পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি রাজ্য যাহার উত্তর শিরে মুকুটের মতো শোভা পাইতেছে শিবালিক হিমালয় আর দক্ষিণে বঙ্গীয় উপসাগর বঙ্গরানির পা ধুয়াইয়া দিতেছে। আমরা উপগ্রহ হইতে হয়তো পশ্চিমবঙ্গের এই অসামান্য নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী অবলোকন করিতে পারি, কিন্তু বঙ্গের জনমানবের জীবন, জীবিকা, তাহাদের প্রাত্যহিক ভাঙ্গাচোরা, এককথায় তাহাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটটিকে আমরা উপগ্রহ চিত্র হইতে বুঝিতে পারি না, অবলোকনও করিতে পারি না। কৃষিজাগরণের পক্ষ হইতে আমি এইবার কোনো সাংবাদিক হইয়া নয়, নিতান্তই এক ভ্রমণ পিপাসু সাদামাটা বাঙ্গালী হৃদয় লইয়া হাজির হই দক্ষিণ ২৪ পরগণার World Heritage Site হিসাবে প্রসিদ্ধ সুন্দরবন অঞ্চলে। এই সেই অঞ্চল যেইখানে ২০০৯ সালের মে মাসে আয়লার তাণ্ডবনৃত্য চলিয়াছিল। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিন্নভিন্ন করিয়া দিয়াছিলো এইখানকার গোটা জনজীবনকে। সমুদ্রের বৃহৎ বৃহৎ ঢেউয়ের ধাক্কা সামলাইয়াছিল এইখানকার ম্যানগ্রোভস্অরণ্য। ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছিলো এইখানকার পরিকাঠামোগত ব্যবস্থা। গৃহহীন, খাদ্যহীন, লক্ষ লক্ষ মানুষ দিনের পর দিন বাস করিয়াছিলো সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিবেশে। আজ হয়তো সেই সব দুঃখ নিশ্চিহ্ন হইয়াছে, তবুও তাহা কতটা? সেই সব খবর সংগ্রহ করিতেই আমার এই আত্মভ্রমণ কাহিনী “সুন্দরবন তুমি কেমন আছ?”
শিয়ালদহ হইতে ক্যানিংগামী লোকাল ট্রেনে উঠিয়া আমি আমার সুন্দরবন যাত্রা শুরু করিলাম। রেল যোগাযোগ যে পূর্বের তুলনায় অনেকটাই সাবলীল হইয়াছে তাহা বলার অপেক্ষা রাখে না, তাহার কারণ অবশ্যই আধুনিকতা ও নগরায়ন। একসময় সুন্দরবন নামটা শুনিলেই একটি দুর্গম-দুর্ভেদ্য জঙ্গলের ছবি চোখের সামনে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিত। ডঃ বিধান চন্দ্র রায়ের সরকার চলাকালীন এই অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ অরণ্য কিছুটা সাফ করিয়া বাসযোগ্য করা হইয়াছিলো বটে, তবে তাহা নিতান্তই উদ্বাস্তু সমস্যা মিটানোর কারণে। এখন আর সেই সমস্যা নাই তাহা কিছুটা অগ্রসর হইবার পর পরই অনুধাবিত হইলো। ক্যানিং স্টেশনে অবতরণ করিয়া আমি অগ্রসর হইলাম ঝোড়খালির উদ্দেশ্যে। এইখানকার রেল যোগাযোগ যতটা উন্নীত হইয়াছে সড়ক যোগাযোগ অতখানি সুলভ করা সম্ভবপর হয় নাই বলিয়াই মনে হইলো। ঝোড়খালি যাইবার যানবাহন বলিতে ওই এক ঘণ্টা- দেড় ঘণ্টা অন্তর কিছু মিনিবাস নতুবা প্রাণ ওষ্ঠাগত করা ম্যাজিক গাড়ি। যদি কষ্ট করিয়া জীবনের ঝুঁকি লইয়া কেহ এই ব্যবস্থার সুবিধা লয় তো গন্তব্যে পৌঁছাইবে নতুবা তাহাকে অপেক্ষা করিতে হইবে আগামী দিনের সূর্যোদয়ের জন্য। রাত্রকালে এইখানে যানবাহনের পর্যাপ্ততা নাই। যাহা হউক, সৌভাগ্যবশতঃ ম্যাজিক গাড়ি একটিই মাত্র অবশিষ্ট ছিলো, তাহাতেই মাথা গোঁজার মতো একফালি স্থান...
আরও জানতে পড়ুন অক্টোবর-এর কৃষি জাগরণ বাংলা সংখ্যা
- প্রদীপ পাল