Curry leaves farming: জেনে নিন কারিপাতার গুনাগুন ও চাষাবাদের নিয়ম

কারিপাতাগাছ এ দেশে পরিচিত গাছ হলেও সুগন্ধি গাছ হিসেবে এর ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। কারিপাতা এদেশে কোথাও কোথাও নিমভুতগাছ হিসেবে পরিচিত। বনে জঙ্গলে জন্মায় আপনা আপনি হয়। কেউ কখনো এ গাছ লাগায় না। এগাছ অবশ্য কেউ কেউ কবিরাজী কাজে ব্যবহার করে থাকেন। তবে এর সুগন্ধি পাতা ব্যবহার করে এদেশে কেউ কখনো রান্না করেন না।

রায়না ঘোষ
রায়না ঘোষ
Curry leaves farming
Currey leaves (image credit- Google)

কারিপাতাগাছ এ দেশে পরিচিত গাছ হলেও সুগন্ধি গাছ হিসেবে এর ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। কারিপাতা এদেশে কোথাও কোথাও নিমভুতগাছ হিসেবে পরিচিত। বনে জঙ্গলে জন্মায় আপনা আপনি হয়। কেউ কখনো এ গাছ লাগায় না। এগাছ অবশ্য কেউ কেউ কবিরাজী কাজে ব্যবহার করে থাকেন। তবে এর সুগন্ধি পাতা ব্যবহার করে এদেশে কেউ কখনো রান্না করেন না। কিন্তু ভারতের তামিলনাড়ুতে গিয়ে কারিপাতা ছাড়া রান্না কেউ না খেয়ে ফিরে এসেছে এমনটি শোনা যায়নি।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দক্ষিণ ভারতে রান্নাকে সুগন্ধিযুক্ত করতে কারিপাতার ব্যবহার চলে আসছে। খাদ্যকে শুধু সুস্বাদু করাই নয়, এ পাতার কিছু ভেষজগুণও আছে। তাই আমাদের বুনো এ গাছটির পাতা তেজপাতার মতো মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর এ গাছ চাষে আলাদা কোনো জমি দরকার নেই। বাড়ির আশপাশে যেসব বাগানের ভেতর ছায়া ছায়া ফাঁকা জায়গা পড়ে রয়েছে সেসব পতিত জায়গা ব্যবহার করে কারিপাতা উৎপাদন করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

গাছের পরিচয়:

মূলত কারি বা ঝোল তরকারি রান্নার জন্য এ গাছের পাতা ব্যবহার করা হয় বলে এর ইংরেজি নাম কারি লিফ, বাংলায় কারি পাতা। বাংলায় স্খানীয় কিছু নামও আছে- নিমভুত, বারসাঙ্গা ইত্যাদি। তামিল ভাষায় বলে কারিভেম্পু, তেলেগুতে কারেপাকু। হিন্দিতে বলে কাঠনিম, মিঠানিম, গোরানিম, গাধেলা, কারি পাত্তা ইত্যাদি। উদ্ভিদতাত্ত্বিক পরিবার রুটেসী। অর্থাৎ কারি পাতা ও কামিনী ফুলের গাছ একই গোত্রের। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উঁচুতেও কারিপাতাগাছ জন্মাতে পারে। গাছ মাঝারি উচ্চতার, উচ্চতায় ৫-৬ মিটার হয়। পাতা দেখতে অনেকটা নিম পাতার মতো। পাতায় সালফারঘটিত এক ধরনের উদ্বায়ী তেল থাকার কারণে সুন্দর ঝাঁঝাল গন্ধ আসে।

কাঁচা পাতা ডললে পাতা থেকে গোলমরিচ, লবঙ্গ, মরিচ, আদা ইত্যাদি মসলার মিশ্রিত এক প্রকার ঘ্রাণ বের হয়। এই সুগন্ধির জন্যই কারিপাতা রান্নায় মসলাপাতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাতা পক্ষল ও যৌগিক, নিমপাতার মতোই। তবে পাতাগুলো ডালের মাথা থেকে চারদিকে সূর্যের রশ্মির মতো ছড়িয়ে পড়ে। তাই পত্রবিন্যাস সুন্দর দেখায়। প্রতিটি পাতায় অনুপত্রকের সংখ্যা ৯-১৫টি। অনুপত্রকের কিনারা খাঁজকাটা, অগ্রভাগ সূচালো। ডালের মাথায় পুষ্পমঞ্জরীতে সাদা রঙের ফুল ফোটে, ফুলেও সুগন্ধ আছে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ফুল ফোটে। ফুল থেকে নিমের মতো ফল হয়। ফল ডিম্বাকার থেকে গোলাকার, কাঁচা ফলের রঙ সবুজ। পরিপক্ব হওয়ার সাথে সাথে লালচে থেকে কালো হয়ে যায়। বীজ থেকে সহজে চারা হয়।

আরও পড়ুন -Successful Farming: ব্ল্যাক রাইস চাষে ব্যাপক সাফল্য বিদেশফেরত যুবকের

ব্যবহার(Uses):            

সুগন্ধি মসলা হিসেবে সবুজ পাতা রান্নায় ব্যবহার করা যায়। পাতায় ৬.১% প্রোটিন, ১.০% তেল, ১৬% শ্বেতসার, ৬.৪% আঁশ ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি (৪ মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম পাতা) আছে। কাঁচা কারিপাতা কয়েকটা জলতে ধুয়ে রান্নার সময় তার ভেতরে ছিঁড়ে দিলে রান্নায় সুঘ্রাণ ও ঝাঁঝ আসে। গরু ও খাসির গোশত, মিশ্র সবজি, ডাল ইত্যাদি কারিপাতা দিয়ে রান্না করা যায়। কারিপাতা শুকনো করে গুঁড়ো হিসেবে কারি পাউডার তৈরি করা যায়। বোতলে ভরে রেখে রান্নার সময় তা ব্যবহার করা যায়। তবে কাঁচা পাতায় ঘ্রাণ বেশি।

কারিপাতা, গাছ, শিকড় সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। গাছের শিকড় অর্শ রোগে উপকারী। আমাশয় ও ডায়রিয়া সারাতেও কারিপাতা ওস্তাদ। কয়েকটা সবুজ পাতা চিবিয়ে খেলে এটা সেরে যায়। পাতা সেঁকে ও তা থেকে ক্বাথ তৈরি করে খেলে বমিভাব দূর হয়। রেচনতন্ত্রের ব্যথা দূর করতে পাতার রস সেবন করতে পরামর্শ দেয়া হয়। শরীরের কোথাও কোনো বিষাক্ত পোকা কামড়ালে কাঁচা কারিপাতা ডলে সেখানে লাগালে দ্রুত উপশম হয়। যকৃতের কঠিন ব্যথা সারাতে রোগীদের কারিপাতা গাছের শিকড়ের রস খাওয়ানো হয়। শুধু পাতা নয়, এর ফলও খাওয়া যায়। বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তার গন্ধ অনেকটা নারকেল তেলের মতো আর স্বাদ মরিচের মতো ঝাঁঝালো। তেল জিহ্বায় স্পর্শ করলে ঠাণ্ডা মনে হয়।

চাষাবাদ(Farming process):

বীজ থেকে প্রথমে চারা তৈরি করে নিতে হবে। বর্ষার শুরুতে ২-৩ মিটার পর পর জমিতে চারা লাগাতে হবে। চারা লাগানোর জন্য সবদিকে আধা মিটার আন্দাজে গর্ত তৈরি করে গর্তের মাটির সাথে এক ঝুড়ি গোবর সার মিশিয়ে সপ্তাহ দুয়েক রেখে দিতে হবে। জুন-জুলাই মাসে চারা লাগাতে হবে। প্রতি বছর জুলাই মাসে একবার গাছপ্রতি ১০০-২০০ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হবে। খরার সময় সেচ দিলে উপকার হয়। গাছের বয়স ১৫ মাস হলেই গাছ থেকে পাতা তোলা শুর করা যায়। কচি পাতা না তুলে গোড়ার দিক থেকে বয়স্ক পাতা তুলে আঁটি বেঁধে বাজারে বেচতে পাঠাতে হবে। ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য একটা দুটো গাছই যথেষ্ট। বাণিজ্যিকভাবে চাষের আগে এর বাজার সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে। এ গাছে সহজে কোনো রোগ পোকা আক্রমণ করে না।

আরও পড়ুন -Muskmelon cultivation guide: জেনে নিন সহজ উপায়ে বাঙ্গি বা খরবুজা চাষের পদ্ধতি

Published On: 25 September 2021, 02:02 PM English Summary: Curry leaves farming: Know the quality of curry leaves and the rules of cultivation

Like this article?

Hey! I am রায়না ঘোষ . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters