পশ্চিমবঙ্গের আনাচেকানাচে যারা ঘুরে বেড়াতে চান অথবা দু-একদিনের জন্যে ছোটখাট কোনও জায়গায় বেড়াতে চান, তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করছে পর্যটন দপ্তর। পর্যটকদের গাইড করার জন্য ৫০ টির বেশি ট্যুর সেন্টার গড়ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই সেন্টারগুলিতে পর্যটকরা পৌঁছলে, তাঁদের জন্য যাবতীয় তথ্য নিয়ে হাজির থাকবেন দপ্তরের কর্মীরা। কোথায় থাকবেন, কী খাবেন, কোথায় যাবেন, কী দেখতে যাবেন, কী করবেন না, কোথায় গেলে বিপদে পড়তে হতে পারে, সমস্ত তথ্যই মিলবে এই সেন্টারগুলিতে। ইংরেজি, হিন্দি বা বাংলা জানা কর্মীরা ভিন রাজ্য বা বাইরের দেশের পর্যটকদের সহায়তা দেবেন।
যেমন , মহেশের রথযাত্রার কথা প্রসঙ্গে বলা যায় বিশ্বের কাছে এই উৎসবের ভালোই পরিচিতি আছে। মাহেশে জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি হোক বা জগন্নাথ দর্শনই হোক, তা নিয়ে বছরভর পর্যটকদের আগ্রহের শেষ নেই। কিন্তু সমস্যা হল, মাহেশে যাঁরা সারা বছর আসেন, তাঁদের অনেকেই জানেন না, ওখানে কোথায় থাকা যায়, কোথায় ভালো খাবার পাওয়া যায় ইত্যাদি। শুধু জগন্নাথদেবকে কেন্দ্র করে পর্যটন ছাড়াও যে শ্রীরামপুরে বা তার আশপাশে আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আছে, তা জানা হয়ে ওঠে না অনেকেরই। তাই অনেক দর্শনীয় জিনিস দেখা হয় না অনেকেরই। আবার , মুর্শিদাবাদে বেড়াতে যান অনেকেই কিন্তু সেখানকার আনাচে কানাচে বহু দর্শনীয় স্থান আছে যা মানুষ না দেখে ফিরে আসেন। এই সেন্টারগুলিতে পর্যটকরা কম সময়ে বাড়তি তথ্য পেয়ে অন্য জায়গায় যেতে উৎসাহিত হবেন।
কলকাতা এবং বাগডোগরা বিমানবন্দরে এই পরিষেবা আগেই চালু হয়েছে। সেই পরিষেবাই এবার রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নিয়েছে পর্যটন দপ্তর। ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। ট্যুর সেন্টারগুলি থাকছে
(১) আলিপুরদুয়ারে –নিউ আলিপুর রেলস্টেশন এবং জয়গাঁওয়ে;
(২) দার্জিলিংয়ে - ম্যাল, শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ড এবং কার্শিয়াংয়ে থাকবে সেন্টার;
(৩)জলপাইগুড়ির - নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন এবং জলপাইগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে;
(৪) কালিম্পংয়ে - দুম্বারচক ও বেনিমেলা মাঠ;
(৫) মালদহে – ঝালজালিয়া;
(৬) মুর্শিদাবাদে - হাজারদুয়ারি, বহরমপুর বাসস্ট্যান্ড;
(৭) উত্তর দিনাজপুরে - রায়গঞ্জ;
(৮) দক্ষিণ দিনাজপুরে - বালুরঘাটে থাকছে এই সেন্টার;
(৯)বাঁকুড়ায় - বাঁকুড়া রেলস্টেশন, খাতরা বাসস্ট্যান্ড, মুকুটমণিপুর, বিষ্ণুপুরে;
(১০) বীরভূমে - বোলপুর, রামপুরহাটে;
(১১) কোচবিহারে - নিউ কোচবিহার রেলস্টেশন, রাজবাড়িতে;
(১২) হুগলিতে - কামারপুকুর, মাহেশ এবং চন্দননগর ব্যান্ড স্ট্র্যান্ডে;
(১৩) হাওড়ার - হাওড়া স্টেশন এবং সাঁতরাগাছিতে;
(১৪)ঝাড়গ্রামের - রেলস্টেশন এবং সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে তৈরি হবে সেন্টার;
(১৫) নদীয়ায় - মায়াপুর, কৃষ্ণনগর হাইওয়ে;
(১৬) উত্তর ২৪ পরগনার - বসিরহাট, দমদম, গান্ধীঘাট;
(১৭) পশ্চিম বর্ধমানের - দুর্গাপুর সিটি সেন্টার, আসানসোল বাসস্ট্যান্ড;
(১৮) পূর্ব বর্ধমানের - বর্ধমান বাসস্ট্যান্ড;
(১৯) পশ্চিম মেদিনীপুরে - কালেক্টরেট, খড়গপুর চৌরঙ্গি;
(২০) পূর্ব মেদিনীপুরে - দীঘা বাসস্ট্যান্ড এবং রেলস্টেশন;
(২১) পুরুলিয়ায় মূল শহর এবং রঘুনাথপুর;
(২২) দক্ষিণ ২৪ পরগনায় - কাকদ্বীপ লট আট এবং ডায়মন্ডহারবার রেলস্টেশন;
(২৩) কলকাতার - কলকাতা ও শিয়ালদহ রেলস্টেশন, রবীন্দ্রসদন এবং মধুসূদন মঞ্চে ।
বিভিন্ন সংস্থা থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করা অনেককেই ‘অতিথি বন্ধু’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার, তাঁরাই মূলত এই সেন্টারগুলি চালাবেন। এর পাশাপাশি দপ্তরের কর্মীরাও থাকবেন। এদেশি হোক বা ভিনদেশি— সবার পাশে বন্ধুর মতো দাঁড়াবে এই সমস্ত সরকাররি ট্যুর সেন্টারের অতিথি বন্ধুরা।
রুনা নাথ।
Share your comments