কোভিড-১৯ সংক্রমণে দেশ জুড়ে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত বহু কৃষক। সরকার কৃষি সম্পর্কিত দোকান খোলা রাখার এবং পণ্য দ্রব্যবাহক যানবাহন চলাচলের অনুমতি প্রদান করেছে, যাতে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন না হন। তবে বর্তমানে মাঠে থাকা ফসল সংগ্রহ এবং বাজারজাত করার জন্য কৃষকদের উদ্দেশ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু নির্দেশ জারি করা হয়েছে। কৃষকদের এবং সকলের সুরক্ষার জন্য সরকার এই নির্দেশগুলি জারি করেছেন। সুতরাং, কৃষকদের এগুলি মেনে চলা একান্ত আবশ্যক।
বর্তমানে মাঠে থাকা ফসলসমূহ –
১) যে সমস্ত এলাকায় গম চাষ হয়, সেখানকার তাপমাত্রা দীর্ঘমেয়াদী গড় তাপমাত্রার থেকে এখনও বেশ অনেকটা নীচে। যার ফলে গম কাটা ১০-১৫ দিন পিছিয়ে এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত করলেও ফসলের উৎপাদন খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এতে কৃষকরা ঝাড়াই-মাড়াই করে বাজারজাত করার জন্য বাড়তি অনেকটা সময় পাবেন।
২) দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মাঠের বোরো ধান এখন দানার পুষ্টি দশায় আছে। এইসময় ঝলসা রোগের (নেক ব্লাস্ট) আক্রমণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এরজন্য বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ করা নির্দিষ্ট ছত্রাকনাশক যেমন ট্রায়াজোল বা স্ট্রবিলিউরিন স্প্রে করা যেতে পারে।
৩) পাকা ধান মাঠে থাকা অবস্থায় যদি অসময়ে বৃষ্টি হয়, তাহলে গাছেই দানার অ̀ঙ্কুরোদগম (কল হওয়া) আটকাতে ৫ শতাংশ লবণ জল স্প্রে করা যেতে পারে।
৪) আম গাছে এখন গুটি থেকে মুকুল ধরছে। এই অবস্থায় স্প্রে করে সার বা শস্য সুরক্ষার জন্য কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করার সময় বিভিন্ন সামগ্রী বহন করা, মেশানো এবং যন্ত্রপাতি ধুয়ে পরিষ্কার করার সময় প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৫) গ্রীষ্মকালীন ডালশস্য যেমন মুগ, ইত্যাদিতে সাদা মাছির আক্রমণ ও তার ফলে হলুদ মোজেয়িক ভাইরাস রোগ হতে পারে। এক্ষেত্রেও নিজেদের সুরক্ষা সাবধানতা অবলম্বন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ফসল তোলা, গুদামজাতকরণ এবং বাজারজাত করার সময়ে সতর্কতা -
১) কৃষি খামারে ফসল শুকানো, ঝাড়াই, মাড়াই, পরিষ্কার করা এবং প্যাকেজিং-এর বিভিন্ন স্তরে যাতে করে শ্বাসনালীতে ধুলো এবং এরোসল প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট ঘটাতে না পারে, সেজন্য মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
২) শস্যের গুদামজাত করার আগে সেগুলিকে ভালোভাবে শুকিয় নেওয়া দরকার। গুদামের পোকা যাতে আক্রমণ না করে সেজন্য পুরানো বস্তা ব্যবহার করা উচিৎ নয়। চটের বস্তাকে ৫ শতাংশ নিম দ্রবণে ডুবিয়ে শুকিয়ে নিয়ে ব্যবহার করলে ভালো হয়।
৩) ভবিষ্যতে ফসলের ভালো দাম পাবার সম্ভবনাকে সুনিশ্চিত করতে এবং খামারে উৎপাদিত শস্যকে যাতে পূর্ণমাত্রায় গুদামজাত করা যায়, সেজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যার চটের বস্তা মজুত আছে কিনা, তা আগেভাগেই দেখতে হবে।
৪) বাজার/মান্ডিতে বিক্রি করার সময় যখন ফসল গাড়িতে তোলা হবে এবং নিয়ে যাওয়া হবে, তখন উপযুক্তভাবে ব্যক্তিগত স্তরে জীবাণু প্রতিরোধী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৫) যে সমস্ত কৃষকরা বীজ উৎপাদন করছেন, তারা বীজ বিক্রয়ের জন্য উপযুক্ত নথিপত্র সহ বীজ বিক্রেতা কোম্পানিতে নিয়ে যেতে পারবেন। বিক্রয়মূল্য গ্রহণের সময়ও তাদের উপযুক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬) বীজ উৎপাদনকারী রাজ্যগুলি থেকে বীজ প্রক্রিয়াকরণ এবং প্যাকেজিং করে বীজ ব্যবহারকারী রাজ্যগুলিতে পরিবহন হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যাতে করে পরবর্তী খরিফ মরসুমে বীজের যোগান অক্ষুণ্ণ থাকে, যেমন সবুজ গো-খাদ্যের বীজ উত্তরের রাজ্যগুলিতে এপ্রিল মাসে বোনা হয়, তা দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকেই আসে।
৭) মাঠ থেকে বিভিন্ন শাকসব্জি যেমন টমেটো, ফুলকপি, বিভিন্ন ধরণের শাক, শসা, লাউ, কুমড়া ইত্যাদি সরাসরি বাজারজাত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
তথ্যসূত্র – শুভ্রজ্যোতি চ্যাটার্জ্জী
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments