পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া কুল চাষের (Apple Ber fruit) জন্য অত্যন্ত উপযোগী | কুল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন | কুল মূলত খরা অঞ্চলের ফসল | খরা ভূমিতে সহজেই জন্মায় | অল্প পুঁজি, অল্প জমি এবং অল্প সময়ে কুল চাষ করে সফলতা আনা সম্ভব। চারা লাগানোর প্রথম বছর ছাড়াও প্রতি বছর গাছ ছাঁটার পর জমি ফাঁকা হয়ে যায়। তখন মৌসুমী সবজি চাষ করে কুল বাগানের বাৎসরিক পরিচর্যা খরচ উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব। এই সময়টুকুতে বেগুন, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়শ, অথবা হাইব্রিড ধনেপাতার চাষ করা যায় ।
সাধারণত, ১ বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে প্রথম বছর চারার দরকার হয় ১৫০টি। সেক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৬ ফুট। ৩ বছর পর দুটি গাছের মাঝ থেকে একটি গাছ উঠিয়ে ফেলতে হবে এবং গাছের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫টি।
জলবায়ু(Climate):
বালুময় চরাঞ্চলে বাড়ির আঙ্গিনায় রৌদ্রজ্জ্বল স্থানে এমনকি আপনার বাড়ির ছাদে টব কিংবা ড্রামে কুল চাষ (Indian Jujube) করা যায়। মধ্য মে থেকে মধ্য আগষ্ট পর্যন্ত কুলের চারা রোপনের উৎকৃষ্ট সময়।
রোপন পদ্ধতি:
জমি তৈরিতে শেষ চাষের সময় বিঘা প্রতি ৬০ কেজি টিএসপি, ৩০ কেজি ইউরিয়া, ৩০ কেজি এমওপি, ৬০ মণ পঁচা গোবর ও দুই কেজি পাউডার সোহাগা প্রয়োগ করে মই দিয়ে জমি সমান করতে হবে এবং প্রতি ১২ ফুট অনত্দর ১৫ ইঞ্চি প্রস্থ ৬ ইঞ্চি গভীর নালা তৈরি করে নালার মাটি উভয় পাশে ছিটিয়ে দিয়ে জমিতে ১২ ফুট প্রস্থের বেড তৈরি করতে হবে। এর ১ সপ্তাহ পর প্রতি বেডের মাঝখানে ৬ ফুট অন্তর চারা রোপন করতে হবে।
আরও পড়ুন -Corossol Fruit Farming: জেনে নিন ক্যান্সার প্রতিরোধক করোসল ফলের চাষাবাদ পদ্ধতি
মাদা তৈরি:
সারি থেকে সারি ১২ ফুট এবং চারা থেকে চারা ৬ ফুট দূরত্বে চারা রোপনের লক্ষ্যে আপনাকে উল্লেখিত দূরত্বে দুই ফুট দূরত্বে দুই ফুট দৈর্ঘ্য, দুই ফুট প্রস্থ এবং দুই ফুট গভীর গর্ত করতে হবে। গর্ত থেকে উত্তোলিত মাটির সাথে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০গ্রাম এমওপি, ১০০ গ্রাম সরিষার খৈল ও ১০ গ্রাম পাউডার সোহাগা এবং ১৫-২০ কেজি পঁচা গোবর ভালভাবে মিশিয়ে গর্তের পাশে ঢিবি করে রেখে দিতে হবে এক সপ্তাহ। তারপর সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে গর্তটি ভরাট করার দুই সপ্তাহ পর কুলের চারাটি রোপন করে একটি কাঠি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। কলমকৃত অংশের নীচ থেকে গজানো ডাল বা কুশি সবসময় কেটে দিতে হবে। নতুবা জংলি গাছের প্রভাবে কলম চারাটি মারা যেতে পারে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
গাছ প্রতি ইউরিয়া ৫০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম এবং খৈল ৫০ গ্রাম একসাথে মিশিয়ে গাছের ছয় ইঞ্চি দূরত্বে রিং প্রয়োগ করে হালকা নিড়ানি দিয়ে মাঠের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছ প্রতি ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম এক সাথে মিশিয়ে গাছের ৬ ইঞ্চি দূরত্বে প্রয়োগে হালকা নিরানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও গাছের বৃদ্ধি কম হলে প্রথম প্রয়োগের ৪০ দিন পর গাছ প্রতি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতি বছর কুল ওঠানোর পর মার্চ মাসের শেষের দিকে গাছগুলোর আকার অনুসারে ৩-৫ ফুট উচ্চতায় মূল কাণ্ডটি রেখে সব ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে এবং বাগানের মাটি হালকা করে কুপিয়ে প্রথমবার জমি তৈরির মত গোবর ও অন্যান্য সার পরিমাণ মত প্রয়োগ করে নালাসহ বেড তৈরি করে দিতে হবে।
রোগবালাই ও দমন(Disease management system):
কুল গাছ সাধারণত বিছাপোকা, লাল ক্ষুদ্র মাকড়সা, কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা ও এক ধরণের ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়। বিছাপোকা ও অন্যান্য পাতাখেকো পোকার জন্য প্রতি লিটার জলে ২ মি.লি. পাইরিফ্স জাতীয় কীটনাশক মিশিয়ে সমস- গাছে স্প্রে করে দিতে হবে। মাকড়শা দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতি লিটার জলে ২ টাফগড় সাথে ২ গ্রাম থেয়োভিট মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হলে প্রতি লিটারে ১ মি.লি. হারে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক সপ্রে করতে হবে। ছত্রাকের আক্রমণ হলে প্রতি লিটার জলতে কার্বেনডাজম এবং ২ গ্রাম মেনকোজেব ভালভাবে মিশিয়ে সমস- গাছে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া অধিক ফলনের জন্য ফুলে লিটুনেস বা এ্যাগনল এবং ভালমানের পিজিআর ব্যবহার করুন।
পরিচর্যা:
বর্ষায় কুল বাগানে অনেক আগাছা জন্মায় | এই জন্য সবসময় আগাছা পরিস্কার রাখতে হবে | প্রয়োজনে নিমতেল ব্যবহার করা যেতে পারে অন্য পোকা-মাকড়ের জন্য |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Mandarin Farming: কিভাবে কমলালেবু চাষ করবেন? শিখে নিন সম্পূর্ণ পদ্ধতি
Share your comments