
কেঁচো সার প্রকৃতির একটি আশ্চর্য দান। এটিকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে একদিকে যেমন ফসল ভালো হবে অন্য দিকে মাটির স্বাস্থ্য বজায় থাকবে আবার রাসায়নিক সারের প্রয়োজনও কমবে।এতে ধীরে ধীরে চাষীর চাষে খরচও কমাবে।
কিন্তূ বাস্তবে যা লক্ষ করা যায় তা হলো, কিছু বেক্তিগত উদ্যোগ কিংবা সরকারী বা বেসরকারি সামান্য কিছু উদ্যোগে কেঁচো সার এর ব্যবহার কতিপয় চাষীরা করে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এর মাধ্যমে চাষীদের একটি কংক্রিটের পিট ও কিছু কেঁচো দেওয়া হয়েছিল কিন্ত বাস্তবে বিষয়টা অনেকটা খাতায় কলমে দেওয়ার মতো হয়েছে সেখানে কোনো কেঁচো ই আজ বেঁচে নেই ! নুতুবা ওই পিট টি অন্য কম্পোষ্ট জৈব সার রাখা হয়েছে।কোথাও আবার পিটটি ই ঠিক মতো হয় নি। যাইহোক, আমাদের দেশের বেশিরভাগ প্রজেক্ট সঠিক পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ এর অভাবে ধুঁকতে থাকে।এটি থেকে যত দ্রুত বের হওয়া যায় ততই দেশের মঙ্গল।
কেঁচো সাধারণত দুই ধরনের: ক)এপিজেয়িক(বাহিস্তর বাসী)
খ)এন্ডোজেয়িক(নিন্মস্তর বাসী)
আমাদের পৃথিবীতে কমবেশি প্রায় তিন হাজার প্রজাতির কেঁচো মেলে।এর মধ্যে ৫০৯ টি প্রজাতির কেঁচো আমাদের দেশে পাওয়া যায়। এই গুলির মধ্যে মাত্র তিনটি প্রজাতি কেঁচো সার তৈরির জন্য আদর্শ বলা যায়।সেগুলি হল
আইসিনিয়া ফেটিডা(Eisenia fetida),
ইউদ্রিলাস ইউজেনি (Eudrillus euginiae) ও
পেরিও নিকস একসে ভেটাস(perionyx excavatus) ।

এই তিনটি প্রজাতি আদর্শ এর কারণ হলো এরা প্রতিদিন তাদের দেহের ওজনের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ খাবার খায় তা হজম করে বেশি জৈব সার তৈয়ারিতে সাহায্য করে।
এরা প্রকৃতিতে একটু শক্ত পোক্ত হয় বলে বিরূপ পরিবেশের সঙ্গে এরা যেমন মানিয়ে নিতে পারে তেমনি এদের মৃত্যু হার অনেক কম।সাধারণত এরা প্রায় ১-৩ বছর অবধি বাঁচতে পারে ও বংশ বিস্তার করতে পারে।
আইসোনিয়া ফেটিভা প্রজাতির সঙ্গে স্থানীয় কেঁচো ব্যবহার করলে কেঁচো সার অতি দ্রুত ও উন্নত মানের হয়।কারণ এরা যে পরিমান খাদ্য গ্রহণ করে তার সামান্য ৫-১০% (শতাংশ) তাদের দেহের প্রয়োজনে কাজে লাগায় বাকিটা অর্ধ ভুক্ত অবস্থায় মলের আকারে এই কেঁচো বের করে দেয় ।এইসব কেঁচোর অন্ত্রে নানা ধরনের উৎসেচক, জীবাণু থাকে যা গৃহীত খাদ্যের মধ্যে মিশে গিয়ে পচন ক্রিয়ার মাধমে উন্নত মানের সারে পরিণত হয়।
প্রতি বিঘাতে ফসলে ২০০-২৫০ কেজি কেঁচো সারের প্রয়োজন হয়। বাগানে প্রতি গাছ পিছু ১০০-২০০গ্রাম কেঁচো সার প্রয়োগ করা বাঞ্চনীয়।
চিরাচরিত পদ্ধতিতে বাড়িতে তৈয়ারী যে কোনো "কম্পোস্ট" সারের তুলনায় কেঁচো সারে নাইট্রোজেন ০.৮৫% ,ফসফেট ২.২০%,পটাশ ০.২৫,ম্যাঙ্গানিজ ২৭.৫%,জিঙ্ক ৯.৫০% ও কপার ২.৮৯% (শতাংশ)বেশি পাওয়া যায়।
---অমর জ্যোতি রায়(amarjyoti@krishijagran.com)
Share your comments