দিন দিন ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে বাড়ছে ইমারতের সংখ্যা। ফলত স্বাভাবিকভাবেই কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। তবে জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে আমাদের দেশের কৃষকেরা উদ্ভাবন করেছেন একটি বিশেষ ভাসমান কৃষি পদ্ধতির। মাটি ব্যতিরেকে জলের উপর কচুরী পানা, দুলালী লতা, শ্যাওলা সহ আরও নানান জলজ উদ্ভিদের দ্বারা তৈরী বেডের উপর এই ভাসমান চাষ পদ্ধতির নাম হাইড্রোপনিক পদ্ধতি।
স্তর তৈরীর প্রক্রিয়া : কচুরীপানা, দুলালী লতা, কলমিলতা, শ্যাওলা সহ নানান জলজ উদ্ভিদ স্তরে স্তরে সাজিয়ে দুই থেকে তিন ফুট পুরু করে বাঁশ ও দড়ি দিয়ে বেঁধে স্তর ও ভাসমান বীজতলা তৈরী করা হয়। পানা ও লতা দ্রুত পচানোর জন্য স্বল্প পরিমাণে ইউরিয়া সার ব্যাবহার করে ৭-১০ দিন ফেলে রাখা হয়। এক একটি ভাসমান স্তরের বেডের সাহায্যে ৫০-৬০ মিটার ( ১৫০-১৮০ ফুট) লম্বা ও ১.৫ মিটার ( ৫-৬ ফুট) প্রশস্ত এবং প্রায় ১ মিটার (২-৩ ফুট) পুরু বীজতলা তৈরী করা হয়। স্তরগুলি যাতে ভেসে না যা,য় সে জন্য শক্ত বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়।
তবে এই স্তর তৈরীর পর এতে সরাসরি বীজ বপন সম্ভব নয়। তাই কৃষকেরা বীজ বপনের জন্য আধ পচা টোপাপানা বা কচুরিপানা, দুলালী লতা ইত্যাদি দিয়ে বলের মত গোলাকৃতি এক ধরণের আধার তৈরী করেন। তারপর এর মধ্যে নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়ো দিয়ে দড়ি বেঁধে সম্পূর্ণ করা হয় এই আধার। একে বলা হয় দৌলা বা মেদা। আধার তৈরীর আগে কোন সিক্ত জায়গায় বীজ অঙ্কুরিত করে নেওয়া হয়। তারপর দৌলার মধ্যে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে গর্ত করে বিভিন্ন সবজির অঙ্কুরিত বীজ পুঁতে রাস্তার পাশে দৌলাগুলি ৩-৭ দিন লাইন করে শুকনো জায়গায় রাখা হয়। সাজানো দৌলা থেকে চারা নির্গত হলে সেখান থেকে সরিয়ে স্তরে বসিয়ে দেওয়া হয়।
চারার যত্ন : অঙ্কুরিত চারা স্তরে স্থানান্তরের পর পরিপূর্ণ হতে প্রায় ২০-২২ দিন সময় লাগে। এই সময় অঙ্কুরিত চারাগুলোকে পুষ্টি সরবরাহ করে পূর্ণ হতে সহায়তা করার জন্য ৫-৬ দিন পর পর ভাসমান স্তরের নিচ থেকে নরম কচুরীপানা ও শ্যাওলা টেনে এনে দৌলার গোড়ায় বিছিয়ে দেওয়া হয়। চারা সতেজ রাখার জন্য সেচ প্রদান করা হয় স্তরে।
ফসল উত্পাদন : একমাস পরিচর্যার পর চারা বিক্রির জন্য উপযোগী হয়ে ওঠে। চারা পরিপূর্ণ হওয়ার ১ সপ্তাহের মধ্যে কৃষক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা এই চারা কিনে নিয়ে যান। এরপর এই চারা রোপন করা হয় ভাসমান স্তরে। মাটিতে চারা রোপন করলে জল জমে চারার গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু ভাসমান বেডে সেই সম্ভবনা থাকে না। এভাবে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, টমেটো, ক্যাপসিক্যাম, ধনে পাতা, করলা ইত্যাদি এবং বিভিন্ন ধরণের শাক সবজি হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করা যায়।
স্বপ্নম সেন (swapnam@krishijagran.com)
Share your comments