষক রয়েছে যা সীফুড এর মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে।
অপর একটি ভারী ধাতব বিষ রয়েছে যার মধ্যে সীসা থাকে, যা আমাদের কিডনির ক্ষতি করে ও লোহিত রক্ত কণিকার কোশগুলিকে ধ্বংস করে দেয়, স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে, এবং জননতন্ত্রের ব্যাঘাত ঘটিয়ে বন্ধ্যা রোগ সৃষ্টি করে। পারদ বিষ আমাদের গবিনীঘটিত রোগ সৃষ্টি করে যা স্বাস্থ্যের উপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলে, এমনই আরও কত শত বিষ খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে শারীরিক ক্ষতি সাধন করছে।
- প্রদীপ পাল