সবজির প্রতি ভালোবাসা বাঙালির বরাবরের। নিরামিষের বিভিন্ন পদ বাঙালিরা আমিষের পাশাপাশি চেটেপুটে খায়। নিরামিষ পদ যখন আমিষের সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে যায়, তখন তাকে সোনায় সোহাগ বলতে কোনও দ্বিধাই থাকে না। পটল। বাঙালিদের রসনা তৃপ্তির অন্যতম এক সবজি, যেকোনও ভাবে খাওয়া যায় । পটল চিংড়ি, দই পটল, পটল মোরব্বা অথবা পটলের পুর-- এই সবকটি পদ বাঙালিদের অত্যন্ত আদরের। চাহিদা বেশি বলে পটলকে একটি অর্থকারী ফসল হিসাবেই ধরা হয় ।
পটল চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি
- মাটির ওপর ছড়িয়ে যাওয়া লতার গাঁট থেকে শিকড় বেরিয়ে মাটির ভিতর চলে যায় এবং শিকড়গুলো ক্রমশঃ মোটা হতে থাকে। মাটির উপরের স্তরে জলের অভাব হলে এই শিকড় দিয়ে মাটির গভীর থেকে রস টেনে গাছ বেঁচে থাকে।
-
শীতের ঠান্ডায় মাটির উপরের লতাপাতা মরে যায় কেবল মাটির উপরের লতাপাতা মরে যায় কেবল মাটির নীচে মোটা শিকড় বেঁচে থাকে যা থেকে বসন্তকালে আবার নতুন গাছ গজায়।
-
পটলচাষে মাটি ও জমির অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কম বেশী যে কোন মাটিতেই পটল চাষ করা যায়, তবে জলনিকাশী ব্যবস্থাযুক্ত দোঁয়াশ, বেলে দোঁয়াশ মাটিই পটলের পক্ষে উপযুক্ত।
-
নদীর চরের পলিমাটি পটল চাষের পক্ষে খুবই ভাল। মাটির গভীরে ছড়িয়ে যাওয়া শেকড় মাটির তলায় নদীপ্রবাহ থেকে জল নিতে পারে বলে সেচের প্রয়োজন হয়না। কিন্তু বর্ষায় গাছ ডুবে যায় বলে চরের ফসল বেশী দিন স্থায়ী হয় না।
-
এঁটেল, লাল ও বালি মাটিতে পরিমাণমত জৈব সার মিশিয়ে পটলচাষের উপযোগী করে নিতে হবে।
-
পটল কিছুটা লবণাক্ত মাটি ও জল সহ্য করতে পারে।
মাটি
পটল চাষে সাধারনত দোআশ বা বেলে দোআশ মাটি বেশি উপযোগী। চাষের জমি মাঝারি উঁচু থেকে উঁচু হতে হবে। তবে পলিমাটিতেও পটল এর চাষ ভালো হয়। জমিতে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
চাষের মরসুম
সাধারনত অক্টোবর মাস থেকে নভেম্বর মাস চারা রোপনের উপযুক্ত সময়। এই জন্য অক্টোবর মাস আসার আগেই জমি তৈরি করতে হবে।
চারা তৈরি
পটলের চারা পলিব্যাগেই তৈরি করে ফেলা সম্ভব। পলিব্যাগে শাখা কলম ও লাগানো যায়। এর মধ্যে যে চারা তৈরি হয় তাতে চারার জীবন কাল বৃদ্ধি পায় এবং ফলন ভালো হয়।
আরও পড়ুনঃ জামরুল চাষ করবেন কিন্তু জায়গা নেই? বাড়ির ছাদেই করুন জামরুল চাষ,শিখে নিন পদ্ধতি
জমি তৈরি
উন্নত ফলন পেতে জমি ৪ থেকে ৫ টি চাষ ও মই দিয়ে, মাটি একেবারে ঝুরঝুরে করে চাষ করে দিতে হবে। এবং উপরের মাটি সমান করে দিতে হবে।
চারা রোপন
পটল সাধারনত বেডে চাষ করলে এর ফলন সবচেয়ে ভালো হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রতিটি বেড ১-১.৫ মিটার চওড়া হয়ে থাকে। এক বেড থেকে আরেক বেডের মাঝে নালা তৈরি করে দিতে হবে।
সার প্রয়োগ
ভালো ফলন পেতে গেলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। পটল চাষের ক্ষেত্রে প্রতি মাদায় গোবর সার লাগবে ১ কেজি, খৈল ২৫০ গ্রাম, ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, টিএসপি ১৭০ গ্রাম, এমওপি ১৩০ গ্রাম এবং জিপসাম ১৫০ গ্রাম।
চারা রোপন করার সময় এই সব সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছে যদি ফুল ধরা কমে যায় তখন মাদা প্রতি ৫০০ গ্রাম গোবর, ৭০ গ্রাম ইউরিয়া, ৯০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি দিতে হবে। তাহলে গাছের ফলন বেড়ে যাবে। সার প্রয়োগের পর প্রয়োজন বুঝে জল সেচ দিতে হবে।
পটল সাধানরত দীর্ঘমেয়াদি ফসল। তাই ফসল সংগ্রহের পর থেকে প্রতি মাসে যদি প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া ১৮ কেজি, টিএসপি ২৫ কেজি, এমপি সার ১৪ কেজি উপরি প্রয়োগ করা যায় তাহলে ফলন বেশি হয়ে থাকে।
মাচা তৈরি
পটল চাষে জমিতে মাচা তৈরি করে দিলে ফলন খুব ভালো হয়। পটল যেহেতু লতা জাতীয় উদ্ভিদ, সেহেতু এটি যদি মাটির উপরে জন্মা তাহলে পটলের গায়ে সাদা সাদা দাগ বা হলুদ রঙের দাগ পড়ে। এতে করে বাজার মূল্য ক্রমশই হ্রাস পায়। তাই পটল চাষের ক্ষেত্রে বাঁশ দিয়ে বা দড়ি দিয়ে মাচা তৈরি করে দিতে হবে।
সেচ ব্যবস্থা
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে সেচ দিতে হবে। পটল জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই জমিতে যেন জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যাতে করে অতিরিক্ত জল বের হয়ে যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ
পটল সাধারনত কচি অবস্থায় সংগ্রহ করতে হয় । সকালে বা বিকালে সংগ্রহ করা ভালো। ফুল ফোটার ১০-১২ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করার উপযোগী হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ রোজ খাচ্ছেন তরমুজ? এগুলি জানেন?
জাত ভেদে ভিন্নত দেখা যায়। ফল যখন পূর্ণ আকার ধারন করে কিন্তু বেশি পরিপক্ক হয় না, তাই তখনই সংগ্রহ করা উচিত। ফল বেশি পরিপক্ক হতে দেওয়া ঠিক নয়। এতে করে বীজ বেশি হয় এবং বীজ শক্ত হয়ে যায় ফলত, ফসল আর খাওয়ার উপযোগী থাকে না। প্রতি সপ্তাহে এক বার করে ফল সংগ্রহ করা যায়।
Share your comments