খেয়াল করে দেখুন তো কালী পুজোর সময় মাসটা কী? কেন নভেম্বর! কিন্তু নভেম্বর মাস বা কালী পুজোর সঙ্গে সবজি খাওয়ার সম্পর্কটা ঠিক কোথায়? আসলে বন্ধু এই সময়ই আমাদের রাজ্যে ওয়েদার চেঞ্জ হতে শুরু করে। তাই তো নভেম্বর থেকে ফেব্রয়ারি মাস পর্যন্ত পারদ এমনভাবে ওঠা-নামা করে যে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একেবারে বারোটা বেজে যায়। আর সেই সুযোগে নানা ক্ষতিকর উপাদান শরীরে প্রবেশ করে নানা ছোট-বড় রোগকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসে। ফলে শরীর ভাঙতে সময় লাগে না। আর ঠিক এই কারণেই কালী পুজোর সময় থেকে প্রতিদিন সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। আসলে নানাবিধ সবজির অন্দরে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, সি, কে, ফাইবার, অ্যামাইনো অ্যাসিড, নানাবিধ মিনারেল এবং বিটা ক্যারোটিন নানাভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। শুধু তাই নয়, সবজিতে উপস্থিত এই সব উপকারি উপাদান আরও নানা ভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে। যেমন ধরুন -
১. স্ট্রেস লেভেল কমে: ২১ শতকের মারণ সমস্যার তকমা পাওয়া স্ট্রেস বা মানসিক চাপকে কমিয়ে ফলতে বাস্তবিকই সবুজ শাক-সবজির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই সব প্রাকৃতিক উপাদানগুলির অন্দরে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর "ফিল গুড" হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্ট্রেস লেভেল তলানিতে এসে ঠেকতে সময় লাগে না।
২. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে রাঙা আলু, গাজর, টমাটো, ক্যাপসিকাম, পিঁয়াজ এবং ব্রকলি বা ফুলকপির মতো সবজিকে রোজের ডায়েটে জায়গা করে দিলে শরীরে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা এতটা বেড়ে যায় যে তার প্রভাবে ত্বক এবং দেহের অন্দরে উপস্থিত ক্ষতিকার টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর তো রোগ মুক্ত হয়ই, সেই সঙ্গে ত্বেকর সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় চোখে পরার মতো।
৩. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে: জার্নাল অব দা আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত এক স্টাডি অনুসারে প্রচুর মাত্রায় শাক-সবজি খেলে শরীরের অন্দরে এমন পরিবর্তন হতে শুরু করে যে ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার সুযোগই পায় না। বিশেষত, কলোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। তাই এই মারণ রোগটিকে যদি দূরে রাখতে হয়, তাহলে ভুলেও রোজের ডায়েট থেকে সবুজ শাক-সবজিকে বাদ দেওয়া চলবে না। নেরোল্যাকের ব হু রঙের মধ্যে থেকে বেছে নিন একটা রঙকে 100 কেজি থেকে 64 কেজি, মাত্র 30 দিনে! 100 কেজি থেকে 64 কেজি, মাত্র 30 দিনে!
৪. খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমে: আমাদের দেশে হার্টের রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে যে যে কারণগুলি দায়ি থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হল শাক-সবজি খাওয়া থেকে বিরত থাকা। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বেশি মাত্রায় সবজি খেলে রক্তে জমতে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হার্টের কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। প্রসঙ্গত, শরীরে উপস্থিত কোলেস্টেরলকে কাজে লাগিয়ে লিভার, বাইল অ্যাসিড তৈরি করে থাকে। এই উপাদানটি শরীরকে সচল রাখতে নানাভাবে সাহায্য করে। কিন্তু যখনই কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। তখনই কোনও ধরনের বিপদ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই সুস্থভাবে বাঁচতে শরীরে যাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা কোনও ভাবে না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
৫. শরীরের বয়স কমে: যেমনটা আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে সবজি শাকসবজি কেবল মস্তিষ্ককে চাঙ্গা রাখে না, সেই সঙ্গে সমগ্র শরীরের উপরও বয়সের ছাপ পরতে দেয় না। ফলে খাতায় কলমে বয়স বাড়লেও শরীর এবং তার অন্দরে ফিট করা নানাবিধ অঙ্গের কর্মক্ষমতার উপর কোনও প্রভাবই পরে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, মার্কিন গবেষকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে আম বাঙালি সাধারণত যে যে সবজিগুলি খেয়ে থাকেন, তার মধ্যে ভিটামিন কে প্রচুর মাত্রায় থাকে। এই ভিটামিনটি হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৬. হাড় শক্তপোক্ত হয়: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষমতা, বিশেষত জয়েন্টর ক্ষমতা কমতে শুরু করে। আর এই ঘটনাটি ঘটতে থাকে ৩০-এর পর থেকেই। তাই তো এই বয়সের পর থেকে শাক-সবজির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা মাস্ট! কারণ এই প্রাকৃতিক উপাদানটির অন্দরে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, হাড়ের শক্তি বাড়ায়, সেই সঙ্গে জয়েন্টের সচলতাও এমন বাড়িয়ে তোলে যে কোনও ধরনের হাড়ের রোগ ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগ পায় না।
৭. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটে: সবুজ শাক-সবজিতে উপস্থিত লুটেইন এবং জিয়েক্সেথিন নামক দুটি উপাদান দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, জোড়ালো আলোর কারণে যাতে চোখের কোনও ক্ষতি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে এই প্রকৃতিক উপাদানগুলি। তাই তো যাদের দিনের বেশিরভাগ সময়ই কম্পিউটার বা ডিজিটাল স্ক্রিনের সমানে কাজ করতে হয়, তারা নিয়মিত সবুজ শাক-সবজি খেতে ভুলবেন না যেন!
৮. ওজন হ্রাসে সাহায্য করে: একাদিক গবেষণায় দেখা গেছে সবুজ-শাকসবজিতে উপস্থিত নানাবিধ উপকারি উপাদান মানব শরীরে প্রবেশ করার পর ফ্যাট সেলেদের গলাতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এক বাটি সবজি খেলে বহুক্ষণ ক্ষিদে পায় না। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে গিয়ে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা একবারে কমে যায়। তাই নতুন বছরে যদি ওজন কমানের বিষয়ে বদ্ধপরিকর হন, তাহলে রোজের ডায়েটে সবুজ শাক-সবজিকে রাখতে ভুলবেন না যেন!
৯. শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে রোজের ডায়েটে শাক-সবজির মতো খাবার থাকলে দেহের অন্দরে ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি দূর হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের সচলতা চোখে পারার মতো বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে দেহের অন্দরে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণও বাড়ে, যা শরীর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে ক্লান্তিবোধ দূর হতে সময় লাগে না।
- Sushmita Kundu