শীত পড়লেই বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ে। তার সবচেয়ে বড় কারণ বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়া। ফলত ধুলোর পরিমাণ বাড়তে থাকে। আর্দ্র আবহাওয়ায় ধোঁয়াও কম থাকে বাতাসে। এবং এই ধুলো বা ধোঁয়াই দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এই দূষণকে উপেক্ষা করলে শরীরের প্রভূত ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই শীতকালে দূষণ থেকে বাঁচতে মনে রাখুন কতগুলো সহজ পদ্ধতি।
১। বাইরে বেরনোর সময় মুখোশ পরতে ভুলবেন না। এন৯৯ বা এন৯৫ ক্যাটেগরির মুখোশ বা পলিউশন মাস্ক ব্যবহার করুন। এতে বাতাসের ধুলো ধোঁয়ার হাত থেকে অনেকটাই বাঁচবেন। তবে শুধু মুখোশ ব্যবহার করলেই চলবে না, পাশাপাশি যে সব জায়গায় দূষণের মাত্রা বেশি, সে সব জায়গা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
২। ঘরের যত্ন বাইরের দূষণ থেকে তো না হয় মাস্ক পরে বাঁচলেন, কিন্তু ঘরের ভিতরেও শীতকালে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে ঘরের ভিতর এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করাটা সহজ সমাধান। খুব কম দামের মধ্যেও এই পিউরিফায়ার পাওয়া যায়। তবে সেটা আপনার ঘরের যা মা, তার উপযুক্ত কি না, সেটা আগে থেকে দেখে নেবেন।
৩। গাছ লাগান কিছু কিছু ইনডোর প্লান্ট ঘরের দূষণের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, ঘরের বাতসকে পরিশুদ্ধ করতে পারে। নাসা-র বিজ্ঞানিরা এইধরনের গাছের তালিকা তৈরি করেছেন। অ্যালোভেরা থেকে শুরু করে অ্যান্থুরিয়াম বা স্প্যাথিফাইলাম (পিস লিলি)-এর মতো গাছ এই কাজে খুব সফল। তবে বাড়িতে পোষ্য কুকুর থাকলে কিছু কিছু গাছ এড়িয়ে চলা ভালো।
৪। ভোরে হাঁটা নয় মর্নিং ওয়াক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু শীতের সময় যখন দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন সকালে হাঁটা থেকে বিরত থাকাই ভালো। কারণ এই সময় দূষণের মাত্রা থাকে সবচেয়ে বেশি। বরং বেলা বাড়লে বড় রাস্তা থেকে একটু দূরে, যেখানে দূষণের মাত্রা কম, তেমন কোথাও হাঁটুন।
৫। ভেপার নিন প্রতিদিনই পারলে জলর ভেপার নিন। কোনও ওষুধ ব্যবহার না করলেও চলবে। কিন্তু রাতে শুতে যাওয়ার আগে এই ভেপার নিলেন, ফুসফুস বা শ্বাসনালীর মধ্যে জমে থাকা দূষিত বস্তু অনকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। শরীরে টক্সিক বা বিষাক্ত বস্তুর পরিমাণ কমে যাবে।
৬। কী খাবেন প্রকৃতিও তার ব্যবস্থা এমনভাবে করে রেখেছে, যাতে এই সময় প্রাকৃতিক ভাবেই আপনি দূষণের ক্ষতিকর দিক থেকে মুক্তি পেতে পারেন। শীতকালে খেজুরের রস থেকে পাওয়া পাটালি বা ঝোলা গুড় খুবই সহজলোভ্য। আর এই গুড়ই পারে শরীরকে দূষণের হাত থেকে অনেকটাই বাঁচিয়ে রাখতে। এই সময় নিয়মিত খেজুরের গুড় খেতে পারেন। এমনকী আখের গুড়ও শরীরকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে। আর আখের গুড় তো প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তাই প্রতিদিন কিছুটা করে গুড় খাওয়া দূষণের হাত থেকে শরীরকে বাঁচাতে সাহায্য করবে।
৭। জানলা খোলা কখন যদি বড় রাস্তার কাছে বাড়ি হয়, তাহলে শীতকালে সারা দিন জানলা খোলা রাখাটা বিপজ্জনক। ভেন্টিলেশন ঠিক থাকলে রাতে এমনিতে জানলা বন্ধ রাখাটাই শীতকালে দস্তুর। দিনেও সেই নিয়ম বজায় রাখুন। এই মরশুমে সারা দিনের মধ্যে দূষণের মাত্রা সবচেয়ে কম থাকে বিকেলের দিকে। তাই দুপুর তিনটে থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জানলা খুলে বাতাস চলাচলের সুযোগ করে দিন। কড়া রোদ উঠে থাকলে দুপুরে আরও একটু আগে ও জানলা খুলে দিতে পারেন।
- Sushmita Kundu (sushmita@krishijagran.com)
Share your comments