আমাদের দেশে এখন ভোটের ডামাডোল চলছে, রাজনীতিবিদেরা এখন কৃষকদের জন্য "ভগবান" হবার চেষ্টা করবেন, কিছু ভালো খবরও দেবেন সেটা কি এবং কবে বাস্তবায়িত হবে বিগত ৭০ বছর ধরে দেশের কৃষকেরা এমনটাই দেখে চলছে। যাই হোক তাদের এই "টোকন" দেওয়ার মানসিকতা এবং তাঁদের ভোট হাতিয়ে নেওয়ার অভিসন্ধী চিরকাল ছিল আছে এবং থাকবে। সেটা নিয়ে বেশি মাথা না খাটিয়ে বরং "চাষীরা" কিভাবে তাদের রোজগার বাড়াতে পারে তার দিকে তাঁরা নিজেরা বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বেশি ভালো হতে পারে।
আমাদের দেশে রাজ্যভেদে চাষীর জমির পরিমাণ ভিন্ন তাই এদের রোজগার এবং চাহিদার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যেহেতু বেশির ভাগ চাষীর জমির পরিমান ১ থেকে ৭ একরের মধ্যে তাই এখানে প্রতিটি চাষী যদি তাদের জমির একটা অংশ এলাকা ভেদে তার কিছু জমিতে লঙ্কা ও পিঁয়াজ ছাড়া অন্য মসলা গুলিও চাষ আবাদ শুরু করেন তবে তা লাভ জনক হতে পারে। এই মসলা গুলির মধ্যে আদা, হলুদ, মৌরি, কালো জিরে,রসুন, মেথি ইত্যাদি।এই মসলা গুলি বাজারে চাহিদা সবসময়ই আকর্ষনীয়।ঐগুলির দাম খুব একটা পড়ে যায় না এমনকি বাজার থেকে ফেলে আসতে হয় না।দেশের অন্যান্য রাজ্যের মত এই রাজ্যেও এখনো যেহেতু কৃষকদের সমস্ত ফসল "সংরক্ষণ" সুনিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার দিকে রাজ্য এগোয় নি তাই চাষীদের প্রাকৃতিক সংরক্ষণ পদ্ধতিতে তার মসলা গুলি সংরক্ষণ করা জানতে হবে এইজন্য আমাদের কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র গুলি এবং কৃষিবিশ্ব বিদ্যালয় গুলি কাছে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।
আজকে আমরা আলোচনা করবো "মৌরি" নামক মসলা নিয়ে। মৌরি মসলা নিয়ে এইজন্য আলোচনা করা যে এটি সমস্ত ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। যদিও বেলে দোয়াস মাটি হলে ফলন ভালো হয় তবে অন্য মাটিতেও এর ফলন ভালো। একর প্রতি কমপক্ষে ৩০০ কেজি থেকে ৬০০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এলাকা ভেদে প্রতি কেজি কমপক্ষে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া অস্বাভাবিক কিছুই নয়।
মৌরির কিছু ভালো জাত রয়েছে যা হলো এস ৭-৯, পি এফ ৩৫, কো ১, গুজরাট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মৌরির বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হচ্ছে আশ্বিন-কার্তিক মাস। এই সময় একর প্রতি ৪-৪.৫ কেজি বীজ ৪/৬ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রেখে সারিতে (৪৫ সেমি দূরত্বে ) অথবা ছিটিয়ে বোনা যেতে পারে।
সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে মাটি পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী সার দিলে ভালো। অথবা জমি তৈরির সময় একর প্রতি ২টন জৈব সার ও ৩ কেজি এজোটোব্যাক্টর ও পি এস বি প্রয়োগ করার অবশ্যই দরকার। মুলসার হিসেবে একর প্রতি ১২ কেজি নাইট্রোজেন, ১৬ কেজি ফসফরাস, ৮কেজি পটাশ দিতে হবে। চাপান সার হিসেবে প্রতি একরে প্রতিবারে ৬কেজি নাইট্রোজেন, বীজ লাগানোর ৩০ ও ৬০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। সেচ মোটামুটি ভাবে ২০/২৫ দিন অন্তর হওয়া দরকার।
এবার মৌরির কিছু গুণাগুণ সম্পর্কে জানা যাক :
১.রক্তস্বল্পতা (Anemia) নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য :
মৌরির অন্যান্য প্রধান উপাদান গুলো থাকে যেমন কপার,আয়রন এবং অতিপ্রয়োজনীয় ভিটামিন যেমন-রিবোফ্লাভিন,ভিটামিন-সি এবং নায়াসিন।লোহিত রক্ত কনিকা ও সেলুলার মেটাবলিজম, আয়রন,রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন-সি এবং নায়াসিন রক্তস্বল্পতার লক্ষন গুলোকে উপসম করতে সাহায্য করে।
২.গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ/ বুকজ্বালা কমাতে সাহায্য করে: (Gastroesophageal reflux disease)
মৌরিতে ঐতিহ্যগতভাবে আর্য়ুবেদ,চীনা ঔষধ এবং গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল রোগের জন্য প্রতিকার হিসেবে ইউনানী সিস্টেমের ব্যবহার করা হয়।
৩. মৌরি থেকে নেওয়া মেথানলিক নির্যাস যেমন-অম্লতা, পেট ফাঁপা এবং পেটে ব্যথ্যা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল রোগ নিয়ন্ত্রনে সাহায্যকারী উপাদান।
৪. স্ট্রোক (Stroke) নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে: মৌরি রক্তের কোলেস্টেরল মাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমানে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে,এটি প্রোটিন এবং দ্রবণীয় আঁশের একটি চমৎকার উৎস,যার কারনে মৌরি আমাদের রক্তে প্লাজমাতে উপস্থিত ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।মৌরিতে ফাইটোস্টেরোল নামক স্টেরয়েড যৌগ রয়েছে।এই উপাদান গুলো রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৫. ব্রেস্ট ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে:(Breast cancer)
মৌরি বীজ বিভিন্ন স্তন ক্যান্সার ও লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধক।
৬. লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধক: (Liver cancer)
মৌরি বীজ স্তন ক্যান্সার ও লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধক।
মৌরি যাদের জন্য অপকারী :
১. ব্রেস্ট ক্যান্সার (Breast cancer) - যেসব নারীরা এস্ট্রোজেন জনিত ক্যন্সার যেমন, স্তন ক্যান্সারে ভুগছেন তাদেরকে মৌরি গ্রহণ করা উচিৎ নয়।
২. গর্ভবতী নারীদের অধিক পরিমাণে মৌরি বা মৌরির তেল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. কিডনীর সমস্যা যারা এপিলেপটিকস এবং কিডনীর সমস্যায় ভুগছেন তাদেরকে মৌরির তেল থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪. শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া, হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়া মৌরিতে অ্যানিথল নামক তেল ও অন্যান্য কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ রয়েছে। এটা অধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করতে পারে যদিও এগুলো সঠিক পরিমাণে গ্রহণের ফলে ব্যাকটেরিয়া ও মাইক্রোবস নষ্ট করতে সহায়তা করে। অধিক পরিমাণে মৌরি গ্রহণের ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া, হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়া ইত্যাদি হতে পারে। এবং দ্রবণীয় আঁশের একটি চমৎকার উৎস,যার কারনে মৌরি আমাদের রক্তে প্লাজমাতে উপস্থিত ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কে কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। মৌরিতে ফাইটোস্টেরোল নামক স্টেরয়েড যৌগ রয়েছে। এই উপাদান গুলো রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- অমরজ্যোতি রায় (amarjyoti@krishijagran.com)
Share your comments