গ্রাম/মফঃস্বলের বেকার যুবক ও দেশের কৃষকদের আর্থিক উন্নতির একটাই উপায় আর তা হল স্বল্প ব্যয়ে আরও বেশি মুনাফা অর্জন। অর্থনৈতিক অবস্থা সঠিক থাকলে তবেই তো প্রকৃতপক্ষে উন্নয়ন সম্ভব। দেশের বেশিরভাগ কৃষক এখনও ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজের সাথে যুক্ত, আবার এমন কয়েকজন কৃষক আছেন যারা মূল ফসলের সাথে সাথী ফসল চাষ করেন অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য। শুধু কৃষকই নন, যে কেউ এই উদ্ভিজ্জ ব্যবসা করে লাভবান হতে পারেন।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন উদ্ভিদের ব্যবসা করলে তা সব থেকে বেশী লাভজনক (Profitable Business) হবে -
ইউক্যালিপটাস (Eucalyptus Plant) -
ইউক্যালিপটাস গাছ বেশ লম্বা হয়। এর ৬০০ টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। ভারত ছাড়াও উত্তর ও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ ইউরোপেও এর চাষ হয়। এই গাছটি সাধারণ মাটি এবং জলবায়ুতে চাষ হয় এবং গড় তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হলে ভাল হয়। দৈর্ঘ্যের কারণে এটি মাটির অধিক গভীরতায় রোপণ করা হয়। আপনি সহজেই নীলগিরির (ইউক্যালিপটাস) ১ একরে প্রায় ৫০০ চারা রোপণ করতে পারেন। এর চাষের জন্য মাটি প্রস্তুত করতে মোট ব্যয় হয় ৫৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাজারে এর একটি গাছের দাম প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, এর থেকে আগামী ১০ বছরে ১.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
সেগুনের চাষাবাদ (Segun wood) -
আমাদের দেশে সেগুন গাছ অত্যধিক পরিমাণে চ্ছেদন হয়, যার কারণে বনে এই গাছের সংখ্যা এখন খুব কম। এই গাছের কাঠের মান অত্যন্ত ভাল হওয়ায়, বাজারে এর চাহিদা ক্রমবর্ধমান। কারণ এর কাঠ দ্রুত ক্ষয় হয় না বা এতে ঘুণ ধরে না। শুধু তাই নয়, এই কাঠ জলের কারণে নষ্ট হয়ে যায় না। যার কারণে এর কাঠ আসবাবপত্র, প্লাইউড ইত্যাদি নির্মাণের জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়। সেগুন চাষ করতে, আপনি সহজেই ১ একর জমিতে প্রায় ৪০০ টি গাছ রোপণ করতে পারেন। এর চাষের জন্য এবং মাটি প্রস্তুতের জন্য মোট ব্যয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাজারে একটি গাছের দাম প্রায় ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা, যদি ৪০০ গাছ থাকে, তবে আপনি সহজেই ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন।
চন্দন গাছ (Sandalwood Plant) -
চন্দন গাছ দুটি উপায়ে প্রস্তুত করা যায়, প্রথমটি জৈব চাষ এবং দ্বিতীয়টি ঐতিহ্যবাহী উপায়ে চাষ। জৈব পদ্ধতিতে এবং প্রচলিত উপায়ে চন্দন গাছ প্রস্তুত হতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লাগে। অন্যান্য গাছের তুলনায় চন্দন গাছ বেশ ব্যয়বহুল, তবে আপনি যদি একবারে অনেকগুলি গাছ কিনে থাকেন তবে এটি গড়ে ৪০০ টাকায় পাবেন। শ্বেতচন্দন গাছ চাষ করা যেমন সহজসাধ্য, তেমনি অত্যন্ত লাভজনকও। এই গাছ চাষে তেমনভাবে কোনও খরচও নেই। সেচও লাগে কম। প্রথম দুই বছর গাছের সামান্য যত্ন নিতে পারলেই আর কোনও অসুবিধা নেই।
গাছের বয়স ২০ হলেই প্রায় পরিণত এই গাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি কাঠ দেবে। মাটির উপরের ভাগের কাঠের দাম বর্তমান বাজারে যা ১৫-১৬ হাজার টাকা প্রতি কেজি৷ তা ২০ বছর পর আরও দাম বাড়ার সম্ভাবনা। এমনকি মাটির ভিতর শিকড় ইত্যাদি কাঠও পাওয়া যেতে পারে নয় নয় করেও প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার। অর্থাৎ বর্তমানে কোনও গাছ রোপণ করলে ২০ বছর পর অনায়াসেই আপনি গাছের সংখ্যা অনুযায়ী ৬০ লক্ষ থেকে কোটি টাকার মালিক হয়ে যেতে পারেন।