
ভারতে বার্লি খুব সাধারণভাবে ব্যবহার হয়। সাধারণত ভারতের দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষেরা এটি প্রাতঃরাশে পানীয় হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। পানীয় হিসেবে বার্লির উপকারিতা অনেক। এই বার্লি প্রধানত ঘাস প্রজাতির সদস্য, একটি দানাশস্য যা কাদ্য হিসেবে বহুবিধভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই বার্লি একটি উপকারি খাদ্যবস্তু যা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর, তিব্বতীয় ঘরানার রান্নায় বার্লির বহুল প্রয়োগ দেখা যায়, তাছাড়া মধ্য ও উত্তর ইউরোপীয় পার্বত্য উপত্যকায় বসবাসকারী কৃষকরাও বার্লিকে খাদ্যহিসেবে গ্রহণ করে থাকে। অনেক জায়গায় বার্লিকে পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় কারণ এর মধ্যে বিবিধ স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে। পৃথিবীর বহুদেশে বার্লিকে তরল স্যুপ হিসেবেও গ্রহণ করা হয় আবার কোথাও বা পাউরুটি উৎপাদনের উপাদান হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই দানাশস্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান থাকে বলে এই খাদ্য খেলে যেমন দৈহিক পুষ্টি সাধিত হত তেমনি শারীরিক ওজন হ্রাসেও সাহায্য করে। খুব প্রথাগত প্রাচীন পদ্ধতিতে বার্লি চাষ করা হয়ে থাকে।
নতুন গবেষণায় বার্লির কিছু ঔষধি গুণাবলী পাওয়া গেছে, এর কালো রঙের দানাতেই নাকি রয়েছে বহুবিধ মহৌষধি গুণ। বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োম্যাডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার সহায়ক অধ্যাপক মিঃ জান জিয়া এর সাম্প্রতিকতম গবেষণা থেকে জানা গেছে এই বার্লির মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যা প্রতিচ্ছবি উৎপাদনে সক্ষম।

গবেষণায় কালো খাদ্যদ্রব্যের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে, গবেষণায় দেখা গেছে এই ধরণের কালো খাদ্যদ্রব্য সমূহ উচ্চতরঙ্গদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট আলোকে শোষণ করতে পারে এবং বাস্তবিকভাবে পরিষ্কার প্রতিচ্ছবি গঠন করতে সক্ষম।
সেঁকা বার্লির দানা বিয়ার উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয়, তাছাড়া পাউরুটি ও অন্যান্য খাদ্যবস্তুর উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, যেগুলি খাদ্যহিসেবে বেশ পুষ্টিকর। মুরগীর বুকের বিভিন্ন পেশীকলা ও মানুষের হাতের পেশীর মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন কণিকার উপস্থিতিও এই স্বচ্ছ পানীয়ের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যায়।
সেঁকা বার্লির দ্বারা তৈরি চা যা জাপান, কোরিয়া, ও চীনে একটি খুব সাধারণ মানের পানীয়। যা সাধারণত ২.৫ সেমি পুরু মুরগির বক্ষপেশী মধ্যে অবস্থিত বস্তুকে নির্ধারণ করতে পারে, সেই কারণে এই তরল পদার্থটি মানুষের গলার মধ্যে দিয়ে নামার সময় গলার মধ্যে থাকা প্রতিটি পদার্থকণাকে নির্ধারণে সক্ষম।
গবেষকরা বলছেন রোস্টেড বার্লি দ্বারা তৈরি তরল পদার্থ দিয়ে মানবদেহের গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল ডিসঅর্ডার এর কারণ নির্ধারন করা যায়।

ডিস্ফ্যাগিয়া রোগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে, ডাক্তাররা তাদের রোগীদের একধরণের পুরু দানাদার তরল পান করান যার নাম বেরিয়াম। এই তরল পান করানোর পর ডাক্তাররা রোগীর X-RAY, MRI ও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করান গলার ভেতরের পদার্থের অবস্থান জানার জন্য। প্রতিটি প্রযুক্তিই রোগীর সুরক্ষার ক্ষেত্রে বেশ সীমাবদ্ধ, কারণ এই চিকিৎসা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ ও এর পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই।
বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রায় ২০০ প্রকারের চা, চকোলেট, জড়িবুটি, ও খাদ্যসামগ্রী এনেছিলেন, যার মধ্যে বার্লি দ্বারা উৎপাদিত চা ও খাদ্যসামগ্রীকেই তারা চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত বলে নির্বাচিত করেছেন। বার্লির সেঁকা খাদ্যসামগ্রী যখন সাধারণ লেসার রশ্মিকে শোষণ করে তখন তা গলা থেকে সমগ্র গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল অংশকে পরিষ্কার ভাবে প্রতিভাত করে । যদিও এই প্রকার আশ্চর্য তরলকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষিত করা যায় না তবুও এর সাহায্যে সমগ্র অভ্যন্তরীণ অঙ্গের চিত্র পরিষ্কার ভাবে লব্ধ হয়, এবং এই তরলের স্বচ্ছতা এতটাই বেশী যে ডাক্তাররা সহজেই দেখতে সক্ষম হয় যে দেহের কোন অংশে কি চলছে।

এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের ফলে সহজেই গলার মধ্যে চলা গোলযোগের কারণ সহজেই জানা যাবে, আজকাল অধিকাংশ আমেরিকাবাসিই গলার রোগে কমবেশি আক্রান্ত। এখন যেহেতু অধিকাংশ খাদ্যতে বার্লি থাকে তাই এই তরল প্রয়োগে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার মূল কারণ জানা সম্ভবপর হচ্ছে।
প্রোফ. জান জিয়া বলেন-সত্যিই এইটি একটি অভাবনীয় বিষয়, তাও আবার সাধারণ একটি দানাশস্য থেকে তৈরী – যা হাজার হাজার বছর আগে থেকেই আমরা চাষ করে আসছি, এবং এই শস্য দিয়ে আমরা চা, পাউরুটি, বিয়ার ইত্যাদি তৈরী করে থাকি- আর এখন আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানেও এর ব্যবহার করার চেষ্টা করছি তাও আবার চিকিৎসার সুবিধার্থে প্রতিপভা তৈরির কাজে।
- প্রদীপ পাল
Share your comments