ভারতবর্ষে ধানের সর্বাধিক ফলন হয় আমাদের পশ্চিবঙ্গে। তাছাড়া আছে অসম এবং ওড়িশা| পঞ্জাবেও কিছু ধান হয়। আবার পঞ্জাবে গমের উৎপাদন ভারতবর্ষের নিরিখে সর্বাধিক। পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষের মধ্যে ধানের উৎপাদন সব থেকে বেশি। শীতকালীন ধানকে আমন ধান বলা হয়। এর অপর নাম আগুনী ও হৈমন্তিক। উল্লেখ্য সংস্কৃত হৈমন' বা হৈমন্তিক' শব্দের অপভ্রংশ। আমন ধান তিন প্রকার হয় । রোপা আমন-চারা প্রস্তুত করে, সেই চারা রোপণ করে এই ধান উৎপন্ন হয় বলে এর এরূপ নাম। আছরা আমন-এই আমন ছিটিয়ে বোনা হয়।বাওয়া আমন-বিল অঞ্চলে এই আমন উৎপন্ন করা হয়। এই কারণে গভীর জলের বিলে-আমনও বলা হয়ে থাকে।
ধান চাষ বছরে তিনবার হয়। প্রথমে ‘আউষ’ এরপর ‘আমন’, তারপরে রবি। এখন যেমন আমন চাষ শুরু হয়ে গেছে। সাধারণত আমন ধান বর্ষার প্রারম্ভে শুরু হয়। আমন ধানের জন্য আদর্শ জমি হচ্ছে মাঝারি নীচু অথবা একদম নীচু জমি। যে কোনও জমিতেই এই ধান চাষ করা যায়। তবে এঁটেল, দোঁ-আশ মাটিতে ফলন ভালো হয়। সামান্য অম্ল থেকে আরম্ভ করে ক্ষারযুক্ত জমিতে চাষ করলে ভালো হয়।
আরও পড়ুনঃ #বর্ষা ২০২০, আমন ধান চাষে চারা রোয়া ও সার প্রয়োগ (Fertilizer application) পদ্ধতি
চারা রোয়া
মূল জমিতে চারা রোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে চারার বয়স বেশী না হয়ে যায়। কারণ যত চারার বয়স বেশী হবে তত ফলনে ঘাটতি হবে। তাই যত মাসের ধান তত সপ্তাহের চারা মূল জমিতে রোয়া করা উচিত। আর পূর্ব- পশ্চিম বরাবর চারা রোয়া করতে হবে যাতে সূর্যের আলোকে বেশী করে কাজে লাগানো যায়। রোয়ার দূরত্ব সাধারণভাবে ২০ সেমি * ১৫ সেমি। আর গুছিতে চারার সংখ্যা ২-৪টির বেশী দেওয়া উচিত নয়।
বীজতলায় সার ব্যবস্থাপনা
পরিমিত ও মধ্যম মাত্রার উর্বর মাটিতে বীজতলার জন্য কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। তবে নিম্ন, অতিনিম্ন অথবা অনুর্বর মাটির ক্ষেত্রে গোবর অথবা খামারজাত সার প্রতি শতকে ২ মণ হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার চারা গজানোর ২ সপ্তাহ পর মাটিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের পরও বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি শতকে ৪০০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।
আমন ধানে জাত পরিচিতি
রোপা আমনের আধুনিক এবং উন্নত জাতগুলো হলো : বিআর-৩, বিআর-৮, বিআর-৫, বিআর-১০, বিআর-২২, বিআর-২৩, বিআর-২৫, ব্রি ধান-৩০, ব্রি ধান-৩১, ব্রি ধান-৩২, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৩৭, ব্রি ধান-৩৮, ব্রি ধান-৩৯, বিনাশাইল, নাইজারশাইল, বিনাধান-৪।উপকূলীয় অঞ্চলে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে উপযোগী উফশী জাতের (ব্রি ধান-৪০, ব্রি ধান-৪১, ব্রি ধান-৪৪, ব্রি ধান-৫৩, ব্রি ধান-৫৪, ব্রি ধান-৫৬, ব্রি ধান-৫৭, ব্রি ধান- ৬২) চাষ করা যেতে পারে।
আমন ধান চাষে সারের পরিমাণ
ধানগাছের বৃদ্ধি, শিকড়ের কার্যকারিতা এবং পুষ্ট দানার জন্য ফসফেট সার খুবই উপকারী। ফসফেট ঘটিত সার হিসেবে সুপার ফসফেট খুবই কার্যকারী। ফলনের শেষ দিকে ফসফেট প্রয়োগ করা ভালো। এছাড়াও আমন ধানের অধিক ফলন পেতে শুধু ইউরিয়া নয়, দরকার সঠিক সময়ে সুষমমাত্রায় বিভিন্ন জৈব ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করা । রাসায়নিক সারের মধ্যে ডাই এমোনিয়াম ফসফেট, ট্রিপল সুপার ফসফেট, মিউরেট অব পটাশ, জিপসাম, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট (ম্যাগসার, অ্যাগ্রোম্যাগভিট), জিংক সালফেট (মনো বা হেপ্টা) বা চিলেটেড জিংক (লিবরেল জিংক), বরিক এসিড, সলিউবর বোরন (লিবরেল বোরন) ইত্যাদি সার সঠিক সময়ে সুষমমাত্রায় ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ #বর্ষা ২০২০, আমন ধানের বীজ বাছাই, বীজ শোধন ও বীজতলা (Aman paddy seedbed preparation) তৈরী
ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ১২ থেকে ১৫ দিন পর প্রথমবার ইউরিয়া সার ক্ষেতে অতিরিক্ত প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম প্রয়োগের ১৫ থেকে ২০ দিন পর দ্বিতীয়বার এবং তার ১৫ থেকে ২০ দিন পর তৃতীয়বার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে চারা লাগানোর ১০ দিনের মধ্যে প্রতি চার গুছির জন্য ১৮ গ্রামের ১টি গুটি ব্যবহার করতে হবে। এজন্য চারা লাইনে রোপণ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ #বর্ষা ২০২০- ধান উৎপাদনে (West Bengal paddy production) এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ
পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ধানের ক্ষেতে বাঁশের কঞ্চি বা ডাল পুঁতে দিতে হবে। যাতে পাখি বসতে পারে এবং এসব পাখি পোকা ধরে খেতে পারে।
Share your comments