কৃষিজাগরন ডেস্কঃ মাঘ মাসের কনকনে শীতের হাওয়া এবং তার সাথে মাঝে মাঝে শৈত্যপ্রবাহ শীতের তীব্রতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়ে যায়। কথায় আছে মাঘের শীতে বাঘ পালায়। কিন্তু আমাদের কৃষকভাইদের মাঠ ছেড়ে পালানোর কোন সুযোগ নেই। কেননা এসময়টা কৃষির এক ব্যস্ততম সময়। আর তাই আসুন আমরা সংক্ষেপে জেনে নেই মাঘ মাসে কৃষিতে করণীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো।
বোরো ধান
-
বোরো ধানে এইজেড ও জাত অনুসারে চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
-
চারা রোপণের ৭-১০ দিনের মধ্যে ৩টি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে পারেন। এতে বিঘা প্রতি ২০ কেজি গুটি ইউরিয়ার প্রয়োজন হয়;
-
চারা রোপণকালে শৈত্য প্রবাহ গুরু হলে কয়েকদিন দেরি করে চারা রোপণ করুন:
-
বোরো ধানের চারা রোপণের পর শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলে জমিতে ৫-৭ সেন্টিমিটার জল ধরে রাখুন।।
-
বোরো ধানে নিয়মিত সেচ প্রদান, আগাছা দমন, বালাই ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হবে। AWD পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করলে জল সাশ্রয় হয় ও ফলন বাড়ে।
-
রোগ ও পোকা থেকে ধান ফসলকে রক্ষা করতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ,আন্তঃপরিচর্যা, বান্ত্রিক দমন, উপকারী পোকা সংরক্ষণ, ক্ষেতে ডালপালা পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা, আলোর ফাঁদ এসবের মাধ্যমে ধানক্ষেত বালাই মুক্ত করতে হবে।
-
অক্রমণের মাত্রা বেশি হলে শেষ উপায় হিসেবে সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে:
আরও পড়ুনঃ একসময় ৪০ হাজার প্রজাতির ধানের চাষ,বর্তমানে বিলুপ্ত,ফিরিয়ে আনতে মরিয়া সরকার
গম
-
গমের জমিতে যেখানে লন চারা রয়েছে তা পাতলা করে দিতে হবে।
-
গম গাছ থেকে যখন শিষ বের হয় বা গম গাছের বলে ৫৫-৬০ দিন হয় তবে জরুরিভাবে গম ক্ষেতে একটি সেচ দিতে হবে। এতে গমের ফলন বৃদ্ধি পাবে।
-
ভালো ফলনের জন্য নানা গঠনের সময় আরেকবার সেচ দিতে হবে।
-
গম ক্ষেতে ইদুর দমনের কাজটি সকলে মিলে একসাথে করতে হবে।
ভুট্টা
-
ভুট্টা ক্ষেতে গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে।
-
ভুট্টা ফসলে এইজেড ও জাত অনুসারে বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর প্রথম ভিপ্তি, ৪০-৪৫ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি ইউরিয়া ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
-
ভুট্টার সাথে সাথী বা মিশ্র ফসলের চাষ করে থাকলে সেগুলোর প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে।
-
ভুট্টা ফসলে ফল আর্থিওয়ার্ম পোকার আক্রমন দেখা দিতে পারে।কাজেই নিয়মিত মনিটরিং, মাউটিং ও প্রয়োজনে এমন ব্যাবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ কৃষকদের জন্য় স্মার্ট চাষ পদ্ধতি শিখে নিলেই আয় হবে দ্বিগুন
আলু
-
আলু ফসলে নাবি ধাসা রোগ বা মড়ক রোগ দেখা দিতে পারে, মড়ক রোগ দমনে দেরি না করে ডায়থেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা ইন্ডোফিল নিয়মিত স্প্রে অথবা অনুমোদিত ছত্রাকনাশক মাত্রানুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।
-
তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে
-
আলু গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে;
-
আলু তোলার পর ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
শীতকালীন সবজি
-
বেশি ফলন পেতে শীতকালীন শাকসবজি যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, গুলকপি, শালগম, গাজর, শিম, লাউ, কুমড়া, মটরউটি এসবের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।
-
টমেটো ফসলের মারাত্মক পোকা হলো ফলছিদ্রকারী পোকা। সমন্বিত বালাই দমন পদ্ধতিতে এ পোকা দমন করতে হবে।
সাধারণত এ সময় আম গাছে মুকুল আসে। গাছে মুকুল আসার পর থেকে ফুল ফোটার আগে পর্যন্ত আক্রান্ত গায়ে টিল্ট-২৫০ ইসি প্রতি পিটার জলে ০.৫ মিলি অথবা ২ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার জল মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আমের আকার মটর দানার মতো হলে গাছে ২য় বার স্প্রে করতে হবে।
এসময় মুকুলে অসংখ্য হলার নিষ দেখা যায়। আম গাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বেই একবার এবং এর একমাস পর আর একবার প্রতি লিটার পানির সাথে ১.০ বিল সিমবুস/ফেনম/ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে গাছের পারা, মুকুল ও ডালপালা অলোভাবে ভিজিয়ে সেপ্র করতে হবে
Share your comments