আমরা জানি লেবু বর্গীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, শর্করা, ও অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, এই কারণে লেবু জাতীয় সমস্ত ফলগুলি মানব শরীরের বিশেষ উপকার সাধন করে, আসলে লেবুর মধ্যে সমৃদ্ধ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুলি আমাদের শরীরে ঔষধের মতো কাজ করে থাকে, এই জন্য এই ফল আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেবু বর্গীয় ফলের মধ্যে আছে সরবতি লেবু, বাতাবী লেবু, আঙ্গুর, পাতিলেবু, কমলালেবু, ও মৌসম্বি লেবু ইত্যাদি অন্তর্নিহিত রয়েছে। এই লেবু জাতীয় গাছের শরীরে সুতো কৃমির মতো একধরনের ছোট ছোট জীবেরা বাসা বাঁধে যাদের খালি চোখে দেখা একেবারেই অসম্ভব। এই সুতোকৃমিরা মাটির মধ্যে গাছের শিকড় অংশটিকে আক্রমণ করে, এবং শিকড়ের থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে বেঁচে থাকে, ফলে লেবুজাতীয় গাছের পুষ্টি ব্যাহত হয়। আসলে লেবু গাছে সুতোকৃমি ধরেছে কিনা এটা বোঝা খুবই দুষ্কর। এই রোগের লক্ষণ সমূহ হল এতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, পাতা হলুদ হতে থাকে, চওড়া পাতা গুলি দিনের বেলায় নুইয়ে পড়ে, তাছাড়া ফুলের বিকশিত হওয়া বা ফলে পরিণত হওয়ার উপড়ও যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।
টেলেংকুলাস সেমিপেনিট্রন্স সুতোকৃমি দ্বারা লাবু জাতীয় সমস্ত গাছ যেমন-পাতিলেবু, কমলালেবু, সর্বতি লেবু, বাতাপি লেবু ইত্যাদি আক্রান্ত হয়। এই ধরণের কৃমিরা গাছের ভেতর থেকে গাছের ক্ষতি সাধন করতে শুরু করে, অর্থাৎ এরা গাছের ক্ষেত্রে অন্তঃপরজীবী হিসাবে পরিগণিত হয়।
এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো পরজীবী দুই ধরণের হয়, অন্তঃপরজীবী ও বহিঃপরজীবী। পুরুষ লার্ভাগুলি কিছু না খেয়েই বুড়ো হয়ে যায় এবং এই রোগ তৈরির ক্ষেত্রে এদের কোনো সম্পর্কই নেই। বরং মাদা লার্ভাগুলি শিকড়ের ভেতরে ঢুকে খেয়েদেয়ে বেশ হৃষ্টপুষ্ট হতে থাকে। ২৫-৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সুতোকৃমি তার সমগ্র জীবনকাল ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে দেয়।
রোগের লক্ষণ -
গাছের পুষ্টিরস সুতোকৃমির দ্বারা শোষিত হয়ে যাবার কারণে গাছের জীবনীশক্তি কমতে থাকে। সুতোকৃমির দ্বারা প্রভাবিত গাছের পাতা হলুদ হতে থাকে। এরপর গাছের মুকুল গুলি ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত শুকোতে থাকে, এর জন্য এই ধরণের রোগকে স্লোডিক্লাইন বা মন্দক্ষয় রোগও বলে। রোগী গাছের ফলের আকার খুব অস্বাভাবিকভাবে ছোটো হয় এবং অকালে ফল ঝোরে যায়। প্রথমদিকে সুতোকৃমির আক্রমণের লক্ষণসমূহ বোঝা যায় না, ৭-৮ বছর বয়সের গাছগুলিতে এই লক্ষণ খুব বেশি করে পরিলক্ষিত হয়। এই বয়সের গাছের শিকড় অস্বাভাবিকভাবে অনেকটা মোটা হয়ে যায়। শিকড়ের রঙ কালো বা মাটির রঙের হয়ে যায়, কারণ এর রঙ সাদার পরিবর্তে ময়লা ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করে। খুব বেশী প্রভাবিত গাছগুলি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে ফলে তারা হেলে যেতে থাকে।
রোগের উপশম -
১) রোগবিহীন গাছগুলিকে নির্বাচন করতে হবে। এই জন্য আমাদেরকে এমন নার্সারী থেকে উদ্ভিদ নির্বাচন করতে হবে যা সরকারী স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
২) গাছের চারপাশে ৯ বর্গ মিটার স্থানে কার্বোফিউরান (ফিউরাডান থ্রি জি) ঔষধ প্রতি ১৩গ্রাম/বর্গ মিটার হিসাবে অথবা নিমখোল ১কেজি/গাছ হিসাবে নতুবা ফ্যোর্ডন ৭গ্রাম/বর্গ মিটার হিসাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে, শুধু মনে রাখতে হবে ফুল আসার আগে ঔষধগুলি প্রয়োগ করতে হবে।
৩) প্রতি দুটি লেবু গাছের মাঝখানে যদি রসুন পিঁয়াজ বা গাঁদাফুল চাষ করা যায় তাহলে তা যেমন লেবুগাছের সুতোকৃমি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করবে তেমনি উৎপাদনকে অনেক বেশি লাভজনক করবে।
৪) যদি কৃমি প্রতিরোধী উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মূলের স্টক লাগানো হয় তাহলে সেই কলমের গাছের ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
আরও পড়ুন - Ice Apple Farming: আপনিও কি মিষ্টি তাল শাঁস চাষে ইচ্ছুক? জেনে নিন কৌশল
ভারতের বাজারে যে ধরণের লেবুর চাহিদা সবথেকে বেশি, সেই ধরণের লেবু চাষে (Lemon Farming) জোর দিতে হবে৷ জমিতে শুধু লেবুই নয়, অন্যান্য সহায়ক ফসলের চাষও করতে পারেন, যেমন মটর, ফ্রান্সিসি বিন থেকে শুরু করে অন্যান্য সবজি, যা জমির উর্বরতাকে আরও বৃদ্ধি করবে৷ সেই সঙ্গে কম সময়ে লেবুর পাশাপাশি অন্যান্য সবজি চাষেও উপার্জনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে৷
আরও পড়ুন - Onion Farming: স্বল্প ব্যয়ে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা
Share your comments