ধুন্দুল এক অতি-পরিচিত সব্জি | এর বৈজ্ঞানিক নাম Luffa cylindrica এবং পরিবার Cucurbitaceae | সাধারণত ধুন্দুল দু-ধরণের দেখা যায় | একধরণের ধুন্দুল যা খাওয়া হয়, এর শাঁস তেঁতো নয় বরং সুস্বাদু এবং নরম। আর একধরণের বন্য ধুন্দুল যাকে তিতপল্লা বলা হয়। এর পাকা ফল শুকিয়ে স্পঞ্জের মতো গায়ে সাবান মাখার খোসা তৈরি করা হয়। এই চাষের প্রধান শর্ত হচ্ছে উঁচু জমি যেখানে জল দাঁড়ায়না | এই নিবন্ধটিতে ধুন্দুল চাষের (Luffa gourd cultivation) সম্পূর্ণ পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা হবে, যা আমাদের কৃষকভাইদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় |
উপযুক্ত জমি ও মাটি (Soil):
ধুন্দল চাষে জমির প্রথম শর্ত হচ্ছে উঁচু, জল জমে থাকে না, গাছের কোনো ছায়া থাকে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ ধুন্দুল চাষের জন্য উত্তম । মাটি উর্বর এবং সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বীজের পরিমান:
বিঘা প্রতি ৩৩০-৪০০ গ্রাম (শতক প্রতি ১০-১২ গ্রাম) বীজের প্রয়োজন হয় |
জমি তৈরী:
৩- ৪ বার গভীর চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। আগাছামুক্ত ও মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। চাষের সময় জমিতে সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। এরপর ১ ফুট গভীর ও ১.৫ ফুট চওড়া করে মাদা বা ঝাড় করতে হবে। এক মাদা থেকে অপর মাদার দূরত্ব হবে ৫-৬ ফুট। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, জমির চেয়ে মাদা যেন কমপক্ষে ৫-৬ ইঞ্চি উঁচু হয়। প্রতি মাদায় পচা গোবর, ছাই, পচা কচুরিপানা, জৈব সার ইত্যাদি মিলিয়ে ৫-৬ কেজি, ১০০ গ্রাম টিএসপি, ৬০-৭০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে মাটিতে ভালোমতো মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর, ৫-৬ দিন অপেক্ষা করে বীজ বপন করতে হবে।
বীজ বপন:
প্রধানত, ভালো জাতের বীজ নির্বাচন করতে হবে। বীজ বপনের ২৪ ঘণ্টা আগে ভিজিয়ে রাখতে হবে। প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ পুঁতে দিতে হবে।
আরও পড়ুন - জেনে নিন চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম
সেচ:
মাটিতে রস কম থাকলেই সেচ দেওয়া অতন্ত্য প্রয়োজনীয়। তবে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের পর সেচ দেওয়া উত্তম |
সার প্রয়োগ (Fertilizer):
ভালো ফলন পাওয়ার জন্য প্রতি শতাংশ (ডেসিমাল) জমির জন্য ২০ গ্রাম পচা গোবর, ৩২০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম পটাশ, ৩২০ গ্রাম জিপসাম নিতে হবে | সমুদয় গোবর, অর্ধেক টিএসপি ও পটাশ শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে । বাকি টিএসপি, পটাশ, সম্পূর্ণ জিপসাম ও অর্ধেক ইউরিয়া মাদার গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া চারার বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
গাছের পরিচর্যা:
প্রতি মাদায় ৩-৪টি গাছ রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। জল নিষ্কাশনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাঁশের খুঁটি দিতে হবে। মাচায় বা জাংলায় যাতে সহজে উঠতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আগাছা জন্মালে সাথে সাথে পরিষ্কার করে দিতে হবে। ১৫-২০ দিন পর পর প্রতি মাদায় ৫০ গ্রাম হারে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
রোগবালাই দমন (Disease Management System):
সাধারণত, ধুন্দুল গাছে অনেক ধরণের রোগ হয়ে থাকে। রোগাক্রান্ত ও মরা পাতা সংগ্রহ করে পুঁতে ফেলতে হবে। ফল ছিদ্রকারী পোকা ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এ পোকার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। চারা অবস্থায় রেড পাম্পকিন বিটিল চারার পাতা ঝাঁঝরা করে খেয়ে ক্ষতি করে। চারার কচি পাতা ও মাথা খেয়ে এরা ক্ষতি করে। ছাই ছিটিয়ে বা মশারির জাল দিয়ে বীজতলায় চারা ঢেকে রেখে এ পোকার আক্রমণ হতে রক্ষা করা যায়।
ফসল সংগ্রহঃ
বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়। শরৎ কাল পর্যন্ত ধুন্দুল তোলা যায়। ফল বোঁটা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। খাওয়ার জন্য কচি থাকতেই সবুজ রঙের ধুন্দুল তুলতে হবে। খোসা শক্ত হয়ে এলে তা আর খাওয়ার উপযুক্ত থাকে না। রোগমুক্ত, উন্নত জাতের বীজ, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী চাষ করলে শতক প্রতি ১২০-১৪০ কেজি এবং একরপ্রতি ১২-১৪ টন ফলন পাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও হেক্টর প্রতি ৫০,০০০টি ধুন্দুল উৎপাদন করা সম্ভব।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - সয়াবিন চাষ করে লাভ ঘরে তুলতে পারেন কৃষকরা
Share your comments