
২০০৯ সালে বিধ্বংসী আয়লার দাপটে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবন অঞ্চল। ৫০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির চাষ একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। আয়লা ঝড়ের তান্ডবে নোনা জল ঢুকে পরে বিঘার পর বিঘা জমি পতিত হয়ে পড়ে। ফলে রুটি-রুজিতে টান পড়ে কৃষকদের। উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ওই বিপর্যয়ের ৯ বছর পর এখনও আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে সেভাবে চাষাবাদ হয় না। ফলে ডালশস্য চাষ করে ফের ওইসব জমির উর্বরতা ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছ রাজ্য সরকার। চাষিদের উৎসাহ দিতে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বীজ ও সার। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বালি, গোসাবা, বাসন্তি, সাগর, কাকদ্বীপের পাশাপাশি উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ ও হিঙ্গলগঞ্জে কৃষকের জমিতে সরকারিভাবে ডাল চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য কৃষিদপ্তরের সঙ্গে এ কাজে এগিয়ে এসেছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
এ রাজ্যে আমন ধান পরবর্তী ১৭ লক্ষ হেক্টর জমি পতিত থাকে। এই জমিকে কাজে লাগিয়ে ডালের উৎপাদন বাড়ানোর কাজ চলছে। গত কয়েক বছর ধরে চলা এই উদ্যোগে খানিকটা সুফলও মিলেছে। বর্তমানে এরাজ্যে ৩ লক্ষ ৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে ডাল চাষ হয়। তাছাড়া ২০১০ সালে রাজ্যে যেখানে ডালের মোট উৎপাদন ছিল ১ লক্ষ ৫০ হাজার টন, সেখানে এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার টন। কিন্তু, প্রয়োজনের তুলনায় এটা খুবই কম। এ রাজ্যে বছরে ১৫-১৮ লক্ষ টন ডালের চাহিদা রয়েছে। ফলে যে পরিমাণ ডাল উৎপাদন হয়, তা চাহিদার মাত্র ২০-২৫% মেটায়। বাকিটা আমদানি করতে হয় ভিন রাজ্য থেকে। রাজ্যে প্রায় ১ লক্ষ হেক্টর জমিতে মুসুর ডাল চাষ হয়, ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে কলাই চাষ হয় ও ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে খেসারির চাষ হয়। সুন্দরবনে কম-বেশি আমন ধানের চাষ হয়। কিন্তু, আমন তুলে নেওয়ার পর সেই জমি ফাঁকা পড়ে থাকে। অন্য কোনও ফসল চাষ হয় না। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পয়রা ফসল হিসেবে চাষের জন্য আমন ধান কাটার ২০ দিন আগে ডালের বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে। জমিতে ছড়ানোর আগে ৬-৮ ঘণ্টা ডালের বীজ ভিজিয়ে রাখা দরকার। এতে অঙ্কুরোদগম ভালো হয়। ধান কাটার সময় মাটি থেকে ২৫ সেন্টিমিটার গোড়া রেখে কাটতে হয়। ডাল বোনার পর ৩০-৩৫ দিন ও ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ফুল আসার আগে দু’বার ২ শতাংশ (প্রতি লিটার জলে ২০ গ্রাম) জলে দ্রবণীয় ইউরিয়া পাতায় স্প্রে করলে ফলন ভালো হয়। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইন দ্য ড্রাই এরিয়া (ইকার্ডা) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট (ইফাড)-এর সঙ্গে ডাল চাষের প্রসারে যৌথভাবে কাজ করছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ডাল চাষের এলাকা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কীভাবে ডালের মূল্য যুক্ত করা যায়, তারও কাজ চলছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
রুনা নাথ।
কৃষি জাগরণ।
Share your comments