আঞ্জির। এই ফলটির নামের সঙ্গে সবাই হয়তো সবাই পরিচিত নন। মরুপ্রদেশে এই ফলের চাষ খুব ভালো পরিমাণে হলেও, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গেও এই বিশেষ প্রজাতির ফলের চাষাবাদ বেশ দ্রুত গতিতে হচ্ছে। এখানকার কৃষকরা এই ডুমুর জাতীয় ফলের চাষ নিয়ে বেশ আশাবাদী। বাংলাদেশে এই ফল ত্বীন ফল নামেও পরিচিত। আঞ্জিরে চাষ বাংলাদেশের জলবায়ুতে ভালো হয় বলে, এই ফলের চাষাবাদ বাংলাদেশে যথেষ্ট প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
আঞ্জির ফলের স্বাস্থ্যসম্মত দিক: (Healthy side of Anjeer Fruit)
আঞ্জির খেতেও যেমন ভালো তেমনই এই ফল পুষ্টিগুণেও ভরপুর। আঞ্জির ফলটি ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২ গুণসমৃদ্ধ। বিভিন্ন ভিটামিন ছাড়াও এই ফল ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজে ভরপুর। ক্যালসিয়ামের অভাব ঘটাতে এই ফাহল এক জরুরি ভূমিকা নেয়। আঞ্জিরের ওষধি গুণাগুণ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা ছাড়াও অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। লিভার ভালো রাখার পাশাপাশি আঞ্জির ফল নিয়মিত খেলে হার্টের রোগও দূর হয়। আঞ্জির ফল ক্যান্সার নিরাময় করতেও অব্যর্থ এক দাওয়াই। মৃগীরোগ, প্যারালাইসিসের রোগীদের নিয়মিত আঞ্জির খোয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
আঞ্জির গাছের ফলন পদ্ধতি ও পরিচয়: (Identification of Anjeer Tree)
আঞ্জির গাছ খুব দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে। তবে এই গাছের চারিদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করার মতন। এই কারণে আঞ্জির গাছের দৈর্ঘ্য বেশি হয় না, বরং প্রস্থে এদের বাড়বাড়ন্ত থাকে। আঞ্জির গাছের কান্ড খুবই নমনীয়। সাধারণত আঞ্জির গাছের দৈর্ঘ্য ৭ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই গাছে কমকরে ৭০ থেকে ৯০ টি ফল ধরে। জমিতে চাষ করা ছাড়াও টবেও অনেকে আঞ্জির ফলের চাষ করেন। আঞ্জির গাছ প্রায় ৩৪-৩৫ বছর পর্যন্ত নিজের ফলন ধরে রাখে। শতবর্ষ পর্যন্ত বাঁচতে পারা এই গাছে তিন মাসের ভেতরেই ফল ফলে।
চাষাবাদ পদ্ধতি: (Cultivation procedure)
আঞ্জির ফলের গাছ চাষে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন পড়ে না। জৈব সারের ব্যবহারে জমিতে ও টবে এই গাছ লাগিয়ে আঞ্জির ফলানো খুবই সহজ বিষয়। ছাদের টবে খুব সহজ কৌশলে আঞ্জির ফলানো যায় বলে, আজকাল অনেক বাড়ির মালিকই আঞ্জির টবে ফলাচ্ছেন। মজার ব্যাপার হল আঞ্জির গাছে অন্যান্য ফল গাছের তুলনায় অনেক তাড়াতাড়ি ফলন ধরে। আঞ্জিরের চারা লাগালে, মাত্র ৪ থেকে ৫ মাস পরেই গাছে ফল ফলা আরম্ভ হয়ে যায়। নিয়ম হচ্ছে গাছ লাগানোর ২ থেকে ৩ মাস বাদেই এর গোড়ায় অল্প অল্প করে সর্ষের খোল পচা সার হিসাবে দিতে হবে। এর ফলে দ্রুত ফলন ঘটবে গাছে। টবের মাটি একবছর পর বদলানো উচিত। শীতকাল পড়ার আগে অথবা বর্ষাকালের শেষের পর্যায়ে টবের মাটি পরিবর্তন করা উচিত। আঞ্জির গাছ যদি টবে পোঁতা হয় তাহলে মাঝেমাঝে টবের মাটি খুঁচিয়ে দেওয়া উচিত।
পোকামাকড় ও রোগবালাই হঠাতে গেলে: (How to prevent insects and disease)
নেমাটড (Nematodes) পোকা আঞ্জির গাছের ব্যাপক ক্ষতি করে। Arthropod পোকাও আঞ্জির গাছের পক্ষে শুভ নয়। ফল ভেঙ্গে যাওয়ার মতন রোগ (fruit splitting) গরমকালে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে হতে পারে। Alternaria, Aspergillus, Botrytis, এবং Penicillium fungi-এর মতন রোগ থেকে গাছকে বাঁচাতে গেলে ফাংগিসাইড প্রয়োগ করা উচিত।
আরও পড়ুন: Quinoa cultivation: কিনোয়া চাষে অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ বদলাচ্ছে চাষিভাইদের
আঞ্জির চাষে আজকাল অনেক চাষি ভাইই লাভের মুখ দেখছেন। এই চাষের পদ্ধতি সহজ হওয়ায়, ব্যয়ের পরিমাণও কম। বর্তমানে মানুষের কাছে আঞ্জির ওষধি ফল হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাজারেও এই ফলের চাহিদা তুঙ্গে। তাই যারা আঞ্জির চাষ করবেন কি না করবেন, তা বুঝে উঠে পারছেন না, তাঁদের জন্য পরামর্শ হল, নির্ভয়ে আঞ্জির চাষ করুন এবং অতি সহজেই লাভবান হয়ে উঠুন।
আরও পড়ুন: বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেওয়া পৃথিবীর প্রাচীনতম সার!
Share your comments